সংস্কারের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির পর এমন ভয়ংকর রূপ মালিবাগ-চৌধুরীপাড়া সড়কের। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ।
২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১২:৩৯

যাচ্ছেতাই খোঁড়াখুঁড়িতে নরক ঢাকার রাস্তাঘাট

কয়েক দিন ধরে এলোপাতাড়ি পাইপ ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে নারিন্দা সড়ক। ফলে পুরান ঢাকার সরু এ রাস্তাটি দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি হেঁটেও দুজন একসঙ্গে যেতে পারে না ওই রাস্তায়। উন্নয়নকাজ শুরু হওয়ার আগেই পাইপ রেখে রাস্তাটি অচল করে রাখায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কাজের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নজরে এলেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। কারণ ওই কাজের ঠিকাদার পুরান ঢাকার এক প্রভাবশালী নেতা।
উন্নয়নকাজের অংশ হিসেবে নাজিমুদ্দীন রোডে একদিকে খুঁড়ে আরেক দিকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মাটি। বৃষ্টিতে সেই মাটি কাদা হয়ে ছড়াচ্ছে পুরো রাস্তায়। দীর্ঘ সময় ধরে এমন খোঁড়াখুঁড়িতে নাকাল পুরান ঢাকার ওই রাস্তা ব্যবহারকারী মানুষ। কিন্তু সেখানে ডিএসসিসির কারো কিছু বলার নেই। কারণ কাজটি করছেন নগর ভবনের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এক ঠিকাদার।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থবছরের বেশির ভাগ সময় বসে থেকে বাজেটের অর্থ শেষ করতে তড়িঘড়ি করে সংস্থাগুলো কার্যাদেশ দেয় শেষ মুহূর্তে। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও লাভবান হন। তাঁদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বছরের পর বছর বর্ষায় সড়কে নাকাল হয় নগরবাসী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ওয়াসা এক দফা রাস্তা খোঁড়ে তো সিটি করপোরেশন আরেক দফা খোঁড়ে। ড্রেনেজব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের রয়েছে রশি টানাটানি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজধানীর পরিকল্পনার দায়িত্বে, আবার সিটি করপোরেশনের একটি নগর পরিকল্পনা ইউনিটও রয়েছে, যাদের বিশেষ কোনো কাজ নেই। এভাবে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে রাজধানীর সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে সুব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। সুব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সমন্বয় দরকার।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডে নতুন-পুরনো মিলিয়ে চার হাজার ৩০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও তৈরি পোশাকের পণ্য পরিবহনের জন্য ভারী কার্গোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ভারী যানবাহন এসব সড়ক ব্যবহার করছে। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে বর্তমানে মিরপুর, উত্তরা, আগারগাঁও, কাকরাইল, শ্যামলী, গাবতলী, বিমানবন্দর, বাড্ডা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ীসহ বেশির ভাগ এলাকার রাস্তায় যাতায়াতব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেখা গেছে, ঢাকায় নির্মিত তিনটি ফ্লাইওভারে (মেয়র হানিফ, কুড়িল, জিল্লুর রহমান) পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে ওপরের সড়কের পানি নিচের সড়কে জমে চলাচলের অযোগ্য করে তুলছে।

দুই সিটি করপোরেশনের সড়ক ব্যবহার করেই ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ডিপিডিসি, বিটিসিএল, মোবাইল ফোন অপারেটর কম্পানি, তিতাস গ্যাস, কেবল লাইন অপারেটরসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা সেবা দিচ্ছে রাজধানীবাসীকে। দুই সিটি করপোরেশন প্রতি অর্থবছরের বাজেট থেকে এক-তৃতীয়াংশ অর্থ ব্যয় করে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে। অথচ এসব সড়ক নির্মাণের বা সংস্কারের পর বছর না ঘুরতেই সড়ক আবার ভেঙে পড়ে, গর্ত তৈরি হয়, ফেটে যায় বা দেবে যায় কোথাও কোথাও।
বিমানবন্দর সড়কসহ ভিআইপি চলাচল করেন এমন কিছু সড়ক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্য সড়কগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২৬টি খাল দখল হওয়ায় রাজধানী থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে পারছে না। সড়কগুলোর বেশির ভাগ বিটুমিনে নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে বা জলাবদ্ধতায় সড়কের স্থায়িত্ব নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও জলাবদ্ধতা থেকে সড়ক বাঁচাতে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে প্রকৌশলী-ঠিকাদাররা আন্তরিক হচ্ছেন না।

