২৪ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৭:১০

গ্যাসের দাম ধাপে ধাপে বাড়বে

শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদেশ থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাহাজ বঙ্গোপসাগরে পৌঁছেছে। সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দাম বাড়ানো হবে ধাপে ধাপে। এ গ্যাস যারা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করবে, তাদের প্রণোদনা দেবে সরকার। সোমবার রাজধানীর নিজস্ব কার্যালয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এসব কথা বলেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাম সহনীয় রাখতে সরকারকে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেন, গ্যাসের লাইন দিতে তিতাসের কর্মকর্তারা ঘুষ ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। তিতাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে বলে জানালেন উপদেষ্টা।

বিটিএমএ’র সভাপতি তপন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ এবং ব্যবসায়ী নেতা একে আজাদসহ ব্যবসায়ী নেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাস সংযোগ নিয়ে দুর্নীতি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তারা সংযোগ নিয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। এ ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, তিতাসের এই অভিযোগের ব্যাপারে সাঁড়াশি অভিযান (ক্র্যাক ডাউন) শুরু হবে। তাদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বিকল্প লাইনের ব্যবস্থা করা হবে। এরপরও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এলএনজি আমদানির পর গ্যাসের দাম কী হবে তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। দাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির জন্য ওইসব দেশে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে। এটি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের। কারণ এর আগে এত বড় বিনিয়োগ হয়নি। তবে গ্যাসের দাম একবারে বাড়বে না। যাতে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য সহনীয় হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হবে। ব্যবসায়ীরা বর্তমানে প্রতি কিউবিক মিটার গ্যাস ৯ টাকা করে কিনছেন। এখান থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ১২ টাকা হলেও লাভ হবে। কারণ গ্যাসের চাপ বেশি থাকবে। সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন এবং উৎপাদন ব্যাহত হবে না। ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হবে। তিনি বলেন, এতটুকু নিশ্চয়তা দেয়া যায়, সরকার লাভ করবে না। সরকার বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদেরও সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, যেসব শিল্প উদ্যোক্তা সঠিকভাবে গ্যাস ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য প্রণোদনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যত বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবে, তত বেশি প্রণোদনা থাকবে। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, যেসব ব্যবসায়ী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছেন, তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে ৫০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে সেখানে গ্যাস দেবে সরকার। এই গ্যাসের দাম একটু বেশি হলেও উদ্যোক্তাদের জন্য তা লাভজনক। তিনি বলেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভর্তুকির কথা বলছেন। কিন্তু শব্দটির কারণে বিশ্বের অনেক সংস্থার কাছে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। এখানে ভর্তুকি না বলে আর্থিক প্রণোদনা বলা উচিত। তিনি আরও বলেন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সাহসী হতে হবে। কারণ যারা সাহসী ও উদ্ভাবক, পৃথিবী তাদের জন্য।

তপন চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের অবদান বিশাল। কিন্তু এ খাতে গ্যাসের সংকট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বিষয়টি ইতিবাচক। তবে দাম নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, গ্যাসের দাম ২০৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রিডে সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই এই গ্যাসের দাম ২০৬ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতে সরবরাহের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ১৬ থেকে বেড়ে ১০ টাকায় উন্নীত হবে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এছাড়া শিল্পের ব্রয়লারে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ টাকা পড়বে। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের ক্ষেত্রে দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি ইউনিটের দাম ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ থেকে ১৬ টাকায় উন্নীত হবে। এই হারে দাম বাড়ানোর খবরে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/41535