১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ৫:১০

চালের সর্বনিম্ন দাম ৪০ টাকা সিন্ডিকেটের কারসাজি: মিলারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, এ জন্য সংকট ও দাম দু-ই বাড়ছে

আমন মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কমার কথা। আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুদ পর্যাপ্ত। তবু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৫ টাকা। এখন এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। শনিবার বাবুবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন বাজারে মোটা চালের জোগান কম। দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মোটা চাল তুলছেন না। দাম বাড়ার মূল কারণ- মিল মালিকরা চাল স্টক করছেন।’


খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এর নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী চাল মজুদ করে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। আর এতে করে সিন্ডিকেটের কাছে চলে যাচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তবে মিল মালিকরা এসবের জন্য দায়ী করেছেন সরকারের অব্যবস্থাপনাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আমন ধানের বড় অংশই কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে উত্তরাঞ্চলের ফড়িয়া ও মিলাররা। এরপর ধান থেকে চাল করে বাজারে ছাড়ার কথা। তা না করে তারা গুদামে মজুদ রেখেছে। মিলারদের কাছ থেকে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাজারে আসছে না। এ কারণে চালের সংকট ও দাম দু-ই বাড়ছে।

পুরান ঢাকার নয়াবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর নিম্নআয়ের মানুষ মোটা চালের ক্রেতা। আর এই চাল রাজধানীর সব বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪১ টাকায়। মাঝে মধ্যে দু-এক টাকা কমে আবার বাড়ে। কিন্তু গড়ে বাজারে সবচেয়ে কম দামের চাল ৪০ টাকা।

এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজার দরের মূল্য তালিকায়ও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। সেখানে মোটা চালের বর্তমান মূল্য ৩৬-৩৮ টাকা। এক বছর আগের মূল্য ছিল ৩২-৩৪ টাকা। যা বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১২.১২ শতাংশ। এ ছাড়া এক মাস আগে একই চালের মূল্য ছিল ৩৫-৩৮ টাকা। মাত্র এক মাসে দাম বেড়েছে ১.৩৭ শতাংশ।

সরেজমিন রাজধানীর নয়াবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা ও পারিজা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৩৬-৩৭ টাকা। বিআর আটাশ ও ঊনত্রিশ ৪৩-৪৪ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪০-৪২ টাকায়। মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫০-৫২ টাকা, দেশী বাসমতি ৫৮-৬০ টাকা। অন্যদিকে প্রকারভেদে চিনিগুঁড়া চাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দামে বিক্রি করছে প্যাকেটজাত চিনিগুঁড়া চাল।

জানতে চাইলে দেশের চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার বাদামতলি ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা চালকল মালিকদের দিকেই তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করে আমরা সে দামেই কিনে বিক্রি করি। যদি দাম বাড়ে বা কমে মিল মালিকরাও বাড়ায় বা কমায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা সে দামে কিনে বিক্রি করেন। চালের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী নন।’ তিনি জানান, চালের দাম বাড়তির দিকে থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বাড়েনি। তবে সরকার নজরদারি বাড়ালে চালের দাম কমে আসবে।

এদিকে গত মাসে ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গণমাধ্যমে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, সরকারের খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর পর থেকে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি এবং গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও চলতি বছরের শুরুতে বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে। অথচ আমন মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় চালের দাম কমার কথা ছিল। আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, উত্তরবঙ্গের মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৪০০ টাকা। আর পাঁচ মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে সিদ্ধ চালের দামও বেড়েছে। সেইসঙ্গে সরু চালসহ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা।
http://www.jugantor.com/last-page/2017/02/12/100318/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A7%AA%E0%A7%A6-%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BE