২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৪

প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলো কাগজে কলমে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিন্তু বাস্তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে আবাসিক হল প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্রীড়নক। এ অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগ যুগ ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। ক্রমাগত দলীয়করণ, শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসল পরিচয় হারিয়ে এখন দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ।

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে এসব বিষয় আবার আলোচিত হচ্ছে দেশজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয়করণের ফলে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হয়েও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন বলতে যেন আর কিছু নেই। প্রশাসন রয়েছে নামে মাত্র। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলছে ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ আর দখলদার ছাত্র সংগঠনের কথায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়ার ঘটনায় এ অভিযোগ উঠেছে নতুন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের সবচেয়ে বেশি অকার্যকারিতা আর ব্যর্থতার নজির স্থাপিত হয়েছে আবাসিক হলগুলোতে। যুগ যুগ ধরে আবাসিক হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছে মূলত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন। হল প্রশাসন রয়েছে নামে মাত্র, যদিও তারা এ জন্য ভোগ করে চলছেন বিভিন্ন ধরনের সুবিধা।

আবাসিক হল প্রশাসনের ব্যর্থতা আর অকার্যকারিতায় মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন অনেক সময়, যার কোনো খবর রাখে না কর্তৃপক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে সব জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন তারা। এলাকার সবচেয়ে মেধাবী, সবার প্রিয় অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শারীরিক আর মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কেউবা মায়ের বুকে ফিরে যান লাশ হয়ে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অনেক শিক্ষার্থীর প্রতি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন পরিস্থিতিকে ক্রীতদাসের জীবনের সাথে তুলনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনেক আবাসিক শিক্ষার্থী।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশের অনেক বড় বড় সরকারি কলেজের প্রশাসন ও আবাসিক হলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এমনকি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজের আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেত্রীদের কর্তৃক অনেক সাধারণ ছাত্রী, জুনিয়র কর্মীদের সংগঠন ও দলের বিভিন্ন নেতার গোপন বাসা, ঠিকানায় পাঠানোর খবর ২০১০ সালে ফাঁস হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের উদ্দেশ্য হলো এগুলো যাতে স্বাধীন সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে, মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র হতে পারে। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর যে আইন করা হয়েছে, তা দিয়ে সরকার ইচ্ছা করলে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতিসহ আরো নানাভাবে এখানে দলীয় প্রভাব বিস্তারের ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগেও ছিল। দলীয় রাজনীতির সাথে তাদের হয়তো আদর্শগত মিল ছিল। কিন্তু এখনকার মতো বিকৃত ছিল না। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্বকীয়তা হারিয়ে দলীয় রাজনীতির কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতি না হলে এ অসুস্থ পরিবেশ সবসময় থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রশাসনের সহায়তায় কোনো ছাত্র হলে আসন পেয়েছে বা উঠতে পেরেছে এ রকম ঘটনার খবর তাদের জানা নেই। তবে ছাত্রীদের হলে কেউ কেউ আসন পান প্রশাসনের সহায়তায় বলে তারা শুনেছেন। ছাত্রদের হলে আসন বিতরণের কাজটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে দখলদার ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকার বাইরে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে আসন পেতে হলে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে টাকা দিতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে হলে আসন পাওয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মিছিলে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। ছাত্র সংগঠনের কথার বাইরে গেলেই হলের ছাত্রদের ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। পিটিয়ে আহত করা, হল থেকে বের করে দেয়া, আগুন দিয়ে রুমের জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেয়াসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয় হলের অনেক শিক্ষার্থীকে। ব্যর্থ হল প্রশাসন আর নোংরা ছাত্র রাজনীতির কারণে দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে দেশের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও সদা ভীতি, আতঙ্ক নিয়ে হলের জীবন পার করেন। অনেকের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ হল প্রশাসনের এ ব্যর্থতার পেছনে অন্যতম কারণ শিক্ষক রাজনীতি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে হাউজ টিউটর নিয়োগ পর্যন্ত চূড়ান্ত দলীয়করণ। দলীয়করণের ক্ষেত্রেও এখন বিবেচনা করা হয় কে সবচেয়ে বেশি নিঃশর্ত আনুগত্য পেশ করতে পারবে।

ছাত্র সংগঠন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল দখল পাল্টা দখল, খুনোখুনিকে কেন্দ্র করে মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর অস্ত্রবাজির কারণে মিনি ক্যান্টনমেন্টসহ আরো ন্যক্কারজনক বিভিন্ন উপাধি পেয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসিক হলে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব, হল প্রশাসনের নির্লিপ্ততা আর ব্যর্থতার কারণে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। থাকে না লেখাপড়ার মতো ভালো পরিবেশ। আর এখন শুধু ছাত্রছাত্রীরা নন, কোথাও কোথাও শিক্ষকেরাও লিপ্ত হচ্ছেন নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে।
আবাসিক হলে প্রশাসনের অকার্যকারিতার পরিচয় সম্প্রতি তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর সাবিতা রেজওয়ানা। কোটা সংস্কার আন্দোলন, হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা কর্তৃক ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের সূত্র ধরে তার গলায় জুতার মালা পরানো পরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপটে গত ১৯ এপ্রিল রাতে প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা হলের ছাত্রীদের ডেকে হুমকি দেন। এ সময় তিনি বলেন, এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না।

