২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ১২:৩৭

লজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা

কলঙ্কজনক ঘটনা

অমানবিক ও ন্যায় বিচার বিরোধী : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী; এরকম লজ্জাজনক ঘটনার নজির নেই : সৈয়দ আনোয়ার হোসেন; এসব দলীয়ভাবে করা হচ্ছে। এর নিন্দা জানাই : আজিজুন্নাহার ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। তীব্র নিন্দা আর ধিক্কারের ঝড় বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রছাত্রী বলেছেন, এ ঘটনায় তারা স্তম্ভিত, লজ্জিত। গত বৃহস্পতিবার রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনাকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কলঙ্কজনক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী নন, দেশের বিভিন্ন মহল থেকে বিবেকবান অনেকেই হতবাক এ ঘটনায়। শঙ্কিত আর উদ্বিগ্ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক আর তাদের স্বজনেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন বলতে আর কিছু নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে প্রশাসন। এমনকি সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কথায় প্রশাসন চলছে বলে অভিযোগ করলেন অনেকে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক দেশের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই এটাই এখন প্রমাণিত।
মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকার কর্মীসহ সব মহল থেকে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রীদের গভীর রাতে বের করে দেয়ায় নিন্দা প্রকাশ চলছে অব্যাহতভাবে। ঢাবি ভিসির পদত্যাগ দাবিসহ চলছে তাকে এবং কবি সুফিয়া কামাল হল প্রশাসন নিয়ে নানা ব্যঙ্গবিদ্রƒপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এটা অমানবিক এবং ন্যায়বিচারবিরোধী ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন হলো ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক। কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনায় প্রমাণিত হলো শিক্ষার্থীরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীন। তাদের নিরাপত্তা নেই।
কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে ১০ এপ্রিল রাতসহ আগেও বিভিন্ন সময় ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তার অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের হল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খ্যাতিমান এ শিক্ষক বলেন, এটা ন্যায়বিচারবিরোধী ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, মধ্যরাতে আবাসিক হল থেকে মেয়েদের বের করে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়। ঢাবির ইতিহাসে এ রকম লজ্জাজনক ঘটনার নজির আর নেই। আমি এ ঘটনায় লজ্জাবোধ করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়সুলভ কোনো প্রশাসন নয়। সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আবাসিক হলে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। ছাত্রসংগঠন যা বলে প্রশাসন তাই করে। বিএনপির সময় ছাত্রদল এবং আওয়ামী লীগের সময় ছাত্রলীগের কথায় চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তথাকথিত তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রলীগ এশার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিলো। এরপরই আমরা দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও একইভাবে এশার ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিলো। এটাই প্রমাণ করছেÑ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রসংগঠনের কথায় চলছে। প্রশাসনের নিজস্ব নীতি বলতে কিছু নেই। স্বায়ত্তশাসন বলতে কিছু নেই। ছাত্রসংগঠনের উপদেশ অনুযায়ী প্রশাসন চালানো নীতিবহির্ভূত এবং অনাকাক্সিক্ষত। ছাত্রসংগঠন ভালো উপদেশ দিলে সেটা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু সবকিছু তাদের কথামত চলতে হবে এটা খুবই উদ্বেগজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অনারারি প্রফেসর ড. আজিজুন্নাহার ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা আমার বিভাগের ছাত্রী। আমি তাকে চিনি। ছাত্রীর পা কেটে দেয়ার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে তা সত্য বলে জানতে পেরেছি আমি। ঘটনার পর আমি আমার বিভাগের একজন শিক্ষক ও ছাত্রী পাঠিয়ে ছিলাম আহত ছাত্রীকে দেখতে। তা ছাড়া কবি সুফিয়া কামাল হলের অনেক মেয়েও আমাকে জানিয়েছে এশা দীর্ঘ দিন ধরেই নিরীহ ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। অনেক সময় আমার বিভাগের মেয়েরা তার কারণে ক্লাসে পর্যন্ত আসতে পারত না। আমি জানতে চাইলে তারা জানায়, এশা তাদের আসতে দেয়নি। জোর করে মিছিলে নিত সে। ১০ এপ্রিল রাতের ঘটনার পর আমার বিভাগের অনেক শিক্ষকও এশাকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ধরনের ছাত্রী বিভাগের জন্য সম্মানজনক নয়। যা হোক তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের পর আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু পরে যা ঘটল তা খুবই আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর থেকে আমি এ বিষয়ে নজর রাখছি। কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট সাবিতা রেজোয়ানকে আমি ভালো করেই চিনি। তার সাথেও আমার কথা হয়েছে। কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার রাতে যা করেছেন তা খুবই অন্যায় করেছেন। এটা তিনি করতে পারেন না। এসব দলীয়ভাবে করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় এবং সরকারের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে মর্মে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে বের করে দেয়া হয় অনেক ছাত্রীকে যারা ছাত্রলীগ নেত্রী এশার অন্যায়ের বিরোধিতা করেছিলেন। রাত ৯টার পর থেকে অনেক ছাত্রীর অভিভাবকদের ফোন করে হল প্রশাসন জানায়, আপনাদের মেয়েকে এক্ষুনি হল থেকে নিয়ে যান। রাত পৌনে ১টার সময় পর্যন্ত এক অভিভাবককে দেখা গেছে হলে প্রবেশ করতে তার মেয়েকে নেয়ার জন্য। রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ ছাত্রীকে দেখা গেছে তাদের অভিভাবকদের সাথে হল থেকে বের হয়ে যেতে। হল থেকে অভিভাবকদের ফোন করে তাদের মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার পর অনেক অভিভাবক গভীর রাতে অনুরোধ করেন তাদের বাসা অনেক দূরে। তা ছাড়া ঝড় বৃষ্টি চলছে। সকাল পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হোক। কিন্তু তারপরও হল থেকে এক্ষুনি তাদের নিয়ে যেতে বলা হয়। অনেকে বাধ্য হন রাত ১২টার পরও হলে আসতে। ফলে অনেক ছাত্রী ও অভিভাবক হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকেরা তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা জানান, কারো সাথে কথা না বলার জন্য তাদের শাসানো হয়েছে।
