১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৪০

নিয়ন্ত্রনহীন সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে

চালক ২৯ লাখ লাইসেন্স ১২ লাখ

বেপরোয়া বাসচালক রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় ফের আতঙ্ক ছড়ালো সড়কে। সড়কের কান্না যেন থামছেই না। নিয়ন্ত্রনহীন সড়কে দিন যত যাচ্ছে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনাতেই মারা গেছে সাত হাজার ৩শ' ৯৭ জন। আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চার হাজার ৯৭৯টি দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে বিআরটিএ’র তথ্য মতে, দেশে মোট নিবন্ধিত হালকা ও ভারি গাড়ির সংখ্যা ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮৩৬ জন। এসব গাড়ির লাইসেন্সধারী ড্রাইভারের সংখ্যা ১৭ লাখ। অর্থাৎ ১২ লাখ চালকই লাইসেন্সবিহীন। এই বিপুল সংখ্যক চালকের গাড়ি চালানোর কোনো অনুমতিই নেই। অথচ এই অপেশাদার চালকের কারণেই দেশে হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন হাজারো পরিবহন যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সড়ক পথে। কিন্তু কতজন চালক পেশাদার, কতজন চালক দক্ষ তার হিসাব নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে। বিআরটিএ’র এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের কাছে যে হিসাব রয়েছে, তার বাইরেও অনেক পরিবহন এবং চালক রয়েছে, যাদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়ক দুঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষিত চালকের কোন বিকল্প নেই। এ জন্য সবার আগে যান বাহনের মালিককে সচেতন হতে হবে। একটি গাড়ির মালিক তার গাড়িটি কার হাতে তুলে দিলেন সে বিষয়ে তাকে ভাবতে হবে। পাশাপাশি পুলিশসহ সংশ্লিস্ট্র সংস্থার সকলের সমন্বয়ে কাজ করলে সুফল পাওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইসেন্স বিহীন চালকদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। সকলের সমন্বিত পদক্ষেপে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ১২ লাখ চালকের হাতে লাইসেন্স নেই। অথচ তারা প্রতিনিয়িত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামছে। অপেশাদার চালকের কারণেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে।

অপরদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ জানিয়েছে, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ৬শ' ৪৫ জন। ২০১৬ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১শ' ৪৪ জন। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২৭.৩৬ শতাংশ বেশি। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে মোট ৩ হাজার ৩শ' ৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯শ' ৮ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৩শ' ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় ৫ হাজার ২শ' ২৫ জন। ২০১৭ সালে আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৬শ' ৮৩ জন বেশি। ২০১৬ সালের তুলনায় আহতের সংখ্যা ২০১৭ প্রায় ৩২.৭৯ শতাংশ বেশি বলে রির্পোটে পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক ছোট ছোট দুর্ঘটনায় আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয় যা প্রত্রিকায়ও প্রকাশ হয় না।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাটের নির্মাণ ক্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পড়া ও রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াতের কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

https://www.dailyinqilab.com/article/126846