প্রভোস্টের কথায় এটি পরিষ্কার যে, এত দিন পর্যন্ত ছাত্রীদের হলে আসন দেয়ার কাজটি তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন করত না।
বিভিন্ন আবাসিক হলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলার সময় অনেকেই জানিয়েছেন বিভিন্ন কারণে তারা হলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মানসিক নির্যাতন তো রয়েছেই। শারীরিক নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কেউ কেউ বলেছেনÑ হায়, তাদের মা-বাবা যদি জানতেন যে, তাদের কত প্রিয় আর ভালোবাসার সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নামক সন্ত্রাসীদের হাতে মার খেতে হয়েছে। আর ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে আবাসিক হলে মারামারি, রক্তারক্তি, গোলাগুলি এমনকি লাশ হওয়ার দৃশ্যও অনেকের জীবনে ভয়ঙ্কর স্মৃতি বহন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের ব্যর্থতায় প্রায়ই কোনো কোনো শিক্ষার্থীর জীবন ঝরে যায়। প্রশাসনের ব্যর্থতা, নোংরা ছাত্র রাজনীতি, দলাদলি আর হানাহানিতে যতগুলো সাধারণ ছাত্র হত্যার মাধ্যমে কলঙ্কিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তার মধ্যে স্মরণীয় হত্যাকাণ্ড হলো আবু বকর হত্যা।
সিট দখল নিয়ে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। মধ্য রাতে এ সংঘর্ষ চলাকালে নিজ রুমে থাকাবস্থায় আহত হয়ে মারা যান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর। আবু বকর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তৃতীয় বর্ষে তিনি জিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ পেয়ে রেকর্ড গড়েন। ওই বিভাগে তার আগে এত ভালো রেজাল্ট নিকটাতীতে আর কেউ করতে পারেননি। মৃত্যুর ৪২ দিন পর আবু বকরের ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। তাতে যুগ্মভাবে প্রথম হন তিনি।

আবু বকর ছিলেন দিনমজুরের ছেলে। তার মা মুরগি পালন করে, ডিম বিক্রি করে ছেলের পড়ার খরচ পাঠাতেন। ছেলের পড়ার খরচে যেন টান না পড়ে সে জন্য আবু বকরের মা তিন বছর পর্যন্ত মাথায় তেল ব্যবহার করেননি।
নিরীহ আর মেধাবী আবু বকর কোনো ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তার পরও খুন হতে হলো তাকে। গত বছর মে মাসে আবু বকর হত্যা মামলার রায় হয়। তাতে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মী বেকসুর খালাস পায়। আবু বকর হত্যার জন্য কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।
কখনো কখনো ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে থাকা বিভিন্ন আবাসিক হলের বিভিন্ন রুম টর্চার সেলে পরিণত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য।

প্রশাসনের ব্যর্থতায় আবাসিক হলে গড়ে উঠেছে হলে গেস্টরুম কালচার। ছোট্ট একটি রুমে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীর মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় এখানে। শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। আবাসিক হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কখনো কখনো তাদের জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা লাঠি নিয়ে হাজির হয় গেস্টরুমে। পরীক্ষার কথা জানালে তারা বলে, রাতে এসে পড়বি। এখন কর্মসূচিতে যেতে হবে। আর মিছিলে যাওয়ার আগে সব রুমে গিয়ে বলে আসা হয় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নয় মোটেই। তাদের কী কাজ তাও জানে না ছাত্ররা। মাঝে মধ্যে অফিসে এসে প্রশাসনিক কিছু কাগজে স্বাক্ষর করা ছাড়া তারা কেউ ছাত্রদের খোঁজখবর নিয়েছেন এমন ঘটনা কেউ স্মরণ করতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা হাইস্কুলে থাকতে অনেক স্বাধীন ছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবাসিক হলে একধরনের পরাধীন জীবনযাপন করছি। আমরা যেন বন্দিশিবিরে রয়েছি।
গত তিন মাসে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে সংঘটিত ছয়টি ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাত শিার্থী। এদের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এহসান রফিক ও স্যার এ এফ রহমান হলের হাসান গাজী সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ক্যালকুলেটর ধার দিয়ে ফেরত চাইতে গেলে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়ে চোখ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিার্থী এহসান রফিক। তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলেও চোখের সমস্যা নিয়ে সঠিক কিছু জানা যাচ্ছে না। গত ২৪ মার্চ রাতে হলের ‘কথিত বড়ভাই’ এবং ছাত্রলীগ নেতাকে সালাম না দেয়ায় অন্যান্য শিার্থীর উপস্থিতিতে হাসান গাজী নামে এক শিার্থীর নিম্নাঙ্গে লাথি মারার ঘটনা ঘটে। এতে ওই শিার্থীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার উপক্রম হয়। পরে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেয়া হলে জানা যায় তার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রভোস্টের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ছাত্র সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, এটার একটা বাস্তবতা তো আছেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি সব কিছুকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমরা একটু পিছিয়ে আছি।
নিজের হলের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব হবে। ছাত্র নেতাদেরও বলে দিয়েছি। হলের প্রশাসনিক অবস্থা যদি স্বচ্ছ করতে পারি তবে এ ব্যাধিটা কমবে। এ অবস্থা থাকবে না।
গেস্টরুম নিয়ে যেটা শুনি সেটা তো একটা বাস্তব অবস্থা। তবে এটা কি কোনো কালচার হলো? না এর দ্বারা রাজনীতি শিখছে, না এটা তেমন কোনো কাজে আসছে। আওয়ামী লীগের সময় এখন ছাত্রলীগ গেস্টরুম করাচ্ছে। কোনো কারণে যদি পটপরিবর্তন হয় তবে এদের দেখা যাবে বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিচ্ছে।
হলগুলোতে সরকার দলীয় সংগঠনের দৌরাত্ম্য রোধ সম্ভব না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে একটা বলয় নিয়ে থাকার কারণেই এ ধরনের মনোভাব বদলানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল প্রশাসন নিয়ে অভিযোগ বিষয়ে জানার জন্য ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: আক্তারুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/313430