প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উন্নয়নকাজের শর্ত মানেন না ঠিকাদাররা। শর্ত না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না। কারণ বেশির ভাগ ঠিকাদার কাজে শামিল রেখেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। আবার অনেক ঠিকাদারই নগর ভবনে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।
ডিএসসিসির একাধিক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় প্রতিটি কাজের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত থাকে। আইনি জটিলতা এড়াতে অনেক কাউন্সিলরও অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নেন। এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম হলেও তেমন কিছু বলা যায় না। তবে মেয়রের নজরে এলে তিনি কাউকে ছাড় দেন না। ভোগান্তি কমাতে মেয়রের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ডিএসসিসির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কাউন্সিলর ছাড়াও রাজধানীতে ঠিকাদারি কাজ করেন নগর ভবনের প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা এবং সরকারি দলের প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্য। এ ছাড়া সব সরকারের সময় প্রভাব খাটানো দুই ঠিকাদারের হাতে রয়েছে বড় আকারের কয়েকটি উন্নয়নকাজ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাসাবো, মাদারটেক, শনি আখড়া, শ্যামপুর, সারুলিয়া, ধনিয়া, মাতুয়াইল, হাজারীবাগ, নাজিমুদ্দীন রোড, নারিন্দা, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় ডিএসসিসির রাস্তা উন্নয়নের কাজ চলছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাসের বাসাবো এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাস্তা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ওই রাস্তার কাজ করছেন একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এ চারটি ইউনিয়নে রাস্তা ও নর্দমা নির্মাণের ব্যাপক কাজ চলছে। ধনিয়া ও মাতুয়াইল এলাকায় ১৮ কোটি টাকার কাজ করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। মোহাম্মদবাগ এলাকায় তিনি আরো সাত কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করছেন। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে ওই সব এলাকার রাস্তায় চলা দায়।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, উন্নয়নকাজ করতে গেলে কিছুটা অসুবিধা তো হয়। তবে তা সাময়িক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের মান ও অন্যান্য বিষয়ে কোনো ছাড় দিই না। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী হোক আর যা-ই হোক।’ কামরাঙ্গীর চর এলাকার মাতবর বাজার ও ঝাউচর এলাকায় কাজ করেন একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সেখানেও কাজে দীর্ঘসূত্রতা এবং মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাকের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাজারীবাগ, নাজিমুদ্দীন রোড ও কামরাঙ্গীর চরে উন্নয়নকাজ চলছে। আশা করছি, মানুষের ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে রেখেই কাজ শেষ করতে পারব। কোনো ঠিকাদার কাজের ক্ষেত্রে গাফিলতি করলে আমরা ছাড় দেব না।’
রাজধানীতে সড়কে উন্নয়নকাজ করতে হলে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদনের সময় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে না। সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকৌশলী জানান, ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়ার সময় নিরাপত্তাবলয়, ট্রাফিক ডাইভারশন, প্রকল্পের নাম, সময়, ব্যয়সহ সব সাইনবোর্ডে প্রদর্শন করার কথা। রাতে কাজ করতে হলে অবশ্যই সতর্কতামূলক বাতি দেওয়াসহ সব সেবা সার্ভিস লাইন চালু রেখে কাজ করতে হয়। অনেক ঠিকাদার এসব শর্তের কথা জানেনই না। প্রায় সব ঠিকাদারই সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করেন নির্মাণসামগ্রী রাস্তায় রেখে। খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে সঙ্গে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এরপর গর্ত বালু দিয়ে সম্পূর্ণ ভরাট করে ছয় ফুট পর পর কম্প্রেসার দিতে হয়। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজের সময় মাটি পাশে রেখে তা দিয়েই গর্ত ভরাট করেন। ফলে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সমন্বয়হীন উন্নয়নকাজে ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ডিএনসিসি, ডিএসসিসি, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ডিপিডিসি), পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিটিআরসি, এলজিইডি, ডেসকোসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নগরীতে উন্নয়নকাজ করে। তবে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। তাই একই রাস্তা একাধিকবার খোঁড়া হয়। রাস্তা কাটার জন্য অনুমতি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেই কাজে সমন্বয় হয় না। সমন্বয়নহীন কাটাকাটির ফলে মাটি, ইট, পাথর ও বালু পড়ে চলাচলে বিপত্তি বাধায়। এ ছাড়া বর্ষা এলেই সড়কে শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। এপ্রিল-মে মাসে কাজ শেষ করার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ উন্নয়নকাজ শুরু হয় জুন-জুলাইয়ে। অথচ জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পুরোপুরি বৃষ্টির সময়। ওই সময় ঢাকার রাস্তায় ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি হওয়ার ফলে যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