হল সূত্র জানিয়েছে, ২০ থেকে ৫০ ছাত্রীকে রাতে বের করে দিয়েছে হল থেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জড়ো করে হলের প্রভোস্ট সাবিতা রেজাওয়ানাসহ হল প্রশাসনের নানা ধরনের ভয়ভীতি, মামলার হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটে ওই রাতে। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক ছাত্রী হল থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও তাদের বের হতে দেয়া হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে ছাত্রীদের বের করে দেয়া হয়নি, তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, মেয়েদের বের করে দেয়া হয়নি। তিন ছাত্রীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বের করে দেয়ার কথাটা গুজব। এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। মধ্যরাতে হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার পর গতকাল সকালে সাংবাদিকেরা তার কাছে গেলে তিনি তাদের কাছে এ দাবি করেন।
এশাকে হেনস্তাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার প্রতিবাদ করেন ওই হলের অনেক ছাত্রী। তারা প্রভোস্টকে বলেন, যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে শুধু তারা নন বরং হলের দুই হাজার ছাত্রী এশার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন ১০ এপ্রিল রাতে। তার বিরুদ্ধে হলের সব সাধারণ শিক্ষার্থী হলের সামনে জড়ো হন।
হলের প্রভোস্ট ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান যখন ছাত্রীদের জড়ো করে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান তখন ছাত্রীরা এসব কথা বলেন। ছাত্রীদের জবাবে সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে স্বাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেবো। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেবো। আমার শিক্ষকেরা দেখেছেন, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওই দিন যা হয়েছে, সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে, সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে, সেটা কী বিচারে মারা হয়েছে? যে মেয়ে ভয় পেয়েছে, সে নিজে বলেছে।
মধ্যরাতে হল থেকে ছাত্রীদের বিতাড়ন বিষয়ে হল প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকদের সাথে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
মধ্যরাতে এভাবে অভিভাবকদের ডেকে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাকে বর্বর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ভুক্তভোগী অভিভাবকেরা। অপর দিকে ভিসি প্রফেসর ড. মো: আখতারুজ্জামান হল থেকে ছাত্রী বিতাড়ন অস্বীকার করে বলেছেন, তাদের বের করে দেয়া হয়নি, অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন মধ্যরাতে অভিভাবক ডেকে ছাত্রীদের তাদের সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া আর বের করে দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কী।
হলের ঘটনা অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্কজনক, নিষ্ঠুর, বর্বর ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও ভিসি এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, এ পদক্ষেপ নিয়ে হল কর্তৃপক্ষ সঠিক কাজটাই করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়াসহ ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে। এতে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো ক্যাম্পাস। রাত ১২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করে। কবি সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ ছাত্রীরা হলের সামনে জড়ো হন। এ ছাড়া বিজয় একাত্তর হলসহ বিভিন্ন হলের আবাসিক ছাত্ররা রাতে হলের গেট ভেঙে মিছিলসহকারে কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হন। পরিস্থিতির একপর্যায়ে কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা এশাকে ধরে গলায় জুতার মালা পরান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। ছাত্রলীগও তাকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরও ঘটনার পরপর জানান, এশার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ সত্য বলে জানতে পেরেছেন তারা। এশাও ঘটনার দিন ছাত্রীদের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর ক্ষমা প্রার্থনা করেন ঘটনার জন্য।
পরে ১২ এপ্রিল ছাত্রলীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী এশাকে নির্দোষ ঘোষণা করে ১৩ এপ্রিল ছাত্রলীগ এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়। অপর দিকে এশাকে হেনস্তা করার অভিযোগে ১৬ এপ্রিল মোর্শেদা খানমসহ ২৪ ছাত্রলীগ নেত্রীকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ১৮ এপ্রিল এশার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে জানায়, তদন্তে এশার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ দিকে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ২৬ ছাত্রীর একটি তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১০ এপ্রিল রাতে এশাকে জুতার মালা পরানোসহ তাকে হেনস্তা করেছে ওই ২৬ ছাত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ তালিকা বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার রাতে হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এশার বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের জন্য তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পর তা প্রত্যাহার করে উল্টো তার অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা গতকাল ক্যাম্পাসে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/312023