১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪২

দন্ত-নখরবিহীন প্রতিপক্ষের সন্ধানে ক্ষমতাসীন জোট!

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নানান কৌশল অনুসন্ধান করে ফিরছে। একদিকে তাদের মূল লক্ষ্য হলো প্রধান প্রতিপক্ষকে একটি দুর্বল, পঙ্গু ও অথর্ব প্রতিপক্ষে পরিণত করে তাদের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া এবং এর মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, সংবিধানের ধারা নয়, পুলিশের বিধি-বিধান দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের গণতান্ত্রিক অধিকার।

পর্যবেক্ষকদের অভিমত, বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী জোটকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুর মাধ্যমে চাপে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য বেশকিছু কৌশল হাতে নিয়ে কাজ করছে তারা। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরানোর অবিরাম চেষ্টা চলছে। এর লক্ষ্য, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও যাতে শীর্ষনেতাদের ওপর সন্দেহ ও আস্থাহীনতায় ভোগে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত- এই ধারণাকে অবিরাম প্রচারণার মধ্যে রেখে বিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টাও করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময় যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন তা বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল। আওয়ামী লীগ এখনো বিএনপিকে প্রধান বিরোধী দল মনে করে। রাজনীতির মাঠকে গরম করার জন্য আওয়ামী-মহাজোট নেতারা নিজেদের দলীয় কর্মসূচি প্রচারের চেয়ে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে অবিরাম নিন্দা-তিরস্কারমূলক বক্তব্য প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

‘প্ল্যান সি’র বাস্তবায়ন চলছে?
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, ক্ষমতাসীন জোট পর্যায়ক্রমে পরিকল্পিত কৌশল নিয়ে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলতে চাচ্ছে। ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দীন সরকারের হাত ধরে তারা চার দল তথা ২০ দলীয় জোটকে ক্ষমতার বাইরে রাখার কৌশলে সফল হয়। এর আলোকেই প্রথম দফা ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে কৌশলী আঁতাতে নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়। সেটিকে বলা যেতে পারে ‘প্ল্যান এ’ বাস্তবায়ন। তবু কেবল একটি ‘অস্বাভাবিক’ সরকারের কবল থেকে রক্ষা পেতে সেই নির্বাচনের ফল জনগণ হজম করে নেয়। দ্বিতীয় দফায় ছিলো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন। একটি জননন্দিত ও বিপুলভাবে জনসমর্থিত ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থাকে সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করে দিয়ে ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর মাধ্যমে তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধীজোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের মহড়া দেয়। দেশে-বিদেশে অগ্রহণযোগ্য এই নির্বাচনকে সেসময় সরকারি মহল ‘সংবিধান রক্ষার নির্বাচন’ বলে পার পেতে চেষ্টা করে। এই নির্বাচনের পর থেকে শুরু হয় প্রতিপক্ষ দমনের এবং নির্মূলের যতোসব নির্মম পদ্ধতির বাস্তবায়ন।

সামনে ২০১৯-এর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো ক্ষমতা হাতে পেতে শুরু হয়েছে ‘প্ল্যান-সি’-এর মহড়া। এ পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের প্রধান লক্ষ্য, দন্ত-নখরবিহীন একটি প্রতিপক্ষ তৈরি করা। যাদের সঙ্গে লড়াই হবে একতরফা ও অসম। এর ফলে ভেতর থেকে তা অন্তসারশূন্য হলেও দৃশ্যত নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন প্রত্যক্ষ করা যাবে। ভাষ্যকাররা বলছেন, এবারের পরিকল্পনা-কৌশলের অংশ হিসেবে একদিকে বিরোধীজোটের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক চাপের মধ্যে রাখা হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কারাবন্দী রেখে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলা হবে। নেতা-কর্মীদেরকেও অবিরাম থানা-হাজত-আদালত-জামিনের চক্করে কাটাতে হবে। অন্যদিকে তাদের সভা-সমাবেশগুলো ইতোমধ্যে অত্যন্ত সীমিত ও সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগই দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসবে ততই এই দমন-পীড়নমূলক তৎপরতা জোরদার হবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের কর্মকৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের পর্যবেক্ষণ ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অভিযোগ করে, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমনপীড়ন বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমনিতেই দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক এবং উচ্চমাত্রায় উদ্বেগজনক। তার ওপর ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিক্ষোভে প্রায়শই সহিংস মনোভাব প্রদর্শন করছে দেশের আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো। এ অবস্থায় ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণমূলক। এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নজর দিতে হবে। কমিশন এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলাকে কেন্দ্র করে এবং এই মামলায় পাঁচ বছরের জেল দেয়ার আগে-পরে বিভিন্ন বাহিনী তাদের নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গণহারে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর ৩০ জানুয়ারি থেকে বিরোধী দলের কমপক্ষে ৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, আটক বা নির্যাতন করা হয়েছে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাস ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতনের ফলে দেশটির আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী নির্বাচন হবে সহিংস উপহাসমাত্র। ২০১৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচন প্রায় সবক’টি বিরোধী দলই বর্জন করেছিল। ব্যাপক আকারে সহিংসতা ও হত্যাকা-ের ফলে ওই নির্বাচন হয়েছে বিতর্কিত। এবারও তারই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা বিরাজ করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতার ও বন্দিত্ব বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিএনপি অভিযোগ করছে, খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখতে সরকারি চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাকে জেলে ঢুকানো হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি জার্মান থিংক ট্যাংক বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশন কর্তৃক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশটি (বাংলাদেশ) এখন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনাধীন। ১৩টি দেশকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডায় গণতন্ত্র কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অবনয়নের মধ্য দিয়ে গেছে। ফলে এই ৫টি দেশ এখন গণতন্ত্রের ন্যুনতম মানদ- রক্ষা করতে পারছে না।

