১৯ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৮

সংস্কার আন্দোলন ব্যর্থ হবে না

অন্য দৃষ্টি

জসিম উদ্দিন
সরকারি চাকরিতে তিন লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি পদ খালি আছে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ২৪৬টি প্রথম শ্রেণীর। ৫৪ হাজার ২৯৪টি দ্বিতীয় শ্রেণীর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেকার যুবকের সংখ্যা ২৬ লাখ। যার প্রায় ১০ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। সে হিসাবে আড়াই লাখের বেশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকার রয়েছেন। অন্য দিকে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর খালি পদ হিসাব করলে এক লাখের বেশি পদ খালি রয়েছে। ত্বরিত গতিতে এসব পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করলে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী বেকারদের সংখ্যা অর্ধেক কমবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এ ধরনের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের বদলে সরকারও যেন বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে চাচ্ছে।

কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সরকার যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা বিমাতাসুলভ। প্রথমে তরুণদের দাবিকে সরকার সরাসরি অগ্রাহ্য করেছে। আন্দোলনের সর্বাত্মক বিস্তৃতি দেখে পরে সরকারের টনক নড়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে কোটাপদ্ধতি একেবারে বাতিল করে দিয়েছেন। এ ধরনের একটি ঘোষণার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। তার কথার ওপর সাধারণত আর কোনো কথা থাকতে পারে না। তার কথা অবশ্যম্ভাবীরূপে কাজে রূপান্তরিত হবে; কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারি বাহিনীর আচরণ দেখে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সবার প্রত্যাশা ছিল, কোটা প্রথা নিয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সেই প্রজ্ঞাপন জারির কোনো দেখা নেই। উল্টো যারা এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের ওপর নেমে এসেছে রাজনৈতিক কায়দায় নিপীড়ন।
এ ধরনের নিপীড়ন সাম্প্রতিক ইতিহাসে বড় নিকৃষ্টভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসতে দেখা গেছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুম খুন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার শিকার রাজনীতি সংশ্লিষ্ট লোকেরা বিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে কার্যকর নেতা হতে পারতেন। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের একই কায়দায় প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। বিরোধী নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেশির ভাগই ঘটেছে গোপনে। ওইসব ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। ঢাকা মহানগরীর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম দিয়ে এর যাত্রা শুরু। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পদক ইলিয়াস আলীসহ এ ধরনের আরো অনেকের আজ আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না।

প্রজ্ঞাপন জারির বদলে আমরা দেখতে পাচ্ছি মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মহাসমাবেশ আয়োজন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে টেক্কা দেয়ার জন্য যদি এ ধরনের আন্দোলনকে হাওয়া দেয়া হয়, সেটা হবে দুঃখজনক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কোটার মাধ্যমে নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের বিশেষ সুবিধা আদায় করে নেয়ার জন্য যুদ্ধ করেননি। এ ধরনের নগদ প্রাপ্তি নিয়ে কখনো জীবন বাজি রাখা যায় না। সরকারের পক্ষ থেকে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এই আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অপমানিত হবে। তাদেরকে একটি সংখ্যালঘু শ্রেণীতে পরিণত করা হবে। তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখোমুখি। দেশের বেশির ভাগ তরুণকে বঞ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধারা কখনো বেশি করে সুযোগ আদায় করে নিতে চাইবেন না। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে থেকে এ ব্যাপারে অনেকটাই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাবেক আমলা, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে কোটা সংশোধনের তাগিদ জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তরুণেরা সে কারণে এ আন্দোলনে যোগ দিতে কোনো দ্বিধা করছে না।

