১২ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৬

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ

সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকার আন্দোলনের প্রতি সংহতি ও একাত্মতা জানিয়ে গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি এবং সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। তারা ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে কাস-পরীা বর্জন করে দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করেন। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়। হবিগঞ্জে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সারা দেশে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আসার পর সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার বেলা ১১টার পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থান গ্রহণ করলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেলে অবরোধ তুলে নেয়ার প্রাক্কালে আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের আন্দোলন তখনই সফল হবে যখন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তাই এখনই আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে তা বলতে পারছি না। আন্দোলনকারীরা বলেন, আমাদের দাবি ছিল কোটাপদ্ধতি সংস্কার করা, বাতিল করার দাবি আমাদের ছিল না।

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আন্দোলনকারীদের ওপর ােভের বহিঃপ্রকাশ উল্লেখ করে তারা বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ওপর শুধু ােভ প্রকাশ করেই কোটাপদ্ধতি বাতিল করেছেন বলে ঘোষণা দেন। তারা বলেন, আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী হবে। তাই কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা আসার পর আমরা আমাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে দেবো।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গতকাল শাটল ট্রেন অবরোধ ও কাস বর্জনের পর পুলিশি বাধা উপো করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন শিার্থীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিার্থী ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় আসেন। তারা পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে দুই নম্বর গেটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে শিার্থীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

শত শত শিার্থী রেললাইন অবরোধ করলে সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখী শাটল ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশন অতিক্রম করতে পারেনি। পরে ঢাকায় কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণার পর তারা রেললাইন থেকে সরে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো: আরজু বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাস বর্জন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে কাস বর্জন করে রাজশাহীতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) শিার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেন। মহাসড়ক থেকে এ কর্মসূচি কখন তুলে নেয়া হবে তা আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে রাবির শিা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, এ আন্দোলন সরকারবিরোধী নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও নই। কোটা সংস্কার আন্দোলনটি ন্যায্য।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, কোটাপদ্ধতির সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে দুপুর সোয়া ১২টায় কলেজের সামনের ঢাকা-বরিশাল মহসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিার্থীরা। এতে বরিশাল থেকে দণিাঞ্চলের সব জেলায় প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিার্থীরা ক্যাম্পাসে বিােভ মিছিল ও ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করেন।

বেলা ১১টায় কাস ও পরীা বর্জন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিােভ করেন। এতে করে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলায় যান চলাচল দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
ময়মনসিংহ অফিস ও বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গতকাল শিার্থীরা কাস-পরীা বর্জন করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিােভের পাশাপাশি রেললাইন অবরোধ করেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সমিতি আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করছে। বেলা ১টায় বাকৃবি রেললাইনে দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মকা প্রকাশ করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস মাহফুজুল বারি।
শিার্থীরা কাস বর্জন করে বলেন, পাঁচ দফার বিষয়ে পরিষ্কার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা কাস করব না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আশ্বাস চাই না, আমাদের দাবি মানতে হবে।
যশোর অফিস জানায়, যশোরে সাধারণ ছাত্রছাত্রী অধিকার সংরণ পরিষদের ব্যানারে বিােভ হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরে কয়েক শ’ শিার্থী বিােভ করেন। এরপর তারা মুজিব সড়কে প্রেস কাব যশোরের সামনে অবস্থান নেন।

এর আগে সকাল ১০টায় পরীক্ষা ও কাস বর্জন করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অবস্থান কর্মসূচি ও ভিসিকে স্মারকলিপি দেন শিার্থীরা। তারা কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরূপ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।
রংপুর অফিস জানায়, বুধবার দুপুরে রংপুর মহানগরীর প্রেস কাবের সামনে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেস কাবের সামনে রাস্তায় বসে যান। এ সময় বক্তব্য দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক ওয়াদুদ সাদমানসহ নেতৃবৃন্দ।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিােভ করেছেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ও কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের শিার্থীরা। প্রায় একই সময় গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকের সামনে বিােভ করেছেন। শিার্থীদের বিােভ ও অবেরাধে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিার্থী বিপ্লব শেখ জানান, সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে মন্ত্রীরা যেভাবে কথা বলছেন তা দুঃখজনক।
গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। সকালে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড় এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শাবি সংবাদদাতা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কাস-পরীক্ষা বর্জন করে বুধবার সকাল ৭টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন এক কিলো রোডে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় ফটকের বাইরে এসে সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডের পাশে ফটক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ আন্দোলনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সবাই পাশে আছেন বলে জানান।

দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট অভিমুখে পদযাত্রা করেন। সেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তা অবরোধ করেন।
ছাত্রলীগের প্রতি ড. জাফর ইকবাল : এ দিকে বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে কোটা সংস্কার নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিশিষ্ট লেখক ও ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাফর ইকবাল। তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সঙ্ঘাতে না জড়াতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানান।
আন্দোলনে ভিসির সমর্থন : এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমি চাই মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হোক। সরকার এ দাবি অবশ্যই বিবেচনা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জে বিােভ ও সড়ক অবরোধ করার সময় শিার্থীদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। এতে নারী শিার্থীসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেনÑ কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম, রিয়াদুস সালেহীন রিয়াদ, তানভীর, পাপিয়া আক্তার ও মাহবুবুর রহমান।
পুলিশি বাধা উপো করে শিার্থীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদণি শেষে সরকারি গুরুদয়াল কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে সংপ্তি সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে মিছিলে বিনা কারণে পুলিশি হামলার নিন্দা জানান বক্তারা।
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জে সাধারণ শিার্থীদের মানববন্ধন ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে। দুপুরে সাধারণ শিার্থীদের ব্যানারে সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধন শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলে শিার্থীদের সাথে বাগি¦তণ্ডা হয়। এ সময় শির্থীদের ছাত্রলীগ ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে সোহেল আহমদ ও আলামিন হোসেনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি জানান, সাধারণ শিার্থীদের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতাকর্মী উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করেছে।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বিােভ-আন্দোলন চলেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ, কমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লøা সরকারি মহিলা কলেজের শিার্থীরা এতে অংশ নেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না আমরা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এ আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় এবং করটিয়ায় সা’দত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।
বুধবার দুপুরে মাথায় কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ সময় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাসেল কবির ও আব্দুল বাছেদ, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের মিজানুর রহমান, ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের আবির আহমেদ, নাজমুল হাসান ও আরিফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
অপর দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের লিংক রোড করাতিপাড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সরকারি সা’দত কলেজের শিার্থীরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ করটিয়া সা’দত কলেজের শিার্থী সাইফুল্লাহ, রিয়াদ, আল আমিন, শাকিল আহমেদ প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা জানিয়ে বিােভ, মানববন্ধন ও পথসভা কর্মসূচি পালন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার দুপুরে স্থানীয় প্রেস কাবের সামনে উপজেলার নবীনগর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। এর আগে র্যা লি ও পথসভা হয়।
পথসভায় কলেজছাত্র জহিরুল ইসলাম শাহিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দিপু আহম্মেদ, শাহিন আহম্মেদ, আরিফুল ইসলাম রুবেল, আপেল, সাইদুল, মুন্নি আক্তার, নিলুফা আক্তার, আবিদ হোসেন প্রমুখ।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর হাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাস বর্জন করে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে দিনাজপুরের সাথে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় কোনো বিভাগে কাস কয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি বুধবার।

দুমকি (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, আন্দোলনের তৃতীয় দিনে গতকাল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জয়বাংলা ভাস্কর্য চত্বরে রাস্তা দখল করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সমাবেশে আন্দোলনরতদের অন্যতম মুখপাত্র ফিশারিজ অনুষদের মাস্টার্স পর্বের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন, শিক্ষার্থী ইভান, মাজেদুল, রুবেল, আল আমীন, উর্মি, কলি প্রমুখ। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ইবি সংবাদদাতা জানান, আন্দোলন প্রতিরোধ করতে আসা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পানি পান করালেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ সদস্যদের হাতে গোলাপ ফুলও দেন ইবির আন্দোলনকারীরা। বুধবার খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে এমনটিই দেখা যায়। তবে অবরোধের আওতামুক্ত ছিল অ্যাম্বুলেন্স।

বেলা ২টায় আন্দোলনে সফলতার বাতাস বুঝতে পেরে অবরোধস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে সহমত পোষণ করেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে ইবি শিক্ষক সমিতি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সমর্থন জানানো হয়।
এ দিকে কোটা আন্দোলনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের ছাত্রসমাজের সাথে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ইবির আন্দোলনকারীরা।

সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলছে। গতকালের আন্দোলনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে জাবি ক্যাম্পাসসহ বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা অবরোধে অংশ নেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও ঢাবির বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী এশার বিরুদ্ধেও স্লেøাগান দিয়েছেন।
জাবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার, সংসদে কৃষিমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্য ও আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো কাস-পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে থেকেই বিপুল পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান করলেও প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিরোধে তারা ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যায়। এ দিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে যৌক্তিক ও সময়োপযোগী দাবি করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে সরকার ও নীতি প্রণেতাদের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, ছাত্রনেতা দীপাল ভট্টাচার্য, ফয়সল আহমেদ, আসাদ মণি, মো: আলীউজ্জামান, মলয় চন্দ্র কর, দুর্জয় দাস, হাবিবুর রহমান হাবিব, আলমগীর কবির, রিয়াদ আহমেদ, লিটন বর্মণ, প্রান্ত চন্দ, জুঁই দাস, তুষার, শাফিক, সালাউদ্দিন, তোফাজ্জল, হারুণ, মেহেদী হাসান ও গৌতম প্রমুখ।

গোপালগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু ও রাস্তার ওপর বাঁশ, ইট-পাটকেল ফেলে ব্যারিকেড দেন ।
দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, পুলিশ সুপার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের সাথে সমোঝতার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। বেলা দেড়টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/309703