১৩ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২৫

প্রথম পাতা

ভিসির বাড়িতে হামলা নিয়ে নানা প্রশ্ন

ভিসির বাড়িতে হামলার ঘটনায় অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলছে না। ঘটনার সময় পুরো এলাকাজুড়ে পুলিশ-গোয়েন্দারা ব্যাপক তৎপর থাকলেও কেউ বলতে পারছে না কে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলার পর তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে; কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয়নি।

কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে শিার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হঠাৎ করেই ৮ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের বাসভবনে মুখোশধারীরা হামলা চালায়। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে যা নজিরবিহীন। জানা গেছে, কালো মুখোশধারী ও হেলমেট পরিহিত হামলাকারীরা ভিসির বাসভবনের প্রধান ফটক ভেঙে বাসায় ঢুকে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, বাসার ভেতরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভেঙে লণ্ডভণ্ড করে, আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে ফেলে বাসার মালামাল। ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে এভাবে পুরো বাসভবনে তাণ্ডব চালানো হয়। ভিসির বাসভবনের ফুলের টব থেকে শুরু করে কোনো কিছুই অক্ষত ছিল না দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে। প্রশ্ন জেগেছে কারা এই তাণ্ডব চালালো? এত সুরক্ষিত স্থানে হামলা ও ৪০ মিনিটের ওপরে তাণ্ডব চালিয়ে দুর্বৃত্তরা কিভাবে পার পেল? কিভাবে কোনপথে তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হলো? ঘটনার পর থেকে এই প্রশ্নগুলো সবার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু ক্যাম্পাসই নয়, ক্যাম্পাসের বাইরেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সবাই জানতে চাইছে আসলে এই অপরাধী কারা। ভিসি নিজেও বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই হামলা চালিয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। যারা আন্দোলন করেছেন তারা স্পষ্টভাবে এই হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছেন। সেখানে ভিসির বাসভবনে হামলার প্রশ্নই আসে না।

এ দিকে ভিসির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে শাহবাগ থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলা হয়েছে ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। শাহবাগ থানায় গত ১০ এপ্রিল দায়েরকৃত এই মামলাটির নম্বর ২০। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা শতাধিক দুর্বৃত্ত এই হামলা চালিয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ভিসির প্রাণনাশের চেষ্টা ও আনুমানিক দেড় কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে দুষ্কৃতকারীরা ওই রাতে দু’টি গাড়ি পুরোপুরি পুড়ে ফেলেছে এবং আরো দু’টি ভাঙচুর করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এমনিতেই ভিসির বাসভবন সুরক্ষিত। স্বাভাবিক সময়েও তার বাসার সামনে পুলিশের একটি ভ্যান থাকে। যেখানে সব সময় অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন থাকে সার্বক্ষণিক। এ ছাড়া গোয়েন্দাদের নজরদারি থাকে। আর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিসির বাসার নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছিল। মোতায়েন ছিল গোয়েন্দা সদস্যরাও। প্রশ্ন জেগেছে এর মধ্যেও কিভাবে দুষ্কৃতকারীরা ভিসির বাড়িতে প্রবেশ করল। ভিসির বাড়িতে এভাবে ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চললো, ভাঙচুর হলো, আগুন জ্বললো; কিন্তু কেউ টের পেল না! রাস্তার পাশেই বাসভবনটি। এত ঘটনা কারো চোখে পড়লো না! তাণ্ডব চালানোর এত সময় পেল কোত্থেকে? হামলাকারীরা মুখোশ আর হেলমেট পরা ছিল কেন? অনেকেই বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে? এমনকি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও অনেক সদস্য এই পরিকল্পনার কথা বলেছেন? তাহলে কারা এই পরিকল্পনা করেছিল?

শাহবাগ থানা পুলিশ বলেছে, এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ভিসির বাসার ক্ষতবিক্ষত সিসি ক্যামেরার ডিভাইস তারা উদ্ধার করেছে; কিন্তু শনাক্ত করে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে দুষ্কৃতকারীরা শনাক্ত না হওয়ায় ক্রমেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ডালপালা মেলছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/309914