দুই বাসের চাপায় পড়ে ক্ষতবিক্ষত হাত কেটেই ফেলতে হলো হৃদয়ের
১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৪১

রাজীবের পর হাত হারালেন হৃদয়

সিরাজের দুই পা ঝুঁকিতে

দুই বাসের চাপায় হাত হারানো রাজীব হোসেনের লাশ দাফন হওয়ার আগেই পাওয়া গেছে আরো দুটি মর্মস্পর্শী ঘটনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রামে ট্রাকের চাপায় একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বাসযাত্রী খালিদ হাসান হৃদয়ের। ২০ বছর বয়সের ওই তরুণ পেশায় পরিবহন শ্রমিক। দুর্ঘটনার পর তাঁকে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছার পর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন।
এ ছাড়া সোমবার ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটে এমভি কর্ণফুলী লঞ্চের চাপায় লঞ্চটির যাত্রী মো. সিরাজ উদ্দীন মুন্সীর দুই পা থেঁতলে গেছে। তিনি চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক।
কালের কণ্ঠ’র চরফ্যাশন প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনার পরপরই তাঁকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের তদারকিতে ঢাকায় নিয়ে এসে মোহাম্মদপুরের ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রমা সেন্টারে তাঁর পায়ে অপারেশন চলছিল।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হৃদয়ের বাবা রবিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, হৃদয় কাজ করেন টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস নামের একটি বাস কম্পানিতে। গতকাল তাঁর ছুটি ছিল। হৃদয় বাড়তি রোজগারের আশায় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের একটি বাসে চড়ে গোপালগঞ্জ সদরে আরেকটি বাসে কাজ করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাঁকে বহনকারী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় হৃদয়ের হাত বাসের জানালার বাইরে ছিল। ট্রাকের আঘাতে তাঁর হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই ঘটনায় আরো দুই যাত্রী আহত হলেও তাদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো হওয়ায় তাদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। রবিউল ইসলাম জানান, তাঁর তিন সন্তান এবং হৃদয় একমাত্র ছেলে।

কালের কণ্ঠ’র গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-গোপালগঞ্জ সড়কে ঘটা এ দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকটি দ্রুতগতিতে ওই এলাকা ত্যাগ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রাকটি ধরতে পারেনি পুলিশ।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) গোলাম ফারুক জানান, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসটি ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১০টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটি একটি বেপরোয়া গতির ব্যাটারিচালিত ইজি বাইককে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের মুখোমুখি পড়ে।
আহত লঞ্চযাত্রী সিরাজ উদ্দীনের ভাগ্নে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন মামার পা সাধারণ অপারেশনের মাধ্যমে ভালো করা যাবে, কেটে ফেলতে হবে না। তবে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল হবে।’ সিরাজ উদ্দীনের স্ত্রী নাছিমা বেগম জানান, সোমবার সকাল ঢাকা থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটে নামার সময় তাঁর স্বামী দুর্ঘটনার শিকার হন। এমভি কর্ণফুলী-১৩ লঞ্চটি বেতুয়া ঘাটে ফারহান-৫ লঞ্চের পাশে নোঙর করে। সিরাজ উদ্দীন কর্ণফুলীর পেছন দিক দিয়ে ফারহান লঞ্চের পাটাতন হয়ে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই লঞ্চের মাঝখানে তাঁর পা আটকে যায়।
ফারহান-৫ লঞ্চের ইন্সপেক্টর জাহিদ দাবি করেন, কর্ণফুলী লঞ্চটি থামার সময় তাঁদের লঞ্চকে জোরে ধাক্কা দেয়। অন্যদিকে পাশে থাকা আরেক লঞ্চ এমভি তাসরিফ-৩-এর বেতুয়া ঘাট ম্যানেজার জয়নাল আবদিন বলেন, কর্ণফুলী লঞ্চটি ঘাটে থামার সময় পেছন দিক থেকে তাসরিফকেও ধাক্কা দেয়।

ঢাকায় দুই বাসের চাপায় হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া কলেজছাত্র রাজীব হোসেন মারা গেছেন গত সোমবার রাতে। রাজীবের বাস দুর্ঘটনার পরও এ জাতীয় ঘটনা থেমে নেই। এ রকমই আহতদের দুজন রুনি আক্তার ও আয়েশা খাতুন নামের দুই নারী। ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আয়েশা খাতুনের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ায় তাঁর চলনশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তানকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। অন্যদিকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ও র্যাং গস প্রপার্টিজের কর্মকর্তা রুনি আক্তারের এক পা কেটে ফেলতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/04/18/626360