১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০১

শূন্যরেখায় ভালো নেই রোহিঙ্গারা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ড। গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা এখন পর্যন্ত এই নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই দুই দেশের মধ্যকার এই নিরপেক্ষ সীমানায় এখন বেড়ে উঠছে রোহিঙ্গা শিশুরা। গতকাল সোমবার তুমব্রু সীমান্তে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নো-ম্যান্স ল্যান্ডে রাতারাতি গড়ে ওঠা কুঁড়েঘর ও পানির পাম্পের কাছাকাছি ফাঁকা জায়গায় খেলছে রোহিঙ্গা শিশুরা। কেউ দড়ি নিয়ে লাফাচ্ছে, কেউ পাম্প থেকে পানি নিয়ে যাচ্ছে পরিবারের জন্য। অস্থায়ী এই বাড়িগুলোর একটু পেছনেই কাঁটাতারের বেড়া। তার পেছনে অস্ত্র হাতে সতর্ক মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ। সেদিকেই অপলক চোখে তাকিয়ে থাকেন দিল মোহাম্মদ নামে এক রোহিঙ্গা। কাঁটাতারের ফাঁক গলে তার চোখ খুঁজে ফেরে নিজের বসতভিটা।

দুই দেশের মধ্যকার ওই নিরপেক্ষ অঞ্চলেই বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘর বানিয়েছে রোহিঙ্গারা। ঘরে প্লাস্টিকের দেয়াল আর পলিথিনের ছাদ। এমন ঘরেই করতে হচ্ছে রাত্রিযাপন। খাবার পানির পাম্পের পাশ দিয়েই গেছে পয়ঃনিস্কাশনের পাইপ। কাঁটাতারের বেড়া পেরোলেই চোখে পড়বে ছোট একটি পাহাড়। সেখানেই মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের (বিজিপি) চেকপোস্ট। বেড়ার ওপাশে কাদামাটির রাস্তায় এমন অসংখ্য চেকপোস্ট রয়েছে।

দিল মোহাম্মদ ও তার সঙ্গে থাকা আরেক রোহিঙ্গা সৈয়দুল আমিন বলেন, আমরা অন্যপাশে অনেক ?পুলিশ দেখি। মাঝে মাঝে পুলিশ বেড়ার ওপরে উঠে মাইকে ঘোষণা করে বলে, যেন আমরা বাংলাদেশে চলে যাই। চলতি মাসের প্রথমেই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। নিরাপত্তার অজুহাতে নতুন করে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয় মিয়ানমার। কোথাও কোথাও কংক্রিটের দেয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে সুরক্ষা জোরদারের চেষ্টা করা হয়। কোথাও খোঁড়া হয় বাঙ্কার, কোথাও আবার স্থাপন করা হয় সীমান্ত চৌকি। ওই পাড়ে তাকালেই দেখা যায়, ট্রাকে করে আসছে সশস্ত্র সীমান্ত রক্ষীরা।

ছমুদা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী তার ও পরিবারের ওপর গুলি চালালে তিনি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু এখানেও খুব ভালো নেই তারা। তিনি বলেন, 'এই আশ্রয় শিবিরে জীবন খুবই কঠিন। খুব গরম, রান্নার জন্য জ্বালানিও পাওয়া যায় না। ইউনিসেফের ডাক্তাররা মাঝে মাঝে আসেন। এছাড়া কোনো চিকিৎসা সুবিধাও পাওয়া যায় না।'

সীমান্তে বিজিপির এই অতিরিক্ত তৎপরতা নিয়ে এর আগে মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, তাদের কাছে তথ্য আছে যে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সন্ত্রাসীরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। তাই তারা অতিরিক্ত সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনজুরুল হাসান খান বলেন, 'গত সাত মাসে আমি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখিনি। আমি শুধু নিষ্পাপ শিশু ও নারীদেরই দেখেছি।'

তবে নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের কোনো সমস্যা নেই। তাদের সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

 

http://samakal.com/whole-country/article/1804969