১৩ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৮

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদন

‘অ্যালাইনমেন্ট’ ঠিক ছিল না ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের

নেপালের কাঠমাণ্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার বিএস-২১১ ফ্লাইট অবতরণের ঠিক আগ মুহূর্তে অ্যালাইনমেন্ট (নির্দিষ্ট স্থান বরাবর) ঠিক ছিল না। কিছুটা বাঁকা ছিল, যার কারণে রানওয়ে থেকে ছিটকে বাইরে চলে যায় উড়োজাহাজটি। নেপাল সিভিল এভিয়েশনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

দুর্ঘটনার পরপরই নেপাল কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিশন গঠন করে তাতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন সালাহউদ্দিন। সেই সঙ্গে বেবিচকের গঠিত তদন্ত কমিটিরও নেতৃত্বে আছেন তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান ও পাইলটদের লাইসেন্সের তথ্য পাওয়া গেছে, তা নিরীক্ষা শেষে মূল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। বিমানের ব্ল্যাক বক্সসহ অন্যান্য অংশ ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড অব কানাডায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যও মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে যোগ করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তদন্তে দেখা গেছে, ক্যাপ্টেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থান বরাবর (অ্যালাইনমেন্ট) ঠিক রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অ্যালাইনমেন্ট সোজা করতে পারেননি, যার কারণে এয়ারক্রাফটটি রানওয়ে থেকে ঘাসের ওপরে চলে যায়। পরে ঘাসের ওপর দিয়ে বেশ কিছু দূর যাওয়ার পর একটা ছোট ড্রেন আছে, সেটা পার হয়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে নিচু ঢালুর দিকে চলে যায়। আর চাকাগুলো রীতিমতো ঘষতে ঘষতে যায়। আমরা তদন্তে দেখেছি, রানওয়ে থেকে প্রায় ৪২২ মিটার দূরে চলে যায় উড়োজাহাজটি। এরপর আগুন ধরে গিয়ে এটি বিধ্বস্ত হয়।’
ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন জানান, মূল তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হবে দুর্ঘটনা ঘটার এক বছর পর। তবে ৯ এপ্রিল পাঁচ পৃষ্ঠার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নেপালে গঠিত তদন্ত কমিটি। সেই প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার মূল কারণ জানতে বিমানটির ব্ল্যাক বক্সের তথ্য উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করছে তদন্ত কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন সাংবাদিকদের পড়ে শোনান। তিনি বলেন, প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিমানটি অবতরণের শেষ মুহূর্তে ককপিটের সঙ্গে বিমানবন্দরের টাওয়ারের যোগাযোগের সমস্যা ছিল। তবে কী ধরনের সমস্যা এটি আরো পরিষ্কার হবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য উদ্ধারের পর। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আসলে নেপালের কন্ট্রোল টাওয়ারের রেকর্ড শুনেছি। একেবারেই শেষের দিকে আমরা কনভারসেশন পাইনি। আমরা দেখেছি, ককপিট থেকে একটা কথা বলছে, ওভারল্যাপিং ডিস্টার্বেন্সের জন্য কন্ট্রোল টাওয়ার তখন বলেনি। কিন্তু আদৌ কি বলেনি, এটি পরিষ্কার হবে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার পাওয়ার পর। তারপর আমরা অ্যানালিসিস করে বের করব, আবার জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেন, ‘উড়োজাহাজটি অবতরণের চেষ্টা করে দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে, যদিও বিমানটি রানওয়ের বাইরে চলে যায়। পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রানওয়ের ৪৪২ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এরপর বিমানটিতে আগুন ধরে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। অবতরণের সময় অ্যালাইনমেন্ট ঠিক ছিল না।’

ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেন, বিমানে আগুন ধরার দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। উদ্ধারকাজে চারটি বড় ফোম টেন্ডার, একটি মাঝারি ফোম টেন্ডার ও দুটি পানির ট্যাংক অংশ নেয়। নেপালে ওই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয় গত ১২ মার্চ। কমিশন প্রত্যক্ষদর্শী, উদ্ধারকর্মীদের বক্তব্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/04/13/624754