তাদের পাঁচটি দাবি দেখলেই এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করা যায়। এক : কোটার হার ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ নির্ধারণ; দুই : কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ; তিন : কোটায় কোনো সময় বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া; চার : সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা; এবং পাঁচ. কোটার সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা। প্রথম দাবিটি নিয়ে যাচাই-বাছাই হতে পারে। সংখ্যালঘু, পিছিয়ে পড়া ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোটা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রী সব কোটা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বিতীয় দাবিটি সরকার ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে। অনেক সময় সরকার তার অঙ্গীকার থেকে সরে যায়। ভুলে যায় কী কথা বলে এসেছে। তিন নম্বর দাবিটি যৌক্তিক, কারণ শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও বিশেষ শ্রেণীর জন্য বিশেষ চাকরির সুযোগ করে দিতে গেলে উপযুক্ত মেধা-যোগ্যতার কর্মী সাধারণত তারা পাবেন না। ফলে প্রতিষ্ঠানটি এক সময় শূন্যতায় পড়বে। তাদের কাজের গতি স্তিমিত হবে। এটি সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের সাথেও সাংঘর্ষিক। বয়সসীমার পার্থক্য ও ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতিও একইভাবে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। সর্বশেষ কোটার সুযোগটি একবারের জন্য ব্যবহার হওয়াও সঙ্গত। কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত তরুণেরা যেসব দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন, তাতে তাদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। এর বদলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নেমে এসেছে তাদের ওপর নিপীড়ন ও ভয়ভীতি।

খবরে প্রকাশ, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতির সংস্কার নিয়ে কাজ শুরু হলেও আগামী জুনের আগে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ছয় দিন চলে গেছে; এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারির কোনো অগ্রগতি নেই। এ ছাড়া কোটা সংস্কার খতিয়ে দেখতে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনের আলোচনা হলেও তা এখনো দৃশ্যমান হয়নি। কোটা সংস্কার নিয়ে কাজ করার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। এ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ফাইলটি ওঠানোর কথা রয়েছে। জানা যাচ্ছে, ওই বিভাগে এ ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা যায়নি। ৯ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এখনো কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতিও নেই।

আন্দোলনকারীদের গতানুগতিক পুলিশি কায়দায় কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে মারধর করে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা উল্টো ফল হয়েছে। আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোটা আন্দোলন সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে ব্যতিক্রমী আন্দোলন। এ আন্দোলনে দেশের ব্যাপক তরুণগোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। এর আগে এ ধরনের আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা করেছেন। এবার সেটা সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দফতরে আন্দোলনকারীদের সাথে সভা করে সরকার পক্ষ। ওই সভার সিদ্ধান্ত মানতে অপারগতা জানায় আন্দোলনকারীদের এক পক্ষ। এরপর সারা দেশে আন্দোলন তীব্রতা পায়। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণাকে সবাই বিশ্বাস করতে চায়। কোটা আন্দোলনকারীরা প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রজ্ঞাপনে কোটা নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা নতুন করে কর্মসূচি দেবেন প্রয়োজন হলে। দ্বিধা-সন্দেহ দেখা দিয়েছে, একটি প্রজ্ঞাপন আদৌ জারি হবে কি না। প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যে এক সফরে বিদেশে রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি প্রধান নির্বাহী। তার পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য মানে সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। সবাই তার প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এর মধ্যে ঘটনা উল্টো খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। আন্দোলনকারী তিন নেতাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যান। এ ঘটনা ঘটে এমন এক সময়, যখন তারা তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তুলে নেয়ার জন্য দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেন। আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা দেয়ার সময় গ্রেফতার করা ছাত্রদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের শর্ত ছিল। এই কয়েক দিনে এ দুই শর্তের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সোমবার তারা নতুন আলটিমেটাম দেন। এর পরপর তিন নেতাকে তুলে নেয়ার ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। তাদের তুলে নেয়ার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নেতাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। অন্য দিকে ছাত্রলীগের নেতারা তিন নেতাকে তুলে নেয়ার ঘটনাকে গুজব বলে প্রচার চালাতে থাকেন।

দুই ঘণ্টা পর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান তারা। পরে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নেয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে খাওয়ার জন্য তারা চাঁনখারপুল যাচ্ছিলেন। খাওয়ার আগে তারা মেডিক্যাল কলেজে আহতদের দেখতে যান। তুলে নেয়ার যে বর্ণনা তারা দিয়েছেন; বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে তুলে নেয়ার ঘটনাগুলোর সাথে তা হুবহু মিলে যায়। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যারা তুলে নিয়ে গেছেন। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে তুলে নিয়ে যাওয়ার একই ধরনের বিবরণ পাওয়া যায়; কিন্তু ঘটনা যে বাংলাদেশের কোনো বৈধ বাহিনী ঘটিয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তারা রিকশায় ছিলেন। তিনটি মোটরসাইকেল তাদের রিকশার গতিরোধ করে। পেছন থেকে পরে একটি হাইএস মাইক্রোবাস আসে। তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর আমাদের কিছু লোক ঘিরে ফেলে। অনেকের হাতে রিভলবার। তারা বলে আমরা ডিবির লোক। পরিচয় জানতে চাইলে সুযোগ না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়েছে। গুলিস্তান যাওয়ার পর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। একজন জানান, এটিকে তিনি নিজের জীবনের শেষ সময় হিসেবে ধরে নেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। চোখ খুলে দেখেন তারা ডিবি কার্যালয়ে। জানানো হলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখানো হবে। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়নি। বলেছে, তোমরা এখন চলে যাও।

পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল হক নুর করুণভাবে জানান, সারা বাংলার ছাত্রসমাজকে জানিয়ে দিতে চাই। আমরা শুধু নিজের জন্য এ আন্দোলন করিনি। সবার জন্য এ আন্দোলন করে নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। এ জন্য আমাদের ওপর বারবার নির্যাতন নেমে আসছে। তোমরা যদি সোচ্চার না হও, আর কেউ তোমাদের হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। আর কোনো সুষ্ঠু বিবেকবুদ্ধির ন্যায়বান মানুষ ন্যায় অধিকারের হয়ে কথা বলবে না। জাতির বিবেক মরে যাবে। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার লোক থাকবে না। জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলব শুধু আমি না, যখনই কোনো অন্যায় হবে তখনই তোমরা গর্জে ওঠো। আমি আজকে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে দেখেছিলাম শত শত লোক। কেউ তো বলেনিÑ কেন আপনারা এই ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন? বলেছিলামÑ ভাই আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসেনি; অথচ আমরা তো সবার স্বার্থের জন্য এ আন্দোলন করছিলাম।
নুরের কথায় বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান সময়ের ভীত চরিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মূলত সরকারি বাহিনীর নাম করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব বাহিনীকে কেউ মোকাবেলা করার সাহস করছে না। কেউ এগিয়ে এলে তাকে রক্ষার জন্য পেছনে আর কেউ থাকছে না। এ ধরনের দম বন্ধ হওয়া অবস্থা আর কত দিন চলবে?

আরেক যুগ্ম সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, আমাকে না হয় মেরে ফেলল, আমার আব্বা কি অন্যায় করেছে? তার ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সে কি অন্যায় করেছে? তার ছেলে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় কি সে অন্যায় করেছে? আজকে জাতির কাছে আমি এ বিচার দিলাম। আমাকে না হয় মেরে ফেলল। আমার আব্বাকে কেন থানায় নেয়া হয়েছে? আমার আব্বাকে কেন পুলিশ গালিগালাজ করল? সে কান্না করছে। বলেছে, তাকে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নেয়া হয়েছে। ওইখানকার ওসি বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয় যে, সে জামায়াত-শিবির করে এবং তার ছেলে শিবির করে। আমার আব্বাকে আটক করে রাখা হয়। সে কোনো অন্যায় করেনি। সে একজন দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত হইনি। আমি একটি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে এসেছি। আমি একজন সাধারণ ছাত্র। আমি কি সাধারণ ছাত্র হিসেবে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে পারি না। আজকে আমাদের আত্মীয়স্বজনের ঠিকানা নেয়া হচ্ছে।

একজন দিনমজুরের ছেলে রাশেদ খানের এ ভোগান্তি লাঘব করবে কারা? দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এ দেশে অনেক সংবাদমাধ্যমও ঘটনাকে নির্মোহভাবে দেখার পরিবর্তে দলীয় পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। রাশেদ নিজের পরিচয় ও দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন। এরপরও তিনি যদি কোনো একটি দল করে থাকেন, তাহলে কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন কি অযৌক্তিক? কিংবা রাশেদের এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ কি অবৈধ? একটি পত্রিকাকে দেখা গেল রাশেদকে নিয়ে অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদন রচনা করতে। রাশেদ ফেসবুকে কার কার পোস্টে লাইক দিয়েছেন, সেগুলোকে অপরাধ হিসেবে দেখানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। সংবাদমাধ্যমের এমন অন্ধ ও বিবেচনাহীন কর্মকাণ্ড দুঃখজনক। তবে কোনো সংস্কার আন্দোলন ব্যর্থ হয় না। কোটা সংস্কার আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না।
jjshim146@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/311305