৭ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৬

সরকারি সংস্থার বাধায় ইউলুপ প্রকল্প বন্ধ

সওজের সাথে বিরোধ দ্রুত মেটাতে পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশ

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক খোদ সরকারি সংস্থা। ঢাকা শহরের ২৫ শতাংশ যানজট কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নেয়া ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্প এখন বন্ধ। সড়ক ও জনপথ (সওজ), ভূমি জরিপ অধিদফতর, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার, পিডব্লিউডি, কোহিনূর কেমিক্যালের জায়গা না দিয়ে বাধা দেয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডির সরেজমিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিল থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তার পরিমাণ হলো ২২ কিলোমিটার। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে মোট ১২টি ইউটার্ন রয়েছে। এই ইউটার্নগুলোকে আপাতত ১২টি ইউলুপ করা গেলে ২৫ শতাংশ যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে। ১২টি ইউলুপ হলোÑ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং, জসীম উদ্দীন রোড, র্যাব-১, আর্মি গলফ ক্লাব কাওলা, বনানী ওভারপাস, বনানী কবরস্থান, চেয়ারম্যানবাড়ী, মহাখালী জামে মসজিদ, কোহিনূর কেমিক্যাল মোড়, মহাখালী টার্মিনাল ও সাতরাস্তা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এসব লুপ তৈরিতে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের পরও সরকারি সংস্থাই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছে বলে আইএমইডির সদ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।
আইএমইডি থেকে প্রকল্পের সরেজমিন পরিদর্শনের চিত্র হলো, তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় ইউটার্নের দৈর্ঘ্য ২৯৭.৬৪ মিটার এবং প্রস্থ ৫৩.০৫ মিটার। বিদ্যমান ইউটার্নটি ভূমি জরিপ অফিসের বাউন্ডারি ওয়ালসংলগ্ন প্রায় ২৬৪ ী ১০ ফুট জায়গা বিস্তৃত। তবে ভূমি জরিপ অফিসের এই জমি এখনো পাওয়া যায়নি। অন্য প্রান্তে কেন্দ্রীয ঔষধাগারের দেয়ালের ভেতরে বেশ জায়গা রয়েছে; কিন্তু সেই জায়গা আজো পাওয়া যায়নি। আবার ভূমি জরিপ অফিসের অপর পাশে পিডব্লিউডির নির্মিত বহুতল ভরনের সামনে ৩ শ’ ফুট ী ১৪ ফুট জায়গাও এই ইউটার্ন নির্মাণের জন্য প্রয়োজন। যা এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গাছ ও বিদু্যুতের পোল রয়েছে। এসব কারণে ওই এলাকায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কোহিনূর কেমিক্যাল এলাকাতে ইউটার্নের দৈর্ঘ্য ১০৯ মিটার ী প্রস্থ ৩৬.৫৮ মিটার। এটার জন্য কোহিনুর কেমিক্যালের জায়গার প্রয়োজন। তার জন্য প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনা ভাঙতে হবে। কিন্তু তারা সেটা ভাঙতে বাধা প্রদান করায় প্রকল্পের কাজ ওই স্থানে বন্ধ রয়েছে। তবে ফুটপাথ ভাঙার কাজ চলছে। আর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকার ইউটার্নটির আকার ১৯৯.৮৫ মিটার ী ৫৬.৭০ মিটার। এটি নির্মাণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভেতরের প্রায় ৪০ ফুট জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু জায়গা এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি পশ্চিম পাশে সওজের জায়গাও এর আওতাভুক্ত। যা এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকার ইউটার্নটির আকার ১৪২.২২ মিটার ী ৪২.৬৮ মিটার। সওজ বিভাগের প্রায় ১১ ফুট ী ৪৬০ ফুট জায়গা এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। কিন্তু ওই জায়গা না পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে আইএমইডি জানায়। এ ছাড়া বনানী কবরস্থান এলাকার ইউটার্নটির আকার ১২৬.৮৩ মিটার ী ৪০.৫৪ মিটার। প্রকল্পের এলাকার মধ্যে পরিবেশ সার্কেল কর্তৃক রোপণকৃত গাছ ও টব রয়েছে। যা অপসারণ করা দরকার। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্ট বরাবর ইউটার্নটি অবস্থিত। ওখানেও কাজ করা যাচ্ছে না। তবে বনানী ওভারপাস এলাকায় কাজ ঠিক মতো চলছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্মি গলফ ক্লাব এলাকাতে ইউটার্নের আকার ১৪০.৯৭ মিটার ী ৩৯.৯০ মিটার। সেখানে সওজের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলমান আছে। ফলে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজ শুরু করতে গেলে সওজ দুই দফা বাধা প্রদান করায় প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধ। কাওলা ফ্লাইং ক্লাব এলাকার ইউটার্নটির আকার হলো ২৩৪.২৬ মিটার ী ৫১.৫৫ মিটার। সেখানে সওজের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলমান আছে। সওজের বাধার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আর উত্তরা র্যাব হেডকোয়ার্টার এলাকাতে ১৮০.১৩ মিটার ী ৫১.৫৫ মিটার আকারের ইউটার্ন রয়েছে। দুই সাইটে বিদ্যুতের পোল এবং বিভিন্ন গাছপালা থাকার কারণে সেখানে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ফুটপাথ ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে।
অন্য দিকে উত্তরা রাজলক্ষ্মী এলাকায় ১৩৩.১৮ মিটার ী ৩৮.১০ মিটার আকারের ইউটার্ন রয়েছে। ওই জায়গাটি বিআরটিএ’র। সেখানে তাদের প্রকল্প রয়েছে। সে স্থানেও সওজ বাধা প্রদান করছে। যার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ফুটপাথ ভাঙার কাজ শুরু করলে বিআরটিএ’র বাধার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের পরিমাণ ৩০ কিলোমিটার। এই ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রচণ্ড যানজট থাকে। এই এলাকায় মোট ২২টি ইউটার্ন রয়েছে। যানজটের কারণগুলোর অন্যতম হলো এসব ইউটার্ন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রস্তাবনা দেয়া হয় গত ২০১৫ সালে। ওই সভায় ঢাকার ১২টি ইউলুপ নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে। বাকি ১০টি নির্মাণের দায়িত্ব গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি বলছে, ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ মাস অতিক্রম হয়েছে। কোনো অর্থ নির্ধারিত সময়ে ব্যয় হয়নি। প্রকল্প প্রণয়নে কাঠামোগত দুর্বলতাও রয়েছে। সওজের সাথে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করে বিরোধ দ্রুত মিটিয়ে প্রকল্পের অচলাবস্থা দূর করার জন্য আইএমইডি থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/308243