১০ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:০৬

প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে চলছে প্রতারণা

প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে এবার চলছে প্রতারণা। প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্য। এসব দুর্বৃত্তের কবলে পড়ে অনেকে অর্থকড়িও খোয়াচ্ছেন। তবে কোনো কোনো কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্র কন্ট্রাক্টের। ভাড়া করা ভবনে পরীক্ষা কেন্দ্র বসানোরও অভিযোগ উঠেছে। যে দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী বসানোর কথা সেখানে দু’জন বা তারও বেশি শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতারক গ্রেফতারের খবর দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব প্রতারক প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা বলে প্রতারণা করে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতানোর চেষ্টা করছে। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়কারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১। র্যাবের অপর দু’টি অভিযানে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো দু’জনকে। গত রোববার কুমিল্লার মুরাদনগর ও দিনাজপুরের খানসামা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এইচএসসি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়কারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত ৭ এপ্রিল মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার দাসকান্দি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এক প্রতারককে। গত ৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাগমারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জনি নামের একজনকে। একই দিন পাবনার সুজানগর থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো একজনকে। ৩ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করে এক প্রতারককে। একই দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে এবং শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো একজনকে।

এ দিকে ডিবি পুলিশ গতকাল চারজন এবং ৭ এপ্রিল ১১ জনকে গ্রেফতার করে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসির ছেলেকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃত মো: এহসানুল কবির রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়ায় ছেলে বলে জানা যায়। তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি থানার গোরিয়ালি গ্রামে। ঢাকায় এহসানুল থাকতেন মালিবাগ বাজার রোডের একটি ফ্ল্যাটে। গত বৃহস্পতিবার ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, এহসানুল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা নিয়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র আদান-প্রদান করত। “নিজের হোয়াটাঅ্যাপ গ্রুপের ‘চবৎ ছঁবংঃরড়হ ৩০০ টাকা ঐঝঈ’ এবং ফেসবুকে ‘কঁংবহ উবঃধ’ নামে আইডি খুলে প্রশ্নফাঁসের প্রচারণা চালাত। ওই সব আইডির অ্যাডমিনও সে নিজে।”

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে ও পরীক্ষার দিন সকালে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত এসএসসির প্রায় সব পরীক্ষার প্রশ্নই পরীক্ষার দিন সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর; যে কারণে প্রশ্ন ফাঁস রোধে চলতি এইচএসসি পরীক্ষার আগে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এ কারণে এখনো এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ভুয়া প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে প্রতারকেরা।
প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলেও এবার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্র কন্ট্রাক্টের। একটি কলেজ আরেকটি কলেজের সাথে কন্ট্রাক্ট করছে পরীক্ষার হলে তারা গার্ড দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন কারেক্ট করে দেয়ার। কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠার পর সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে নেন। কয়েকটি কলেজ রয়েছে যেখানে তারা একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলে কেন্দ্র নিলেও আশপাশের ভাড়া করা ভবনেও কেন্দ্র বসিয়েছে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ওই সব কলেজ ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি ছাত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েছে। পরীক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে কয়েকটি কলেজকে এই অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া যে দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে দু’জন শিক্ষার্থী বসানোর কথা, তার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে বেঞ্চে দু’জন শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে; যাতে একজন শিক্ষার্থী আরেকজনের উত্তর দেখে লিখতে পারে। কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন দফতরে।


 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/309115