সিরিয়ায় নিষিদ্ধ গ্যাস হামলায় অসুস্থ এক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে
৯ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:০৪

সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর বিষাক্ত রাসায়নিক হামলায় ৭০ জনের প্রাণহানি

সিরিয়ার পূর্ব ঘৌটায় দৌমা শহরে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় ৭০ জনের প্রাণহানির হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিদ্রোহী পক্ষের উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এই খবর জানিয়েছে। মানবিক সংকট পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ব্রিটিশ বেসরকারি সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসও ৭০ জনের নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। নিহতরা বিষাক্ত রাসায়নিক হামলার শিকার বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্রোহী পক্ষ সরকারি বাহিনীকে সিরিন গ্যাস হামলায় দায়ী করলেও আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা হামলায় জয়েশ আল-ইসলাম নামের জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। তবে ওই সংগঠন রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের দায় স্বীকার করেনি।

পূর্ব ঘৌটায় ২০১১ সালে প্রথম সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে এটাই ছিল বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি। গত এক মাসের লাগাতার হামলার পর সেখান থেকে পালানো শুরু করে বিদ্রোহীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরু করা আসাদ বাহিনী এলাকাটিতে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকে তিন অংশে বিভক্ত করে দিতে পেরেছিল। তাদের হামলায় তখন প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত হামলায় পূর্ব ঘৌটার বেশকিছু মানুষের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিবিসি দৌমা শহরে ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। বেশ কয়েকটি চিকিৎসক, পর্যবেক্ষক ও একটিভিস্ট গ্রুপ ওই বিষাক্ত রাসায়নিক হামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। হতাহতের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও এসব গ্রুপগুলো জানায় যা ঘটেছে তা পরিষ্কার হতে সময় লাগবে। নিহতের সংখ্যা ১৫০ জানিয়ে প্রথমে টুইট করলেও পরে তা মুছে ৭০ জনের প্রাণহানির কথা জানায় হোয়াইট হেলমেট।
সিরিয়ার মানবিক বিপর্যয়ের পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ব্রিটিশ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় শুক্রবার ৪০ জন এবং শনিবার ৩০ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার বিদ্রোহী সমর্থক সংবাদমাধ্যম ঘৌটা মিডিয়া সেন্টার দম বন্ধ হয়ে ৭৫ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে। সিরিয়ার হাসপাতালগুলো নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাহায্য সংস্থা ইউনিয়ন অব মেডিকেল রিলিফ অর্গানাইজেশন বিবিসিকে জানিয়েছে, দামাস্কাসের প্রান্তিক বিশেষায়িত হাসপাতাল তাদের ৭০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে এসব দাবি স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দেখতে পারেনি কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
হোয়াইট হ্যামলেটসহ বিদ্রোহী পক্ষের চিকিৎসক ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা অভিযোগ তুলেছে হামলায় বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরেও প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক আলামত মিলেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের পাশাপাশি এখনও শতাধিক মানুষ শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

সিরিয়া সরকার পূর্ব ঘৌটায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগকে সাজানো বলে দাবি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সানা নিউজ এজেন্সির বরাতে সিরিয়ার কর্মকর্তাদের দেওয়া এক বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়েছে। ওই হামলার জন্য দোমা নিয়ন্ত্রণ করা বিদ্রোহী সংগঠন জয়েশ আল ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সরকার জোর দিয়ে বলতে পারে ওই এলাকায় সিরীয় বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে রুখতে এই ধরনের দাবি করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা নিজেরাই এধরণের হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই বিবৃতিতে। সিরিয়ার প্রতিটি কোনা থেকে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করা হবে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয় ওই বিবৃতিতে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। সিরিয়া সরকারের প্রতি রাশিয়ার অবিচল সমর্থনের কারণে চূড়ান্তভাবে তাদেরকে এই হামলার দায় নিতে হবে। এর আগেও সিরিয়া নিজের জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

http://www.dailysangram.com/post/325986