১১ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৭:৫৫

ন্যাশনাল ব্যাংককে জরিমানা

বিদেশে বেআইনিভাবে অর্থ রাখা

বিদেশে বেআইনিভাবে অর্থ রাখায় ন্যাশনাল ব্যাংককে জরিমানা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ১০৯(১১) ধারায় এ জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে অবস্থিত ব্যাংকটির মানি ট্রান্সফার প্রাইভেট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত মুনাফা দেশে আনছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরও রহস্যজনক কারণে ব্যাংকটি সে বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এবং অনুমোদন না নিয়েই আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের মুনাফা সিঙ্গাপুরে রেখে দেয় ব্যাংকটি। বারবার নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় ব্যাংকিং শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে। ব্যাংকিং শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরের বলাকা এক্সচেঞ্জ হাউজ কেনে ন্যাশনাল ব্যাংক। তিন লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় দুই কোটি টাকা) বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া হয় এনবিএল মানি ট্রান্সফার প্রাইভেট লিমিটেড। লাইসেন্স দেয়ার সময় নিট মুনাফার অংশ দেশে আনার শর্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালে অর্জিত নিট মুনাফার সব অর্থ মূলধন হিসেবে সিঙ্গাপুরে রাখার অনুমোদন চায় ন্যাশনাল ব্যাংক। ওই বছরে দুই লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার রেখে বাকি অর্থ দেশে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নির্দেশ অমান্য করে ন্যাশনাল ব্যাংক।

এরপর গত ২০১৫ সালে দুই লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার নিট মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়েই অর্থ সিঙ্গাপুরে রেখে দেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় অর্থ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এর পরও ন্যাশনাল ব্যাংক অনুমোদনও গ্রহণ করেনি এবং ওই অর্থ দেশেও আনেনি। এভাবে প্রায় তিন লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় দুই কোটি টাকা) দেশে আনেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ওই অর্থ দেশে ফেরত আনতে চার দফা নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নির্দেশনা একবারও মানেনি এবং মানার উদ্যোগও গ্রহণ করেনি ন্যাশনাল ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, ধারাবাহিকভাবে লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করে আসছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে ব্যাংকটি। এটি ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার পরিপন্থী। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাকে অমান্য ও শৃঙ্খলা নষ্টকারী কোনো কাজ করলে ব্যাংক কোম্পানি আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ ধারায় বলা হয়েছে, ১৩, ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩৩ ধারার কয়েকটি বিধিবিধান ছাড়া অন্য কোনো ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে বা কোনো আদেশ-নির্দেশ বা শর্ত লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। এই জরিমানার নির্দেশ অমান্য করলে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ধারা মোতাবেক ন্যাশনাল ব্যাংকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তা পরিশোধের জন্য ১৪ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে। গত ২১ মার্চ এ-সংক্রান্ত চিঠি ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে এই অর্থ কেটে নেয়া হবে। তবে এই অর্থ পরিশোধের জন্য সময় বৃদ্ধি বা মওকুফের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তা অবশ্যই ১৪ দিনের মধ্যেই করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/309414