১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:১৭

রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ে চাঁদাবাজিসহ ৫ কারণে : ঢাকা চেম্বার

পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য চাঁদাবাজিসহ পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। অন্য কারণগুলো হলো অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও বাজার মনিটরিং-এ সমন্বয়হীনতা, দুর্বিষহ যানজট এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়। অপ্রত্যাশিত এসব কারণ বন্ধ করা না হলে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা ডিসিসিআইর।

গতকাল রোববার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ে এলাকাভিত্তিক ও বিশেষায়িত ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সাথে মতবিনিময় সভায় এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি আবুল কাসেম খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম এফসিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: জিয়া রহমান প্রমুখ।
সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। রমজান এলেই পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, ইফতার পার্টির নামে চলে চাঁদাবাজি। এতে ব্যবসায়ীদের প্রচুর অর্থ খেসারত দিতে হয়। বাড়তি এ টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকেই তুলে নেয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই রমজানে পুলিশের অপতৎপরতা, দলীয় নেতা ও মাস্তানদের চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করে যানজটের সৃষ্টি করা হয়। এতে সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো যায় না। ফলে দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ স্বাভাবিক রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবারহ ঠিক থাকলে দাম বাড়বে না। এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।

স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল গড়ে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ পরিস্থিতে আসন্ন রমজানে খাদ্যদ্রব্যের দাম আরো বাড়লে আয়-ব্যয়ে সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষ।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বর্তমানে দুই অঙ্কের উচ্চ সুদের হার এবং কোনো কোনো ব্যাংকের ১৬ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি রয়েছে ঋণ পাওয়ার জটিলতা ও অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ। এসব কিছুর চাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে উৎপাদন খরচের সাথে যোগ হয় এবং ভোক্তাকেই শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয়।
আবুল কাসেম খান বলেন, রমজানে ট্যারিফ কমিশন ও রাজস্ব বোর্ড এসব নির্দিষ্ট ভোগ্যপণ্যের ট্যারিফ ও শুল্ক হ্রাস করতে পারে। ব্যবসায়ীরা রমজানে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অন্যান্য মাসের তুলনায় সুলভমূল্যে বিক্রয় করতে পারবে। তিনি পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যবসায়ী সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ও সরকারি সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং আইন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে দেশবাসী যাতে নিরাপদে রোজা পালন করতে পারেন সেজন্যে সরকার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকার এখন থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোনো অসাধু চক্র যাতে কারসাজির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রোজাদারদের কষ্ট দিতে না পাসে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।


 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/310546