৫ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৩

টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি এনসিটিবির

চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আটটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে এ বছর কালো তালিকাভুক্তির জন্য সুপারিশ করেছে স্থায়ী উৎপাদন কমিটি। তবে এ সুপারিশের প্রস্তাব বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে বোর্ডের মিটিংয়ে উপস্থাপনের জন্য কোনো সুপারিশের প্রস্তাব করা হয়নি বলে এনসিটিবি সূত্রে বলা হয়েছে। জানা গেছে, ওই প্রস্তাব বোর্ডের পূর্ণাঙ্গ মিটিংয়ে না পাঠাতে বোর্ড ও উৎপাদন কমিটিকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব যেন সুপারিশ আকারে পাঠানো না হয়।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পাঠ্যবই মুদ্রণের সময় ও পরে টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন করায় অভিযোগে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কারণ দর্শানো নোটিশের ব্যাপারে পরে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনাকে এসব কথা কে বলেছে, কোথায় শুনেছেন? আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে সে অনুসারেই ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ তিনি অভিযোগের জবাব এড়িয়ে বলেন, আপনারা এমন কথা বলেন এবং অভিযোগ করেন, যার কোনো সত্যতা নেই। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ধরনের কোনো অভিযোগ বোর্ড মিটিংয়ে আসেনি।

এনসিটিবি এসব প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল গত অক্টোবর-নভেম্বরে। অভিযুক্তরা শোকজ নোটিশের জবাবও দিয়েছেন; কিন্তু এনসিটিবি তাদের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে জানা গেছে। কারণ, এনসিটিবির নিজস্ব পরিদর্শক টিমের প্রতিবেদনের সাথে শোকজ নোটিশের জবাবের কোনো মিল নেই বলে এনসিটিবির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, অভিযুক্ত একাধিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবির নিজস্ব পরিদর্শক টিমে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছেÑ ২০১৭ সালের পাঠ্যবইয়ের শুধু কভার (মলাট) পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের বই বলে সরবরাহ করা হয়েছে। পরিদর্শক টিমের অনুমোদন ছাড়াই বইয়ে নি¤œমানের কাগজ-কালি-বাঁধাই করা হয়েছে, সময় মতো ও পরিমাণ মতো বই সরবরাহ না করা অন্যতম।

অভিযুক্ত দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক হচ্ছে সরকারি দলের একজন এমপি। তিনি এনসিটিবি থেকে কার্যাদেশ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকার দলীয় এ এমপি এনসিটিবিকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আপত্তি নেই বলে এনসিটিবিকে বারবার অবহিত করা হয়েছে। বরং বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এনসিটিবি এ ব্যাপারে নীরব।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি আরো বলেন, এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়েছে যে আগামীতে এ কারণে আরো বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে এনসিটিবিকে।

উল্লেখ্য, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে ৩১ কোটির অধিক পাঠ্যবইয়ের পুরোটাই দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করেছে। এ বছর কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান কাজ পায়নি; কিন্তু দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত লঙ্ঘন করায় পুরো মুদ্রণ শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর সুয়োগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির। কারণ এ বছরের পুরো কাজ দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকেরা নিয়েছে। ফলে বিগত দুই বছরের মতো কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পায়নি। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ও এনসিটিবির শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে মুদ্রণ শিল্প মালিকেরা অভিযোগ করেন। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবিকে সার্বক্ষণিকভাবে চাপের মধ্যে রাখেন। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কোনো জবাবদিহিতা নেই এবং তারা কর্তাব্যক্তিদের ‘মনোরঞ্জন’ ও ‘চাহিদা’ পূরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশীয় মুদ্রণ শিল্প মালিকেরা অভিযোগ করেন, বিগত দুই বছর প্রাথমিকের বই বিদেশে ছাপানো হয়েছিল। তাদের বইয়ের ছাপার মান ও কাগজের জন্য যে শর্ত টেন্ডারে উল্লেখ ছিল তা শতভাগ পূরণ করা হয়নি; কিন্তু বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়নি। অথচ তাদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়েছিল এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ফেলা হয়েছিল।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/307697