চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর রাতে পুলিশের টিয়ারগ্যাস
৯ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:০৮

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ফের উত্তাল সারা দেশ

৫৬ থেকে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আবার উত্তাল সারা দেশ। সারা দেশের বড় বড় শহরে চাকরিপ্রার্থী হাজার হাজার বেকার যুবক-তরুণ ও বিভিন্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী গতকাল রাজপথে নেমে আসেন। তারা সারা দেশে গণপদযাত্রা করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে গণপদযাত্রা শেষে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি সমাধানে না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শাহবাগের মূল রাস্তায় অবস্থান নেয়ায় দুপুরের পর থেকে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগে ৫৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের ৩০ শতাংশ, নারী ১০, জেলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ এবং প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশের।

১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধা-সরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ পরিমার্জনে কোটা সংরক্ষণ হচ্ছে ৫৬ শতাংশ। সরকারি কর্ম কমিশনসহ (পিএসসি) সরকারের বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন একাধিকবার বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছে। কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই এসব সুপারিশ শতভাগ কার্যকর হয়নি। আর বর্তমান সরকার আগের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান ও পোষ্যদের কোটার আওতায় আনার পর এ বিতর্ক আরো তীব্র হয়।
কয়েক মাস ধরে কোটা সংস্কারের দাবি আরো তীব্রতর হয়েছে। সর্বশেষ এ দাবি দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ নিয়ে কয়েক দফায় শুনানি শেষে আদালত কোটা সরকারের জন্য সরকারের প্রতি রুল জারির আবেদন নাকচ করে দেন। এরপরও কোটা সংস্কারের দাবিতে মেধাবী-চাকরিপ্রার্থী বেকার তরুণরা আরো সোচ্চার হয়েছেন। তারা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে গত ৪৭ বছরে। স্বাধীনতার পরপরই দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে টেনে তোলার জন্য কোটা সংরক্ষণ জরুরি ও বাষ্ট্রীয় দায়িত্ব মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু দেশ এখন নি¤œ আয়ের থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটার পরই কোটা সংরক্ষণের বিধানকে অবাস্তব ও উদ্ভট বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। তারা বলেন, কোটা ব্যবস্থা কখনো কোনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে পারেনি। ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা দেশকে অদূর ভবিষ্যতে একটি পঙ্গু জাতিতে পরিণত করবে।
আমাদের বিশ^বিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীরা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা যাবৎ সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। গতকাল বেলা ৩টায় পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। অবরোধের ফলে শাহবাগ হতে মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, দোয়েল চত্বর, সায়েন্সল্যাবমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হওয়া যাত্রীদের। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) অবরোধ চলছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে অপেক্ষা করছিল।

এর আগে বেলা ২টায় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর ব্যানারে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। কয়েক হাজার আন্দোলনকারী পদযাত্রা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে নীলক্ষেত হয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন। পুলিশ তাদের কয়েক দফা সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন এবং তাদের ওপর হামলা হলেও তারা স্থান ত্যাগ করবেন না বলে জানান।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেলে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করে আছেন। এ সময় গণগ্রন্থাগারের সামনে আড়াআড়িভাবে তিনটি ডাবল ডেকার বাস রেখে সড়ক অবরোধ করেন কোটা সংস্কারপ্রত্যাশীরা। এ ছাড়া আরো পাঁচ-সাতটি বাস দিয়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, নিউমার্কেট ও মতিঝিলের দিকে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেন তারা। তবে অসুস্থ নাগরিকদের চলাচলে কোনো ধরনের বাধা দিতে দেখা যায়নি বরং রোগী বহনকারী যানবাহনকে আন্দোলনস্থলের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তারা।

আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড বহন করেন তারা। এতে লেখা ছিল ‘১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৈষম্য থাকবে না’, ‘জেগেছে তরুণ জেগেছে দেশ, কোটা মুক্ত বাংলাদেশ’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি।
এদিকে সংসদে কোটা সংস্কারের বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা আসুকÑ এমন প্রত্যাশা করে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন জানান, দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অহিংস আন্দোলন-অবরোধ চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করবেন। কোটা কত শতাংশ রাখা যায় তা বিবেচনার জন্য তারা একটা কমিশন গঠন করবেন। এটাই আমাদের মূল দাবি। সংসদ থেকে আশ^াস না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, অবিলম্বে সরকারি চাকরিসহ সব ধরনের চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া আন্দোলনকারীরা রাজপথ ছাড়বেন না।

কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ ও জেলাপর্যায়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ। তাদের দাবিগুলো হলোÑ সংস্কারের মাধ্যমে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্যপদে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।
রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রাজশাহী ব্যুরো জানান, বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল শিক্ষার্থীরা রাবির প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাস্তার দুইপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ ও পথচারীরা।

এ দিকে ক্লাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে চাইলেও তা পারেননি। প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি দেখে পরিবহন দফতর বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছেÑ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটার শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, চাকরি পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি নয়, কোটায় বিশেষ নিয়োগ বন্ধ এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অভিন্ন করতে হবে।
বিক্ষোভকালে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’-এর রাবির সমন্বয়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ মুন্নাফ বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কর্মসূচি পালন করছি। আমরা চাই, সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু দিন ধরে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। আমরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এভাবে প্রতিদিন আন্দোলনে নামতে চাই না। আমরা আমাদের দাবির বাস্তবায়ন চাই।
এর আগে বেলা ২টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। পদযাত্রায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে বেরিয়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যায়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটের সামনে আসে। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের
জাবি সংবাদদাতা জানান ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’Ñ এ স্লোগানে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকে। এর আগে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি অমর একুশের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার, ট্রান্সপোর্ট, চৌরঙ্গী চত্বর প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এসে শেষ হয়। পাঁচ দফা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো: জুলকারনাইন জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এ দিকে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সফিয়ান চঞ্চল কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনে পাশে থাকবেন এ আশ্বাস দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় অরবোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।

সিলেট ব্যুরো জানায়, পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের মতো সিলেটেও বিক্ষোভ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। গতকাল বেলা ২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণপদযাত্রা বের হয়ে বন্দরবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌহাট্টায় গিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় গণপদযাত্রা ও অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন শাবিপ্রবি, সিকৃবি, এমসি কলেজ, মদনমোহন কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের স্লোগান ছিল, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, কোটা প্রথার সংস্কার চাই’, ‘বাতিল করো বাতিল করো, নাতি-পুতি কোটা বাতিল করো’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মেনে নাও’।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সিলেট শাখার প্রধান সমন্বয়ক শাবিপ্রবি লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র মো: নাসির উদ্দীনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী আল আমিন ভূঁইয়া, রিপন মাহমুদ, মো: ফারুক মিয়া, সিকৃবির ছাত্র রাহুলচন্দ্র দাস, এমসি কলেজের আহ্বায়ক মো: শাহীনূর আলম ও কাউসার আহমদ। গণপদযাত্রা ও অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেন জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষক নজরুল ইসলাম রেজা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর থেকে দুই নম্বর গেট হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত দীর্ঘপথ হেঁটে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় তারা কোটা বিরোধী স্লোগান দেন। বিতরণ করেন দাবিসংবলিত লিফলেট।

গতকাল দুপুরে কোটা সংস্কারের স্লোগান দিয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী আগ্রাবাদ অভিমুখে মিছিল বের করেন। তারা লালখানবাজার, টাইগার পাস, দেয়ানবাজার হয়ে একেবারে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যান। তাদের দাবি, চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
একই দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, কেন্দ্রীয় যেকোনো কর্মসূচি পালন করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় প্রস্তুত আছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ শহর বাইপাস গোলচত্বরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

বেলা ৩টায় শুরু হওয়ায় অবরোধের সময় আন্দোলনকারীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও কোটা সংস্কারের দাবিসংবলিত গেঞ্জি পরে রাস্তায় নানা স্লোগান দেন। অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই দিকে কয়েক কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় অবরোধ চলছিল।
আন্দোলনকারীরা জানান, আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমরা কোটা বিলুপ্ত নয়, যৌক্তিক সংস্কার চাই। সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে এটা আশা করি। তারা ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই,’ ‘১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/308812