১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ৫:১২

চট্টগ্রামে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ক্রমেই রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত থেকে প্রাণঘাতী সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকালও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের সংঘর্ষে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো একজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারের গোলাম রসুল মার্কেটের পাশে সফিনা গলিতে ছাত্রলীগের আহাদ পক্ষের সাথে ইয়াসিন পক্ষের সংঘর্ষ হয়। প্রথমে কথা কাটাকাটি পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া একপর্যায়ে আহাদ পক্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা ইয়াসিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সঙ্কটাপন্ন অবস্থা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ইয়াসিনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহত ইয়াসিন সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইয়াসিনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ছদাহা মীরেরখীল বলে জানা গেছে। তার বাবা চট্টগ্রামের মৌসুমী আবাসিক এলাকায় ক্ষুদ্র দোকানি বলে হাসপাতালে আসা ঘনিষ্ঠজনদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
এ দিকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এলাকায় বিভিন্ন গ্র“প-উপগ্র“পে বিভক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মূলত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুসারী হিসেবে দু’টি ধারায় বিভক্ত। এর বাইরে আধিপত্য বিস্তার ও টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও সংসদ সসদ্যদের অনুসারী বেশ কয়েকটি গ্র“প নগরজুড়ে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের নানা পর্যায়ের নেতাদের অনুসারীর গ্র“পও রয়েছে। ফলে বহুধা বিভক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-সঙ্ঘাতে জড়াচ্ছেন।
গেল সপ্তাহের ৬ ফেব্র“য়ারি রাতে নগরীর বাকলিয়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তানজীরুল হক নামে এক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুলিবিদ্ধ ওই ছাত্রলীগ নেতা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী বলে জানা গেছে।
গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্র“পের সংঘর্ষে ২৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। ওই সংঘর্ষের পর শাহজালাল ও শাহআমানত হলে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন নগর কমিটির সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
২১ নভেম্বর আধিপত্য বিস্তার হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্র“প সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী ছুরিকাহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী দুই গ্র“পে এই সংঘর্ষ ঘটে বলে সূত্র জানায়।
১ নভেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনিতে পুলিশের উপস্থিতিতে দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল অনুসারীদের সাথে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্্রীয় নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীরা ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এ বি এম মাসুম আহমদের বাসায় ভাঙচুর চালান লিমন গ্র“পের অনুসারীরা।
গত ২ অক্টোবর নগরীর সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির অনুসারী গ্র“প ক্যাম্পাসে স্লোগান দিয়ে এর পাল্টা হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করলে দুই গ্র“পের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই গ্র“পের অন্তত পাঁচজন আহত হন।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে আবার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নগর আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও গত ২৮ আগস্ট ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে সংঘর্ষে পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন।
এ ছাড়া নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে গত ১৯ অক্টোবর ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দুই গ্র“পই মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
২৭ অক্টোবর নগরীর চকবাজার এলাকায় অবৈধ টমটম চালানোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েও ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে মারামারি হয়।
এ দিকে ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত বাড়তে থাকায় জনমনেও বাড়ছে আতঙ্ক। অনেক অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠাতেও ভীত সন্ত্রস্ত থাকেন এসব সঙ্ঘাত সংঘর্ষের কারণে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/195116