রোববার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনে ভাঙচুর (বাঁয়ে); কোটাব্যবস্থা সংস্কার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেললাইন অবরোধ
১০ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৭

কোটায় উত্তাল শিক্ষাঙ্গন

দাবি মানার আশ্বাস শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের আশ্বাসের ভিত্তিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নেতৃবৃন্দ গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা না না, মানি না মানি না বলে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন। তারা দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তারা দাবি জানান, ওবায়দুল কাদেরকে এখানে এসে দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিতে হবে অথবা সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। তখন সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। গতক রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র।

এ দিকে গতকাল কোটা সংস্কার দাবিতে সারা দেশে সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তাল পরিবেশ বিরাজ করে। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আন্দোলনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেন।
অন্য দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনেসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় সূত্র। দুপুর থেকেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী ও বহিরাগতদের জড়ো করে বলে জানিয়েছে সূত্র।

চবিতে কাস-পরীা বর্জন : শাটল ট্রেন অবরোধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন অবরোধ করে বিােভ করেছেন আন্দোলনকারী শিার্থীরা। ষোলশহর স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনটি আটকে দেন বিােভকারীরা। একই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাস বর্জনের পাশাপাশি বাংলা বিভাগের শিার্র্থীরা নির্ধারিত পরীা বর্জন করেছেন।
ঢাকায় আন্দোলনরতদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে রোববার রাতে বন্দর নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন এবং চবির এক নম্বর গেট এলাকায় সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিােভ করতে থাকেন। এ সময় সেখানে বিপুল পুলিশ মোতায়েন থাকলেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
আন্দোলনকারীদের নেতা মো: আরজু বলেন, ঢাকার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনে বাধ্য হবো।
এ দিকে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে দুপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরাও কোটা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।

২০ ছাত্র প্রতিনিধির সাথে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের ১১ নেতার বৈঠক : কোটা সংস্কার আন্দোলনের ২০ ছাত্র প্রতিনিধির সাথে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১১ নেতার বৈঠক হয়। এর আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং সরকারের বা আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠকের প্রস্তাব দেন। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়, তারা বৈঠকে রাজি আছেন। তবে দলীয় কোনো অফিসে নয়। কোটা সংস্কারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে তাই সরকারের যেকোনো অফিসে এ বৈঠক হতে পারে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের তিনি জানান, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আন্দোলনরতদের সাথে আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর পর ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে যাবেন বলে নানককে অবহিত করা হয়।

পরে সচিবালয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র, আরজিনা হাসান, লুবনা জাহানসহ ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তরুণরা এই কোটা সংস্কার আন্দোলন করছেন। তারা আমাদের রাজনীতির অপরিহার্য অংশ, তারাই নতুন প্রজন্ম। আমরা এই পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই রাজনীতি করি। তাই শেখ হাসিনার সরকার কখনো তরুণদের যৌক্তিক দাবিকে উপো করেনি।’
আগামী ৭ মে’র মধ্যে সরকার কোটা পদ্ধতি রিভিউ বা পরীা-নিরীা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে কোটা পদ্ধতি পরীা-নিরীা করবে। এর ফল কী হবে, সেটি আমরা জানাব। সে পর্যন্ত কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন স্থগিত থাকবে। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা এখানে রয়েছেন। তারাও ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখাতে সম্মত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে একটা সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে বিশেষ বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছেন। কয়েক মিনিট আগেও প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে কোটা পদ্ধতি পরীা-নিরীা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়টিতে সরকার রিজিড (অনড়) অবস্থানে নেই। আমি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছি, তাদের দাবির যৌক্তিকতা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখবো।’

পাশাপাশি, রোববার রাতে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের শাস্তি পেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভিসির বাসভবনে তাণ্ডব চলেছে। ভিসির পরিবারকে বাগানে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানকার ভিডিও ফুটেজ থেকে এই তাণ্ডবের সাথে যারা জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। আমি আন্দোলনকারী মেধাবী তরুণদের প্রশ্ন করেছি, কোটা সংস্কারের সাথে ভিসির সম্পর্ক কী? কোটার সাথে তো তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি ও তার বাসভবন, তার পরিবার কেন আঘাত পাবে? আন্দোলনকারীরা একমত হয়ে বলেছে, কিছু অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও সন্ত্রাসীরা এ কাজ করে থাকতে পারে। এখানে ডিএমপি কমিশনার আছেন। তিনি দেখবেন, নিরীহ কেউ যেন গ্রেফতার না হয়। যারা সত্যিকার অর্থে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই যেন অ্যাকশন নেয়া হয়। আর যারা এই আন্দোলনে বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসায় সরকার কোনো কার্পণ্য করবে না।

