১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ৫:০৪

মাদকের ছোবলে বাড়ছে অপরাধ

মাদকের ভয়াল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে দেশ। বাড়ছে নানা মাত্রার অপরাধ। যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের জেলা, উপ-জেলা শহরেও বাড়ছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা। বিশেষ করে মাদকাসক্ত কিশোরেরাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছে। মাদকের কারণেই সমাজের উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে নানা মাত্রার অপরাধে। মাদকের সহজলভ্যতাই অধিকহারে বিপথগামী হচ্ছে উঠতি বয়সী কিশোরেরা। রাজধানীর অভিজাত আবাসিক হোটেল, চায়নিজ হোটেল থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লা ও অলি গলিতেও হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। মাসকাসক্ত সন্তানের হাতে খুন হচ্ছেন বাবা-মা, ভাই বোন ও সহপাঠী। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, ভারতীয় টিভি চ্যানেল, অশ্লীল ও নগ্ন বিদেশী ফিল্মসহ অপসংস্কৃতির করালগ্রাসে কিশোর-কিশোরীরা বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা অঢেল টাকা এবং সহজলভ্য মাদকের ছোঁয়ায় বিপথগামী হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, টুইটারসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কিশোর অপরাধীরা দ্রুত সংগঠিত হয়ে নানা অপরাধ করে। আবার মুহূর্তেই ঘটনাস্থল থেকে এরা সটকে পড়ছে। অত্যাধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের খুব কম সময়ের মধ্যে কিশোররা যে কোন সময় একত্র হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যে কারণে অনেক সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে অনাদর-অবহেলায় বেড়েওঠা কিশোরেরাও সহজলভ্য মাদকের ছোবলে বিপথগামী হচ্ছে। এছাড়া ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবেও যুবক-যুবতীসহ কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। পাল্টাছে অপরাধের ধরন। আগে মাদক সেবীরা টাকার জন্য নিজ পরিবারের সদস্যদের সাথে বিবাদে জড়িত হলেও এখন তারা চুরি, ছিনতাই, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
এদিকে র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কিশোর অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওরা প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ছে। হত্যাকা- ঘটিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে বীরদর্পে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। পাড়া-মহল্লায় গ্রুপ বেঁধে চলাফেরা করে ওরা। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় লিপ্ত থাকে। স্কুল-কলেজের মেয়েদের দেখলেই নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি না থাকায় তারা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রহমান বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব অন্য সবার মতো কিশোরদেরও আক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, এ জন্য কিশোরদের বেশি করে কাউন্সেলিং করার প্রয়োজন। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার জন্য অতিরিক্ত আদর ও স্নেহ, অতিশাসন, পারিবারিক দাম্পত্য-কলহ, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ, পিতা-মাতার অতি উচ্চাশা, নিরাপত্তাবোধের অভাব অন্যতম কারণ।
কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠছে বখে যাওয়া কিশোর অপরাধীরা। মাদক, চুরি-ছিনতাই, খুন ও অস্ত্রবাজির মত ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধীরা। পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া কিশোরেরা শুধু মাদক সেবনই করছে না অস্ত্রবাজিতেও জড়িত রয়েছে। অন্যদেরও মাদক সরবরাহ কাজে নিয়োজিত আছে এসব কিশোরের দল। বিশেষ করে ইয়াবা সেবনের পাশপাশি ইয়াবা বিক্রিও করছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফুটপাথের ছিন্নমূল কিশোর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর অপরাধে। খুন-খারাবি চুরি, ছিনতাই অপহরণ, মাদক কেনা-বেচা এবং অস্ত্র ব্যবসায় পর্যন্ত কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে । রাজধানীতে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৩৪৫ কিশোর অপরাধীর বেশির ভাগই ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ দাবী করছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কিশোর অপরাধীদের ব্যবহার করছে। আছে রাজনৈতিক দলের বড় ভাইদের মদদ। কাঁচা টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দলে ভিড়ানো হচ্ছে। অনেকে ভাল ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ও উচ্চবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তানরা বখাটে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অপরাধ জগতে পা রাখছে। সন্ত্রাসীরা নিরাপদ ভেবে এসব কিশোরদের ক্ষুদ্র অস্ত্র বহন ও অস্ত্র ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে। মাদক ব্যবসায়ীরাও কিশোর অপরাধীদের মাদক বিক্রি ও বহনের কাজেও ব্যবহার করছে।
