১০ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:১৯

বালিয়াকান্দির পাঁচ নদী মৃতপ্রায়

বিপর্যয়ে কৃষি অর্থনীতি

যে নদীর বুক দিয়ে এক সময় চলত সারি সারি নৌকা সেই নদীগুলো এখন যৌবন হারিয়ে পানির অভাবে মৃত। ইতিহাসের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগুলোর অস্তিত্ব। প্রতিবেশী দেশের ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোত্সব দিন দিন গ্রাস করছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার এক সময়ের বহমান প্রমত্ত গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদীকে।

ফারাক্কার হিংস্র ছোবলে আজ এই পাঁচটি নদী নাব্য হারিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। এখন এই নদীগুলো শুধুই ইতিহাস। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে এখন নদীগুলোর বুকে বিশাল বালুচর পরিণত হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিগত বছরগুলোয় গড়াই নদীতে একটা ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার পানি কমে যাওয়ার আগেই তা নেই। ফলে এই নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকায় এ অঞ্চলের পরিবেশ এবং কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়।

বালিয়াকান্দির এই নদীগুলোর উত্সমুখ পদ্মা নদীতে হওয়ায় আজ মানচিত্র থেকে পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা নদী গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদীগুলোতে বারো মাস পানিশূন্য থাকায় এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বর্ষাকালে এসব নদীতে কিছুদিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই থাকে পানিশূন্য। আর পানিশূন্য থাকায় স্থানীয় একশ্রেণির প্রভাবশালী দখলদার নদীর দুই পাশ দখল করে নিয়েছে। চন্দনা নদীর দুই পাশে রয়েছে অবৈধ দখলদার। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তা কোনো কাজেই আসছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই ও চন্দনায় মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে বিশাল আকৃতির বালুচর। নদীতে নেই স্রোত, নেই কোনো গভীরতা। অনেক জায়গায় নদীগুলোর বুক দিয়ে বয়ে চলছে বালুবোঝাই ট্রাক ও ট্রলি। অনেক কৃষক আবার জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছে। শুধু দেখা মেলেনি নদীতে মাছ ধরার সারি সারি নৌকা ও জেলেদের জাল। নদীগুলো মরে যাওয়ায় আজ এ অঞ্চলের কৃষি, বাণিজ্য, মত্স্য সম্পদ ও পরিবেশ হয়েছে বিপন্ন। হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির অর্ধশতাধিক মাছ। কৃষি ও মত্স্যজীবীরা আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গা ব্যারেজ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেটির স্থান প্রাথমিকভাবে জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুরে নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রজেক্টের স্ট্যাডিসহ কিছুটা কাজও হয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে বর্তমানে প্রজেক্টটি স্থিতিশীল রয়েছে। এ প্রকল্পটি চালু হলে পদ্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব শাখা নদী ফিরে পাবে তাদের অতীত যৌবন। ব্যাপক উন্নয়ন হবে এ অঞ্চলের মত্স্য ও কৃষি অর্থনীতিতে। তা ছাড়া বালিয়াকান্দির ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীসহ সব নদী খনন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক বদিউজ্জামান জানান, আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবের কারণেই আজ এই নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হলে দ্রুত খনন কাজ শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা জানান, জেগে ওঠা নদীর দুইপাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং বালু উত্তোলন বন্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নদীগুলো যাতে দখল না হতে পারে সে জন্য আমরা সজাগ রয়েছি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমান সরকার মৃত নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বালিয়াকান্দির চন্দনা নদীটি পুনঃখনন করা হয়েছে। গড়াই নদীর খনন কাজটি কুষ্টিয়া থেকে শুরু হয়েছে।

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/04/10/153408.html