৯ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৩১

গরম তীব্র হওয়ার আগেই লোডশেডিং বৃদ্ধি

চৈত্রের গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সরকারের হিসাবে লোডশেডিং না থাকলেও রাজধানীসহ দেশের সব জেলাতেই লোডশেডিং হচ্ছে। গ্যাস সংকট এবং বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরন অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে চাহিদামত বিদ্যুত্ পাচ্ছে না দেশবাসী। চাহিদা ও জোগানের তারতম্য ছাড়াও বিদ্যুত্ বিভ্রাটের কারণেও বিদ্যুত্হীন থাকছে অনেক এলাকা। অথচ গত বছর ব্যাপক লোডশেডিংয়ের পর এবার নির্বাচনী বছরের গরমকাল লোডশেডিংমুক্ত রাখার জন্য সরকার অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মত বাস্তবায়িত না হওয়ায় লোডশেডিং বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে এটি আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুত্ বিভাগ ও বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে বিদ্যু উত্পাদনের স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট। তবে প্রকৃত উত্পাদন ক্ষমতা তার চেয়ে অনেক কম। দেশের ইতিহাসে গত ১৯ মার্চ প্রথমবারের মত ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট উত্পাদিত হয়। বিদ্যমান অবস্থায় এটিই সবচেয়ে বেশী প্রকৃত উত্পাদন ক্ষমতা। এর মধ্যে বিদ্যুেকন্দ্রগুলো চালু রাখতেই ৫ শতাংশ বিদ্যুত্ ব্যয় হয়। সিস্টেম লসও প্রায় ১০ শতাংশ। অর্থাত্ গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা যায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্। সব মিলিয়ে বিদ্যুত্ না পেয়ে অনেক স্থানেই স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন। শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সক্ষমতা অনুযায়ী উত্পাদন বা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারছে না। যা গত কয়েক বছরে বিদ্যুত্ খাতে সরকারের অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করছে।

বাস্তবে বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকলেও কাগজে-কলমে এর অস্তিত্ব নেই। গত এক সপ্তাহে পিডিবির দৈনিক উত্পাদন রিপোর্টে দেশে কোনো লোডশেডিং হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন জেলার মানুষ লোডশেডিং হয়েছে-হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ঝিগাতলা, গুলশান, উত্তরার অনেক বাসিন্দা বিদ্যুত্হীন থাকার অভিযোগ করেছেন।

বিদ্যুত্ বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর গ্রীষ্মের লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার এ বছরের গরমের আগেই প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদনের কার্যাদেশ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী গত মার্চ মাসে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেলচালিত কেন্দ্রে উত্পাদন শুরুহওয়ার কথা ছিল। সেগুলো এখনও চালু হয়নি। চলতি এপ্রিলেও চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফার্নেস তেলচালিত প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রে উত্পাদন শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময় ছিল আগামী মে-জুনে। কিন্তু সেগুলোর সময়ও আরো পিছাবে।

বিদ্যুত্ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রকৃত চাহিদা দাড়িয়েছে প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াট। ঢাকার দুটি বিতরণকারী সংস্থার মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) চাহিদা ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। আর ঢাকা বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট। এ ছাড়া পিডিবির বিতরণ অঞ্চলের চাহিদা প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) চাহিদা ৮০০ মেগাওয়াট। নর্থ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চাহিদাও প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রয়োজনমত কোন বিতরণ কোম্পানিই বিদ্যুত্ পাচ্ছে না। অনেকে প্রকৃত চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুত্ পাচ্ছে। তাই লোডশেডিংয়ের আশু সমাধান নেই। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলেই এ সমস্যা মিটবে।

 

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/04/09/153278.html