দুদককে ব্যবহারের অভিযোগ
এই পরিস্থিতির মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘায়েল করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে তৎপর হয়েছে দুদক। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো চাঙা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ আট নেতার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এছাড়াও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ও অনুসন্ধান চলমান। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেবেন দুদকের কর্মকর্তারা। এরপর অনুমোদন পেলে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে। এসব মামলার পরিণতি বেগম খালেদা জিয়ার মামলার অনুরূপ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। উল্লেখ্য, বেগম জিয়াকে দুদক-এর মামলাতেই সাজা দেয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এগিয়ে নিলেও বিপরীতে দুদকের অনেক মামলায় দায়মুক্তি পেয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী নেতারা। গত ২৫ জানুয়ারি গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দায়ের করা একটি দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস দেন নিম্ন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি দুদক। একজন পূর্ণমন্ত্রী আদালতের দ- মাথায় নিয়ে মন্ত্রীসভায় যথারীতি বহাল রয়েছেন। দুদক-এর ‘তদন্ত’ প্রক্রিয়ায় ‘দায়মুক্তি’ পেয়েছেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মোজাম্মেল হোসেন ও বিটিএমসির সাবেক চেয়্যারম্যান আবুল কালাম। দুদকের দায়মুক্তি পেয়েছেন কক্সবাজারের আলোচিত-সমালোচিত এমপি আবদুর রহমান বদি, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, আ’লীগ নেতা এইচ এম ইকবাল প্রমুখ। ২০১২ সালে বহুল আলোচিত রেলের কেলেঙ্কারির ঘটনায় মন্ত্রী (পরে মৃত) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানই চালায়নি দুদক। আর তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তকেও দায়মুক্তি দেয়া হয়। অভিযোগ থেকে দুদক-এর দায়মুক্তি লাভ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ভাইয়ের ছেলে ও রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। রেলের নিয়োগ-বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাকে পাঁচটি মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়্যারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনেনি দুদক।

বিরোধীজোটকে নিয়ে উভয় সংকট
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোটকে নিয়ে উভয় সংকটে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। একদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ করার চাপ রয়েছে। যেকারণে বিশেষত বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার কোন সুযোগ থাকছে না। অন্যদিকে বিএনপিজোট নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হলে তা ক্ষমতাসীন জোটের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তায় পড়তে হবে তাদেরকে। এমতাবস্থায়, বিএনপিজোটকে নির্বাচনে আসার বিষয়টি মেনে নেয়ার কোন বিকল্প থাকছে না। কিন্তু তাদের সঙ্গে সমান সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে আওয়ামীজোট।

একারণে একমাত্র উপায় হলো যেকোন প্রক্রিয়ায় এই প্রতিপক্ষকে দুর্বল ও পঙ্গু করে ফেলা। এর অংশ হিসেবে বিরোধীজোটে ভাঙন ধরানো, শীর্ষ নেতৃত্বকে অযোগ্য করে নির্বাচনের বাইরে রাখা, নেতা-কর্মীদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলা, তাদেরকে কোন বড়ধরণের প্রদর্শণীমূলক কর্মসূচি সফল করতে না দেয়া, যথাসম্ভব ঘরে ও সংকীর্ণ গলি পথের মধ্যে আটকে রাখা, মামলা নিয়ে থানা-আদালতের বারান্দায় ব্যস্ত রাখা প্রভৃতি কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এই কৌশল বাস্তবায়ন করতে দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।

গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রক পুলিশ!
দেশে বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পুলিশের হাতে অর্পণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবিধানের ধারা নয়, পুলিশের বিধি-বিধানই কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের গণতন্ত্রিক অধিকার। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সংবিধানে প্রদত্ত এই নাগরিক অধিকার পুলিশের ধারার কাছে কাবু হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের সবগুলো দলের জন্য এই অধিকার ভোগের অবাধ সুযোগ উন্মুক্ত থাকলেও বিরোধীজোটের অধিকার পুলিশের ধারা-উপধারার কাছে আটকে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তো বটেই, তাদের শরিক জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ প্রভৃতি অবাধে জনসভাসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। অন্যদিকে বিরোধীদের কার্যক্রম ‘পুলিশের অনুমতি’র শেকলে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতির জন্য সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপি নেতাদেরকে জানিয়ে দেন যে রাজধানীতে জনসভার অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার পুলিশের। জনসভা নিয়ে ‘গোয়েন্দা তথ্য’ থাকায় পুলিশ অনুমতি দেয়নি বলেও জানান তিনি। তবে, কী সেই গোয়েন্দা তথ্য সেটা পরিষ্কার করে বলেননি। এর প্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা রিজভী আহমদ অভিযোগ করেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে, দেশ চালাচ্ছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলেই দেশটা এখন পুলিশের কবজায়। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের যে তকমা পেয়েছে, সেটি অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হলো।’ উল্লেখ্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাধিকবার জনসভার ঘোষণা দিলেও সরকার অনুমতি দেয়নি। এমনকি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও কোনো সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত রাজধানীতে বিএনপিকে বড় ধরণের কোনো জমায়েতের সুযোগ না দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এব্যাপারে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে এধরনের ‘অপকৌশল’ শেষ পর্যন্ত কোন কাজে আসে না। বিরোধীজোট যদি নির্বাচন পর্যন্ত তাদের দৃঢ় ঐক্য ধরে রাখতে পারে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করে নিতে সক্ষম হয় তাহলে চূড়ান্ত সাফল্য তারাই লাভ করবে। আগামী কয়েকটি মাস তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

http://www.dailysangram.com/post/326806