হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমাম মো. আবদুল গফ্ফার
২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ১২:৩৩

ইমামের মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতন করল সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

মির্জাগঞ্জে মো. আবদুল গফ্ফার নামে এক ইমামকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে ও মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতন করেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. রাসেল।
অভিযোগে জানা গেছে, মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. রাসেল ও তার সঙ্গীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনা ঘটায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ নির্যাতিত ইমামকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ সময় ঘটনায় জড়িত রাসেলের সঙ্গী মো. আনসার ও মো. জলিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত রাসেল দাবি করেছেন- আবদুল গফ্ফার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং তার খালা ও খালাতো বোনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ কারণেই তাকে শাস্তি দিয়েছেন। অন্যদিকে মো. গফ্ফার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মির্জাগঞ্জ থানায় নির্যাতিত ইমামের বড় ভাই মো. রাজ্জাক বাদী হয়ে রাসেলসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, আবদুল গফ্ফার উপজেলার কাঁকড়াবুনিয়ার সোনাপুরা গ্রামের লতিফ হাওলাদারের ছেলে।
তিনি পাশের বেতাগী উপজেলার মিয়ারহাট গ্রামের একটি জামে মসজিদে ইমামমতি ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অবসর সময়ে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগীর চিকিৎসা করেন। বৃহস্পতিবার বিকালে ইমাম আবদুল গফ্ফারকে ফোন করে একজন অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) দেয়ার কথা বলে দক্ষিণ মির্জাগঞ্জে নিয়ে আসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও তার দলবল।
সেখান থেকে তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নির্জন এলাকায় নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাসেল, আনসার, জলিল ও তাদের দলবল অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে টয়লেট থেকে মানুষের মল নিয়ে ইমামের মুখে ঢেলে দেয় এবং মাথা ন্যাড়া করে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় গফ্ফারকে উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে মো. আনসার ও মো. জলিলকে গ্রেফতার করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল গফ্ফার বলেন, আমি মির্জাগঞ্জ দরবার শরিফে কিছুদিন চাকরি করেছি, তখন থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের সঙ্গে পরিচয়। আমার কাছে বিশ্বাস করে কিছু রোগী আসত ঝাড়ফুঁক নেয়ার জন্য। আমি আল্লাহর কালাম পড়ে পানিপড়া দিলে অনেকে ভালো হয়েছে। তবে আমি কখনও মানুষের ক্ষতি করিনি।
অভিযুক্ত মো. রাসেল মোবাইল ফোনে বলেন, মিজাগঞ্জে চাকরির সময় ওই ইমাম ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এমনকি আমার এক খালা ও খালাতো বোনের সঙ্গেও চিকিৎসার নামে প্রতারণা করেছে এবং আপত্তিকর আবদারও করেছে। তাই তাকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে।
আবদুল গফ্ফার তার বিরুদ্ধে করা রাসেলের এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমি প্রতারণা কিংবা কাউকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেইনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মো. মফেজ গাজী বলেন, ইমাম আবদুল গফ্ফার বিভিন্ন রোগীকে পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করতেন।
ওইদিন বিকালে রাসেলসহ কয়েকজন মিলে ইমাম আবদুল গফ্ফারকে আমার বাসার সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। কী কারণে নিয়েছে, তা আমি জানতে পারিনি। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, রাসেল একসময় মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/40407/