জলাবদ্ধতা, যথার্থ উপকরণ ব্যবহার না করা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বিভিন্ন সংস্থার বারবার খোঁড়াখুঁড়ি, সাত বছরে গাড়ি বেড়ে দ্বিগুণ হওয়া, রাতে পণ্যবাহী ভারী ট্রাকের অবাধ চলাচলে রাজধানীর নতুন ও পুরনো প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় সড়ক রয়েছে প্রায় চার হাজার ৩০০ কিলোমিটার।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষপর্যায়ে। বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম। আর এই নিকৃষ্টতার বড় কারণ, রাজধানীর বেহাল রাস্তাঘাট। নিউ ইয়র্কের গবেষণা সংস্থা মারসার কনসাল্টিং গ্রুপের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ২২৩টি শহরের মধ্যে বসবাসের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ২০৮তম স্থানে। নিকৃষ্ট শহরের মধ্যে এশিয়ায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।
দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রাজধানীতে যানজটে দিনে নষ্ট হচ্ছে গড়ে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। রাস্তার দুরবস্থা এই যানজটের বড় কারণ। ১২ বছর আগে রাজধানী ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ২১ কিলোমিটার, বর্তমানে হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার। এ অবস্থায় যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের অন্য সব সিটি করপোরেশনের চেয়ে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক দুর্ঘটনা তিন গুণ বেশি। এর অন্যতম কারণ ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। সব পেশার মানুষই ভুগছে যানজটে।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার জাহানের মতে, রাজধানীতে যানজট ও সড়কে নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা পেতে মসৃণ সড়ক প্রয়োজন। এর জন্য গাড়ির চাপও কমাতে হবে। রাজধানীতে কত গাড়ি চলবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরি। না হলে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে নতুন সড়কও নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্থায়িত্ব হারাবে।
রাজধানীতে বিমানবন্দর সড়কসহ হাতে গোনা কয়েকটি সড়ক ছাড়া ছোট-বড় সব সড়ক খানাখন্দ ও দখলের কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সড়কে জমে থাকা পানির সঙ্গে নির্মাণসামগ্রী, ড্রেনের পানি এক হয়ে মানুষ ও গাড়ি চলাচলের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৬টি খালের বিভিন্ন অংশে পানিপ্রবাহ বাধার মুখে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। জলাবদ্ধতা থেকে সড়ক বাঁচাতে বিটুমিনের বদলে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে সরকার গুরুত্ব দিলেও প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের তাতে সায় নেই। বিটুমিনের চেয়ে দ্বিগুণ স্থায়ী হলেও কংক্রিটের সড়ক তেমন নির্মাণ করা হচ্ছে না।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে কংক্রিট ব্যবহার করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় কংক্রিটের সড়ক বেশ কাজে লাগছে। একইভাবে অন্যান্য এলাকায়ও বেশি করে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা উচিত। তাতে রাস্তা ৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।’

২০১৫ সালের এপ্রিলে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত সড়কটি প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ রেখে ওয়াসার পাইপ বসানো হয়েছিল। ওই সময় বন্ধ ছিল রিকশা চলাচলও। রাস্তার নিচে আগে কংক্রিটের ২৪ ফুট চওড়া পাইপ বসানো হয়েছিল, যাতে রাস্তায় পানি জমে না থাকে। তাতে ফল হয়নি। ওই পাইপ সরিয়ে ৩৬ ফুট চওড়া পাইপ বসানো হয়েছে। কাটা হয়েছে ১১৫ ফুট রাস্তা। দুই বছর পর গতকালও এ সড়কে ওয়াসার পাইপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
মধ্য পীরেরবাগ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পাশের নতুন ৬০ ফুট সড়কের স্থানে স্থানে ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভালো সড়কও নষ্ট হয়ে গেছে। শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে তা-ও ভাঙতে শুরু করেছে বিভিন্ন স্থানে।
জানা গেছে, আবারও আরো চওড়া পাইপ বসানোর প্রস্তুতি চলছে। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে নির্মাণ ব্যয় বাড়লেও সড়ক টিকছে না। দুই সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি একটি সংস্কৃতিতে দাঁড়িয়েছে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। প্রচারে নেমে প্রার্থীরা ভাঙাচোরা রাস্তা চলাচলের উপযোগী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এসব প্রতিশ্রুতির পরও রাস্তা চলাচলের উপযোগী হয়নি। দুই সিটি করপোরেশনে ১৬টি ওয়ার্ড বেড়েছে। ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনের পর রাজধানীবাসীর মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি।
ডিএনসিসির সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ শতাংশ সড়কের কাজ আমরা করতে পারিনি।’
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেগা প্রকল্পের আওতায় আমাদের ৯০টি ওয়ার্ডে এক হাজার ২০২ কোটি টাকার কাজ চলছে। এ ছাড়া নতুন যোগ হওয়া চারটি ওয়ার্ডে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর সুফল মিলবে কিছুদিনের মধ্যে।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/04/22/627853