কিশোর অপরাধার বাড়ার কারণ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমোনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, কিশোর অপরাধ দমন করতে পরিবার ও স্কুল কলেজের শিক্ষকদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা তা পালন করতে তারা ব্যর্থ। ফলে দিন দিন কিশোর অপরাধ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। পারিবারিক মূল্যবোধ ও অনুশাসন না থাকা এবং পারিবারিক বন্ধন না থাকার জন্যই কিশোররা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার মতো ভয়ানক ৩৫০ কিশোর অপরাধী রাজধানীতে রয়েছে। এদের অধিকাংশ বেড়ে উঠছে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মহিলা মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। এমন কি টাকার বিনিময়ে খুন-খারাবির মতো রোমহর্ষক সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে এসব কিশোর অপরাধীরা। দেশের ৫৭টি কারাগার ও ৩টি সংশোধন কেন্দ্রে বিভিন্ন অপরাধের কারণে প্রায় ৭৮০ কিশোর আটক রয়েছে।
জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে ওরা ব্যবসায়ী, ফুটপাত ও হকারদের কাছ থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে কিশোর অপরাধী পিয়াস গ্রুপের সদস্যরা প্রতিপক্ষ মিরাজ গ্রুপের মাহিদুল ইসলাম ইমনকে ছুরিকাঘাতে খুন করে। চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যাকা- ঘটেছে। এলাকার আধিপত্য ও চাঁদা আদায় করা নিয়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর কদমতলীতে বর্ণমালা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র রিয়াদুল, মেহেদি হাসান ও আহাদকে ছুরি মেরে আহত করা হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর কামরাঙ্গীরচরে দুই কিশোরের হাতে খুন হয় আলিফ নামের এক কিশোর। ৪ ডিসেম্বর রাতে লালবাগে রবিন নামের এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে আবু সালেহ রাব্বী নামের আরেক কিশোর খুন হয়।
২০১০ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে রাজধানীতে এক হাজার একশ’ কিশোর অপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ডিএমপির উত্তরা জোনে ১০ জন, ওয়ারীতে ১৪৪ জন, মিরপুরে ১০৬ জন, মতিঝিলে ৭৫ জন, রমনায় ৫ জন, লালবাগে ৩৬ জন, তেজগাঁওয়ে ৪৬ জন ও গুলশানে ৪৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়।
১৮ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবদুল আজিজ (১৭) নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তারই খেলার সাথীরা। পুলিশ বলছে, কে কার বড় ভাই এ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে খুন হয় আজিজ।
১৫ জানুয়ারি রাজধানীর শাহ আলী বালুর মাঠ এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে কামাল হোসেন (১৫) নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের চাপাতি ও হকিস্টিকের আঘাতে নির্মমভাবে খুন হয় আদনান (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্র।
৫ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তর খান বাওয়ারটেক এলাকার একটি জলাশয় থেকে মেহেদী হাসান মুন্না (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে উত্তরখান থানা পুলিশ। সে আলিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। এ ঘটনায় জীবন (২০) নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। গত বছরের ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল মুন্না।
১ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প আল বশির মসজিদের সামনে সমবয়সী কয়েক সহকর্মীর ছুরিকাঘাতে আসিফ (১৮) নামে একজনের মৃত্যু হয়।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকে একটি সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুপের দ্বন্দ্বে বখাটে চক্রের হাতে খুন হয় মেহেদী হাসান নামে সম্ভাবনাময় এক কিশোর ক্রিকেটার। সে ছিল অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় এবং মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ২৯ নভেম্বর কামরাঙ্গীরচরে দুই কিশোরের হাতে খুন হয় আলিফ নামে এক কিশোর।
গত বছর ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কদমতলীতে এক কিশোরের হামলায় রিয়াদুল, মেহেদি হাসান ও আহাদ নামে তিন কিশোর ছুরিকাহত হয়েছে। এরা রাজধানীর কদমতলী থানার ধনিয়া বর্ণমালা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। আর হামলাকারী কিশোর সাব্বির হোসেন ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। তাকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত প্রিভিলেন্স অব মেটাল ডিজঅর্ডার, এপিলেপসি, মেন্টাল রিটার্ডেশেন এ্যান্ড সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ অ্যামাং চিলড্রেন অব ঢাকা ডিভিশন’ শীর্ষক জরিপ তথ্যতে বলা হয়েছে, মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। সর্বনাশা এক