২৪ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৭:০৬

পদে বহাল থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির নেই

সুশাসন

ইকতেদার আহমেদ
রাষ্ট্রপতি ও সংসদীয় পদ্ধতি উভয় ধরনের সরকারব্যবস্থায় শাসিত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় নির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রযুক্ত হয়ে থাকে, অপর দিকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রযুক্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন- পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অধীনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পদে বহাল থাকাকালেই ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পদে বহাল থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার অধীনে জাতীয় পার্টি দলীয় রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদে বহাল থাকার সময়েই যথাক্রমে ১৯৮৬ সালের ৭ মে এবং ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম সংসদ নির্বাচন কর্মরত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকার রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের অনুরূপ ছিল। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অধীনে বিএনপি দলীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বপদে বহাল থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তদানীন্তন সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এ সরকার সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অনুরূপ হলেও সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতির অধীনে ন্যস্ত ছিল। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তৎসময়ে সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়কার সরকারব্যবস্থা সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সরকারব্যবস্থার অনুরূপ ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এ সরকার সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অনুরূপ ছিল, যদিও নেপথ্য থেকে সরকার পরিচালনাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সে সময়কার সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের আকাক্সক্ষায় কার্যকর হতো। দশম সংসদ নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অধীনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদে বহাল থাকাবস্থায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনটি আগেকার সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যত্যয়ে সংসদ ভেঙে না দিয়েই অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দশম এ ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় এবং এ ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এবং অপর পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করেছিল। এ নির্বাচনগুলোর প্রথম ও দশম এ দু’টিতে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ এ দু’টিতে বিএনপি এবং তৃতীয় ও চতুর্থ এ দু’টিতে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে। এ ছয়টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল, চতুর্থ সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দল বর্জন করে, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী বর্জন করে এবং সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বর্জন করেছে।
কর্মরত প্রধান বিচারপতির অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সরকারগুলোর পূর্ববর্তী যে দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন ছিল, উক্ত সরকারগুলো পরাজিত হয়। উল্লেখ্য, পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী সময়ে জাতীয় পার্টি, সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী বিএনপি, অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ এবং নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী বিএনপি ক্ষমতাসীন ছিল।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রবর্তনকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে বিধান ছিল তাতে বলা ছিলÑ মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিধান কার্যকর থাকাকালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ এ পাঁচটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ পাঁচটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ায় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবশ্যকতা দেখা দেয়নি।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গঠিত ষষ্ঠ সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান কার্যকর করা হয়েছিল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান কার্যকর করার পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে যে বিধান প্রবর্তন করা হয় তাতে বলা হয়Ñ মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিধানটি প্রবর্তনের পরবর্তীকালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন সংসদ ভেঙে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে এ বিধানটি কার্যকর থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচন সংবিধানের বিধানাবলি অনুসরণে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং সংসদ কর্তৃক এ নির্বাচন বিষয়ে যে সাংবিধানিক অনিয়ম ঘটেছে তাকে বৈধতা দেয়ার কোনো প্রয়াস অদ্যাবধি নেয়া হয়নি, যদিও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতাবিষয়ক মামলার আপিলের রায়ে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার অবতারণায় এ সরকারটির কার্যকালকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। সাংবিধানিক বৈধতার অনুপস্থিতিতে এরূপ বৈধতা আইনসিদ্ধ কি না এ প্রশ্নটির অবসান হওয়া জরুরি।

সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি আগে ভেঙে না দিলে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান-পরবর্তী প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের প্রথম বৈঠক ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সংসদটি বহাল থাকাকালেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংসদ বহাল রেখে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার কারণে নবম সংসদ ভেঙে যায়।

সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথগ্রহণ করাকালে অপরাপর বিষয়ের পাশাপাশি বলতে হয়Ñ তারা সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ৫০ জন মহিলা সদস্য- সর্বমোট ৩৫০ সদস্য সমন্বয়ে সংসদ গঠিত হয়।
দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠাকালে দেখা যায় একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরূপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সংবিধানের যে বিধান রয়েছে, তা প্রতিপালিত হয়েছে কি না এর অনুধাবন তাৎপর্যবহ।

দশম সংসদ নির্বাচনের মতো ষষ্ঠ, তৃতীয় ও চতুর্থ এ তিনটি নির্বাচন অনিয়ম, কারচুপি ও কলুষতায় ভরপুর ছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত শেষোক্ত তিনটি সংসদের মধ্যে সর্বশেষটি সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন এবং অবশিষ্ট দু’টি মাঝপথে ভেঙে দেয়া হয়। দশম সংসদ নির্বাচন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি ও দলের নেতাদের যৌথ সভায় সভানেত্রীর সূচনা বক্তব্যে বলেছিলেনÑ এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙে আবার নির্বাচন দেয়া হবে; কিন্তু নির্বাচন- পরবর্তীকালে দেখা গেল সমঝোতার যেমন উদ্যোগ নেই, তেমনি নতুন নির্বাচন দেয়ারও কোনো তাগিদ নেই। এরূপ উদ্যোগ ও তাগিদের অনুপস্থিতিতে দশম সংসদের মেয়াদ আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ এ সময়কালের মধ্যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবিধানে বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনবিষয়ক যে বিধানাবলি রয়েছে তা অনুসরণ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন দল এখন পর্যন্ত সংবিধানের বিধানাবলির আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড়, অপর দিকে প্রকৃত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনীহা দেখাচ্ছে। দেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বিষয়ে এরূপ বিপরীতমুখী অবস্থান বজায় থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর আগামী সংসদ নির্বাচনটি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন হলে তা বর্তমান ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেবে।

দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধানমন্ত্রী দলীয় নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি ও দলের নেতাদের যৌথ সভায় সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙে যে আগাম নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের এখনো সুযোগ রয়েছে। দেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।
আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাশের রাষ্ট্র ভারতের হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের প্রধানের পক্ষ থেকেই অভিযোগ রয়েছে। এরূপ অভিযোগ যে, অমূলক নয়, তা দেশবাসী অনুধাবনে সক্ষম। ভারত নিজেকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তার পাশের অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যান্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশটির প্রভাব ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত দশম সংসদ নির্বাচনের মতো প্রভাব খাটাতে চাইলে তা আমাদের এতদঞ্চলের প্রধান পরাশক্তি চীন ও বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়।

আমাদের স্বাধীনতা-পরবর্তী দীর্ঘ যাত্রাপথে পদে বহাল থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যর্থতা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গ্লানিময়। পদে বহাল থেকেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হলে নেতাদের মধ্যে যেসব গুণ বিদ্যমান থাকা আবশ্যক, আমাদের নেতারা তার অধিকারী হতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ গ্লানি বিশ্বের বুকে সম্মানজনক জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। আর তাই এ দেশের জনমানুষের কাছে পদে বহাল থেকেই অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচনের আয়োজন প্রত্যাশিত নয় মোটেও।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/312790