কবি সুফিয়া কামাল হল। ছবি: ফাইল ছবি
২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৫৫

মুঠোফোন চেক করে গভীর রাতে ছাত্রী তাড়াচ্ছে হল প্রশাসন

মুঠোফোন ‘চেক’ করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রীদের বের করে দিচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা নিজেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রথম আলোকে এ কথা জানান। 

সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঠিক কত ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্ক রাত ১টা পর্যন্ত নিশ্চিত হওযা যায়নি। প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমন চারজন ছাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রতিবেদকের সামনেই একজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুতবেগে চলে যান। সেসময় তিনি কথা বলতে চাননি। এরপর রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপরই ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আন্দোলনের কারণে মেয়ে রাতেও হল থেকে বের হন। এসব বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেছেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে ছাত্রীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেছেন, রাতে আটজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হল কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, রাত ৯টা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের ফ্লোরে ফ্লোরে রাতে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। ছাত্রীরা আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রথম চোটে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।
ছাত্রত্ব বাতিল, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার হুঁশিয়ারি প্রাধ্যক্ষের
রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের ডেকে হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর হাতে রয়েছে। তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই লেখা হলো:
‘অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনেটলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ইনভলভমেন্ট। এরপরে এই হলে ছাত্রলীগ যদি গণ্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গণ্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না। হলে যদি আর কেউ বিশৃংখলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা কর হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব...আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম, আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম...আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?’
জবাবে ছাত্রীরা ওই রাতে ছাত্রলীগ সভানেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে তাতে দুই হাজার মেয়ে সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে সাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব। আমার শিক্ষকেরা দেখেছে, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওদিন যেটা হয়েছে সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে সেটা কি বিচারে মারা হয়েছে। যে মেয়ে ভয় পেয়েছে সে নিজে বলেছে। মোবাইল দিয়ে কি করছ?’

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1473311/