৮ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:১৮

রাজধানীর বাস চালকরা বেপরোয়া

আইন মানে না কেউ, অনেকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, চালকের পরিবর্তে বাস চালায় হেলপার, ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ এলাকা

রাজধানীতে চুক্তিতে গাড়ি (লোকাল বাস) চালানোর কারণেই চালকরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এছাড়া এই চালকদের অনেকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেক সময় চালকের পরিবর্তে বাস চালায় হেলপার। এরা কেউ আইনের তোয়াক্কা করে না। লোকাল বাসের এ মরণ রেসের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ১৩টি পয়েন্টেই তীব্র প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যায়। এই চালকদের কাছে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোও অসহায়। এমন তথ্য জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চালকদের নিয়মের মধ্যে আনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে যা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, রাজধানীর ২৭৯টি রুটে যাত্রীবাহী বাস মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।

পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিরা জানিয়েছেন, বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল (বাস) গাড়ি চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহন মালিক তাদের বাস মিনিবাস চালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছে। চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সেই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে আগে। এ কারণে একই রুটের বাসের মধ্যেই ভয়াবহ মরণ রেস দেখা যায়। আর এ প্রতিযোগিতার কারণেই এ রেসের পরিণতি হয় দুর্ঘটনা।

সূত্র জানায়, রাজধানীতে চালকের মরণ রেসের কারণে কয়েক বছর আগে শাহবাগ শিশু পার্কের সামনে এক কিশোরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। একই ভাবে বছর খানেক আগে মৌচাকে দুই বাসের মাঝে পড়ে এক যুবক নিহত হয়। সম্প্রতি কারওয়ান বাজার সোনারগাঁও মোড়ে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, নগরীর ১৩টি পয়েন্টেই এ প্রতিযোগিতা বেশি থাকে। এসব পয়েন্টে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে-গাবতলী, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, গুলিস্থান, মতিঝিল শাপলা চত্বর, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরার আজমপুর, বিমানবন্দর গোল চত্বর, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, নগরীর পরিবহন সেক্টরে নানা সমস্যা রয়েছে। নগরীর কোন রুটে কোন কোন পরিবহনের বাস চলাচল করবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এর পেছনে রয়েছে অনেক ‘ক্ষমতাধর’ ব্যক্তি। তাদের নির্দেশেই রুট নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে ক্ষমতার কারণে অনেক সময় শ্রমিক মালিক নেতৃবৃন্দের কিছু করার থাকে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আমিন নুরু কোনো মন্তব্য না করে বলেন, অনেক চালকের বৈধ লাইসেন্স না থাকায় সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, চালকের সিংহভাগই অল্প শিক্ষিত। লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি জটিল। এ কারণে লাইসেন্স নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নিতে পারে না। সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বার বার নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর জন্য চেষ্টা হচ্ছে।

অপর দিকে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতা হোসেন আহম্মেদ মজুমদার বলেন, সড়কে এসব মর্মান্তিক ঘটনা থেকে রেহাই পেতে চালকদের যেমন সচেতন হতে হবে যেমনি যাত্রীদেরকেও। তা না হলে কোনো অবস্থায় এটা রোধ করা সম্ভব না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) রেজাউল করিম বলেন, বাসের অসম প্রতিযোগিতা বলা যাবে না। এ নিয়ে অনেক সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধান দরকার। তিনি বলেন, পথিমধ্যে বাসে যাত্রী ওঠানো নামানো হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আমরা প্রায় মালিক শ্রমিকসহ সবার সাথে কথা বলি। কারণ এসব নোংরা কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়া দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে কঠোর হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

http://www.ittefaq.com.bd/capital/2018/04/08/153148.html