অন্য দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, সরকার কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তা জানিয়ে দেবে। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হলো।’ আন্দোলন করতে গিয়ে যারা আটক হয়েছেন, তাদের সবাইকে আজকেই নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হবে এবং আহতদের জন্য সরকার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে বলেও জানান তিনি।

তবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তদন্তের পর যারা নির্দোষ প্রমাণ হবে শুধু তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।
দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত : এ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকালও দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। সকাল থেকেই বিভিন্ন হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী দল বেঁধে স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। শাহবাগ অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও ব্যারিকেড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও বেরুনোর পথ রুদ্ধ করে দেন। ওই দিকে রোববার রাতে পুলিশ ও ‘বহিরাগতরা’ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে মুখোশ পরে একদল যুবক ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের কারো চেহারা ঠিকমতো বুঝা যাচ্ছিল না। রোববার রাতের সংঘর্ষের জেরে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাস-পরীা বন্ধ ছিল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে গতকাল ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার এলাকা, চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন শাহবাগ, বাংলা একাডেমি এবং নীলক্ষেত মোড়ে পুলিশের প্রচুর সদস্য মোতায়েন ছিল। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিকে পুলিশ চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে ঢাবি ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংঘর্ষের সময় যেভাবে তারা পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে, সে কারণে ছাত্রছাত্রীরা বেশ বিুব্ধ। সেদিন বিােভ পুলিশ দমন করার পর গতকাল সকালে তাদের কিছুটা হতোদ্যম মনে হচ্ছিল। কিন্তু রাজু ভাস্কর্যের সামনে জমায়েতে বহু ছাত্রছাত্রী এসে যোগ দেয়ার পর তাদের উজ্জীবিত হতে দেখা যায়।

এ দিকে শাহবাগের মোড় দিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় সেখানে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ে। যে পরিমাণ বিােভকারী ক্যাম্পাসে রয়েছে প্রায় সেই পরিমাণ পুলিশও চারদিকে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীদের বিােভ দমনে তৈরি রাখা হয় জলকামান, এপিসি। সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সদস্যও মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। শাহবাগের মোড় ও বাংলা একাডেমির সামনে এসব গাড়ি আড়াআড়ি করে রেখে এবং পুলিশ সদস্যদের দিয়ে একটি দীর্ঘ কর্ডন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ আটকে রাখে পুলিশ।
এ দিকে পুলিশের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নেয় সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগের কয়েক শ’ কর্মী চোখে পড়ে। যাদের প্রায় সবাই বহিরাগত।
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, আগামী মাসে ছাত্রলীগের একটি সম্মেলন। মূলত সেজন্যই তারা ক্যাম্পাসে এসেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে তাদের এই জমায়েতের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অনেক পদধারী নেতাকেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেখা গেছে।
ঢাবির বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে মিছিল করে বিক্ষোভে যোগদান : কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ ও মিছিলে করে যোগ দিয়েছে হাজারো ছাত্রী। আগের রাতে তারা হলের ভেতর থেকে মিছিল করলেও গতকাল দুপুরে উত্তাল পরিস্থিতিতে আন্দোলনরত শিার্থীদের সাথে তারা যোগ দেন। এ সময় শামসুন্নাহার হল থেকে প্রায় আট শ’ ছাত্রীর একটি মিছিল বের হয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। এরপর একে একে বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে ছাত্রীদের মিছিলে মুখরিত হয় ঢাবি ক্যাম্পাস। রোকেয়া হল থেকে কয়েক শ’ ছাত্রী বিক্ষোভে যোগ দিতে মিছিল করে রাজু ভাস্কর্য়ের সমানের সমাবেশে যোগ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কাস ও পরীক্ষা হয়নি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওপর আগের রাতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কাস অনুষ্ঠিত হয়নি। এ ছাড়া কোনো বিভাগে পূর্বনির্ধারিত কোনো কাস পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি। আগের রাতেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে।
টিএসসির পায়রা চত্বর থেকে পুলিশকে ধাওয়া : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেলা ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অদূরে পায়রা চত্বরে অবস্থানরত পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। পায়রা চত্বরে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের টিএসসির সামনে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করে সরিয়ে দেয়। এর আগে শহবাগ এলাকার দিক থেকে পুলিশ চারুকলার সামনে এসে সাধারণ ছাত্রদের ধাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কিছু পুলিশ শাহবাগ মোড়ের পুলিশ ব্যারাকে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিছু পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা টিএসসি অদূরে পায়রা চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় সাধারণ ছাত্ররা তাদের আবারো ধাওয়া দেয়।

