২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১৪

ঢাবিতে হল প্রশাসন কর্তৃক ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলে প্রশাসন কর্তৃক ছাত্রীদের ডেকে ডেকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে হলের সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হলে এ ঘটনা ঘটে। হলটির একাধিক ছাত্রী ও তাদের পরিবার হয়রানির অভিযোগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হল প্রশাসন রাত ৯টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ৯ জনকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। বের করা দেয়া ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানান, হলের প্রভোষ্ট অফিস থেকে ফোন করে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, তাদের মেয়েরা হলে থাকতে পারবে না, এখনই নিয়ে যেতে হবে।

এর আগে ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় গঠিত হলের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধেও সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে।

ছাত্রী নিপীড়নকারী হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ডেকে এমন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ছাত্রীদের ডেকে হল ত্যাগে বাধ্য করা, মুঠোফোন জব্দ, অজ্ঞাত মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি এবং অভিভাকদের ফোন করে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় হলের এক ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবারের এক সদস্য তার বোনের নাম ও পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তা চেয়ে বলেন, রাত সাড়ে ৮টায় আমার বোনকে ফোন দিলে এক শিক্ষিকা তা রিসিভ করে বলেন ‘হলে সমস্যা হয়েছে। আপনার বোনকে হল থেকে নিয়ে যান, তার ফোন জব্দ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ওই শিক্ষিকাকে অনুরোধ করি আমার বোনকে ফোনটি দেয়ার জন্য। পরে বোন ফোন রিসিভ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলেন। এ সময় সে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে লাইন কেটে দেয়। এরপর থেকে আর ফোন রিসিভ করছে না সে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার বোন যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে তার বিচার হতেই পারে কিংবা আমাদের কাছেও অভিযোগ জানাতে পারে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না কেন? আমি আমার বোনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
এ দিকে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীসহ কয়েকজনকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অন্তি নামের এক ছাত্রীকে হাউজ টিউটরদের কক্ষে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। পরে রাত ১০টায় তার নম্বরে ফোন দিলে অন্য একজন কল রিসিভ করেন। তিনি বলেন, এখন তাকে (অন্তি) দেয়া যাবে না। পরে ফোন করেন।

এ দিকে, অন্তি নামের এক ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে হলের ছাত্রীরা সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করার প্রস্তুতি নেন। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্তিকে বের করে দেয়া হয়নি আশ্বাসের ভিত্তিতে হলের ছাত্রীরা শান্ত হন। এ ছাড়া আজ (শুক্রবার) রাতে ছাত্রীদের সাথে হল প্রশাসনের আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছেন হলের একাধিক ছাত্রী।

ছাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ফেক আইডির মাধ্যমে অনেকে হলের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে। তাই তাদের ডেকে এনে মোবাইল চেক করা হচ্ছে। এমন কাউকে পাওয়া গেলে তার পরিবারকে ডেকে আনা হবে। এখন পর্যন্ত কারো মোবাইলে সন্দেহজনক কিছু পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি লাইনটি কেটে দেন। পরে একাধিক ফোন দিলে রিসিভ না করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। এগুলো গুজব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি দুষ্ট চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রী লাঞ্ছনাসহ ১১ এপ্রিলের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটি ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ থেকে এশাকে অব্যাহতি দিয়ে উল্টো ২৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। অথচ এশা কর্তৃক ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও হয়রানির রেকর্ড বের হলেও সেই ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/311771