অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সানেমের সংবাদ সম্মেলন
৫ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১

ব্যাংকিং খাতের অনিয়মে এক বছরে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

সানেমের গবেষণা প্রতিবেদন

ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের কারণে এক বছরে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, দুর্নীতি, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা ও রাজনীতির লোককে ব্যাংক খাতে নিয়োগদান। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি অনেক মানুষের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে হোটেলে বসে সিআরআর কমানো এবং সরকারি তহবিলের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা –শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল গুলশানের এক হোটেলে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সানেমের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. বজলুল হক খোন্দকার, সানেমের পরিচালক ড. বিদিশা ও ইফফাত তানজুম।
অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট দূর করার জন্য সরকার সিআরআর কমিয়ে মোটেও ভালো কাজ করেনি। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত এবং যে প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে তা যথাযথ হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল ইকুইলিব্রিয়াম মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে দেখা গেছে যে, ব্যাংকিং সেক্টরে অদতা বর্তমান পর্যায়ে জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ বার্ষিক তি, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এ পরিমাণ অর্থ সিআরআর কমিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়কার ব্যাংকিং খাতের সঙ্কট অনেক দিন ধরে চলমান কাঠামোগত সমস্যার ফল হিসেবে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, এ খাতে অত্যধিক মাত্রায় অনাদায়ী ঋণ রয়েছে, যা বর্তমানে ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর সাথে ঋণ পুনঃতফসিল ও অবলোপন ধরলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ (এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা) হবে। বাংকিং খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি অনেক মানুষের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে অত্যধিক মাত্রায় ঋণ দেয়ার কারণে এডিআর (অ্যাডভান্স ডেপোজিট অনুপাত) রেশিও ৯০ ভাগের ওপরে দাঁড়িয়েছে।
সানেমের প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এ ধরনের অত্যধিক ঋণদানের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। এখানে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এ ঋণের একটি বড় অংশ অপচয় হচ্ছে। দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেণ ব্যাংকিং খাতের একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা সমর্থিত অনিয়মের কোনো দৃশ্যমান শাস্তি পরিলতি হচ্ছে না। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারায় এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।
এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তাদের তহবিলের ৫০ শতাংশ প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সিআরআর ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশে আনার ফলে ব্যাংকিং খাতে বড় সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো উচিত নয় : সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার কমানো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয় উল্লেখ করে সেলিম রায়হান বলেন, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, ব্যাংক আমানতের সুদের হার ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের অসামঞ্জস্য থাকার জন্য ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যবেক্ষণ ঠিক নয়। কারণ কয়েক বছরের ব্যাংক আমানতে গড় সুদের হার বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের সাথে তার খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। এর পরও মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কিনেছে। এর কারণ ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থার অভাব। তাই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার এ মুহূর্তে কমানো ঠিক হবে না। কারণ এখানে পেনশনাররা বিনিয়োগ করে থাকেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/307665