সাংবাদিকের ওপর ছাত্রলীগের হামলা : এ দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে সাংবাদিক ও আন্দোলনরত সাধারণ শিার্থীরা ােভ প্রকাশ করেন। গতকাল সকাল থেকে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইফাই চত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে।
পরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তারা মিরপুর ১০ ফার্মগেট সড়ক সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনের রাস্তায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে এলে বাংলানিউজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মহিবুল আলম সবুজকে হেনস্থা করে শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম মাসুদুর রহমান মিঠু ও তার অনুসারীরা।

জাবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারসহ ৫ দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধকালে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, টিয়ার শেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো: জুলকারনাইসহ শতাধিক শিার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে এদের মধ্যে প্রায় ৬০ জন গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালযের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর আর গুলি না চালিয়ে তাকে গুলি করার কথাও বলেন পুলিশ প্রশাসনকে।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সাভারে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা ডেইরি গেটের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করলে গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড, থানা স্ট্যান্ড, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে নবীনগর ও আশুলিয়া বিভিন্ন সংযোগ সড়কগুলো বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এক টানা ৬ ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। যাটজটের ফলে দূরপাল্লার যাত্রীসহ সাভার এবং আশপাশের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। মহাসড়কে বাসযাত্রীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের চৈত্রের গরমে বাসে থাকা খুবই কষ্টকর ছিল। বিকেল সাড়ে ৩টার পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি : সকালে বাসা থেকে এইচএসসি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে যথাসময়ে পৌঁছলেও বেলা ১টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফিরতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) পরীক্ষা কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্র, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র ও আশুলিয়ার দোসাঈদ কলেজকেন্দ্রর ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

ইবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস।
শাবি সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে উত্তাল হয়ে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। স্লোগানে-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বাধা প্রদান ও আন্দোলনকারীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ধর্মঘটের সমর্থনে সব ধরনের কাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি নিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সেখান থেকে জোর করে উঠিয়ে দেয় ছাত্রলীগ।
আন্দোলন ঠেকাতে এর আগে ভোর ৬টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল ও শাহ পরাণ হলের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শাবি শাখার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিনকে দেড় ঘণ্টা ধরে হলে আটকে রাখা হয়। এ সময় তার মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে আবারো রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে জড়ো হতে থাকেন। এরপর একটানা বেলা ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন।
এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কাস বর্জন ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ ছাড়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জেলা শাখার সদস্যরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর ও পুলিশ সুপার মো: শাহ আবিদ হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ও ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের প্রতিবাদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে খুবির হাদি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে বিকেল ৪টায় খুবির সামনে থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ময়মনসিংহ অফিস ও বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ও শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা কাস ও পরীা বর্জন করে গতকাল বেলা ১১টা থেকে বাকৃবি রেলস্টেশনে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেন। একই দাবিতে বিকেলে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা রহমতপুর বাইপাস মোড়ে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়ক অবরোধ করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালে কাস ও পরীক্ষা বর্জন করে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে জমায়েত হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন অনুষদীয় করিডোর হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তমঞ্চে সমাবেশ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন। বক্তারা বলেন, ‘পাঁচ দফার বিষয়ে পরিষ্কার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কাসে ফিরব না। আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কোনো আশ্বাস চাই না, দাবি মানতে হবে।’
বেলা ৩টার দিকে বাকৃবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাহমুদুর রহমান রাজীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলসহকারে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে অবরোধকারীদের সাথে যোগ দেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং রেলপথ অবরোধ ছেড়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানালে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের আহ্বানে সাড়া দেননি। তারা ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিার্থীরা।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সাথে যোগ দেন কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তারা মিছিল নিয়ে মডার্ন মোড়ে ডায়মন্ড হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখেন। এতে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলার সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ২টায় নগরীর পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। এ সময় রাস্তার দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
গোপালগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন।
সোমবার সকাল ১০টায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। রাস্তার ওপর বাঁশ, ইটপাটকেল ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন। এ সময় সড়কের দু’পাশে দূরপাল্লার শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক করেন। অবশেষে বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এরপর ওই সড়ক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
দুমকি (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্থীরা গতকাল প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্করণের দাবিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। গতকাল বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে মাইজদী-চরজব্বার সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/309129