নেশা। মাদকসেবী নিজেকে ধ্বংস করার পাশাপাশি একটি পরিবার, সমাজ, পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। সোনালি ভবিষ্যতকে অন্ধকার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় মাদক। মাদক গ্রহণের ফলে এক সময়ের ভাল মানুষটি হয়ে যায় সব থেকে খারাপ ও জঘন্য মানুষ। মাদকাসক্তির শেষ পরিণতি হলো মৃত্যু। মাদকাসক্ত হওয়ার ফলে আগামীর ভবিষ্যৎ ক্রমশ ভিত্তিহীন ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিস্তর ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ সকল অনৈতিক অনাচারের পেছনে রয়েছে মাদকের অশুভ শক্তির কালো হাত। শিশু কিশোররাই আগামীর ভবিষ্যৎ। বর্তমানে এরাই বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে। রাজধানী শহর ঢাকাসহ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে মাদক সেবা করা হয়। শিশু কিশোররা বিভিন্ন শ্রমে নিযুক্ত হয় আর শ্রমে যুক্ত থাকার ফলে বিভিন্ন সঙ্গ পেয়ে এরা বিপথে পা ফেলে। নেশার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে যেকোনমূল্যে মাদক ক্রয় করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। টাকার জন্য তখন শিশু কিশোররা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-, মাদক দ্রব্য পাচারসহ অবৈধ কাজে নিজেকে যুক্ত করে। কাজের বিনিময়ে তখন এরা নেশার উপাদান সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশের পথশিশুরা ড্যান্ডি, সীসা, ইয়াবা, প্যাথেডিন, পোড়া মবিল, আফিম, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন নামের বিষাক্ত মাদক সেবনে অভ্যস্ত যা মানব দেহের স্বাস্থ্যের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর।
রাজধানী শহর ঢাকায় মাদকাসক্ত শিশুর ১৭ শতাংশই মেয়ে। নানাবিধ অসঙ্গতি আর পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামোগত নিরাপত্তাহীনতাই মেয়েদেরকে মাদকে আসক্ত করছে। ভবঘুরে, ভাসমান পতিতা বা পথশিশুদের মাঝেই মাদক সেবন সীমাবদ্ধ নয় বরং ধনী বা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরাও আসক্ত হয়ে ওঠছে মাদকের ছোবলে। পরিবারের নিজের মূল্যহীনতা কিংবা বা মায়ের বিচ্ছেদ অথবা বন্ধুর সাথে কৌতূহলবশত মাদক নিতে গিয়ে চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে এরা। মধ্যবিত্ত, ধনী শিশুরা সিগারেট ও ইয়াবায় আসক্তের সংখ্যাই বেশি। আধুনিকতার নামে অসভ্যতায় বেড়ে ওঠা উচ্ছৃঙ্খল তরুণী- তরুণরাও আকৃষ্ট হয়ে পা বাড়াচ্ছে নেশার জগতে। রক্তে যাদের নতুন জোয়ার এরাই গা ভাসিয়ে দেয় মাদক নামক এক ভয়ংকর পথে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশের শিশু আইন ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু বলে গণ্য হবে। ১৮ বছরের কমবয়সীদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির নিষেধ রয়েছে তবে সমাজের অসাধু স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় কমবয়সীদের কাছে বিভিন্ন মাদকজাত দ্রব্য বিক্রি করছে। আইন আছে প্রয়োগ নেই এমন দেশ এই বাংলাদেশ। বিভিন্ন তথ্যমতে- জনসংখ্যার মোট শতকরা ৪৫ শতাংশ শিশুই। আবার এসব শিশুদের ৪০ শতাংশই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে থাকে। দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ হলো এসব শিশুরা। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু। এদের শতকরা ৮০ভাগই ঢাকায় বসবাস করে। তারপরও এরাই অবহেলিত এরাই অবাঞ্ছিত।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুসারে পথশিশুদের মধ্যে ৮৫ ভাগই বিভিন্ন ভাবে মাদক গ্রহণ করে থাকে। ৪৪ শতাংশই ধূমপান, ২৮ শতাংশ ট্যাবলেট, ১৯ শতাংশ হেরোইন ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা সেবন করে। ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণ করতে গিয়ে মরণব্যাধি এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
শিশু অধিকার ফোরাম, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রে ও টিএইচ নেদারল্যান্ড যৌথ পরিচালনার এক জরিপে তথ্য দেখা গেছে, রাজধানী শহর ঢাকায় সর্বনিম্ন ২২৯ টি স্পট রয়েছে যেখানে ৯-১৮ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন মাদক নেশার দ্রব্য সেবন করে। ঢাকার ২১ টি স্থানে ইনজেকশনের মাধ্যমে,৭৭ টি স্থানে হেরোইনের মাধ্যমে এবং ১৩১ স্থানে গাঁজা সেবন করে থাকে। বিভাগীয় শহর সিলেট নগরীর লাক্কাতুরা, তারাপুর চা বাগানের বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে মাদকের আস্তানা। এছাড়াও সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশন,শাহজালাল উপশহর, টিলাগড়, মেজরটিলা, টুকেরবাজার, ক্বীন ব্রীজ, লামাবাজার, শেখঘাট কদমতলী বাস টার্মিনাল, চাঁদনী ঘাট, কালিঘাট, কাষ্টঘর, শহরতলীর সাহেবের বাজারসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় গলিতে রাস্তার মোড়ে প্রায়ই চোখে পড়ে নেশাপ্রেমী পথশিশুদের ।
- See more at: https://www.dailyinqilab.com/article/63631/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A7