৫ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৮

রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়মুক্তি পেতে মরিয়া মিয়ানমার

আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার পাওয়া সম্ভব ; তথ্য জোগাড় করছে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ; আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে সমন্বয় প্রয়োজন


রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নৃশংসতার অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পেতে মরিয়া হয়েছে উঠেছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। এ জন্য জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন, মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ারসহ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর রাখাইনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হত্যা ও ধ্বংসের আলামত মুছে দিয়ে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্মাণ করা হচ্ছে সামরিক ঘাঁটি, নিরাপত্তা স্থাপনা ও বৌদ্ধ গ্রাম।

এরপরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসছে গণকবরের চিহ্ন। জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন মিয়ানমার প্রবেশ করতে না পারলেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ব্রিটেন সফর করে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছে। মিয়ানমারে নিষিদ্ধ ঘোষিত জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার ইয়াংহি লি বিশ্ববাসীর সামনে বর্বরতার চিত্র তুলে ধরতে কাজ করছেন। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্ব জনমতের চাপে মিয়ানমার এখন কিছুটা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। বেশ কয়েক মাস অনীহা প্রকাশের পর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সফরের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে মিয়ানমার। নিরাপত্তা পরিষদের রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্বরুপ অনুধাবনের চেষ্টা করবেন। অনেক চেষ্টার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। এ ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরে সংস্থাটির সাথে আলোচনা করছে প্রতিবেশী দেশটি।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং শরণার্থী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেন, গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বাংলাদেশের অনেক কিছুই করার আছে। কারণ নৃশংসতার ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশেই রয়েছে। এ সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুযায়ী সংগ্রহ করা প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কাজগুলো করছে। তবে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর তা না হলেও বেসরকারি পর্যায়ের কাজগুলোকে সরকার সমন্বয় করতে পারে। একই সাথে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তাও নেয়া যেতে পারে।

সি আর আবরার বলেন, লন্ডন ইউনিভার্সিটির কুইন ম্যারি কলেজ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় অপরাধ নিয়ে কাজ করছে। রাখাইনে বড় ধরনের গণহত্যা চলার আশঙ্কার কথা তারা আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়েছিল, যা এখন ঘটছে। বিদেশের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজ করছে। তাদের সাথে সমন্বয় করে গণহত্যার ডকুমেন্টগুলো তৈরি করা গেলে বড় ধরনের একটা কাজ হবে। তিনি বলেন, শুধু রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ নয়, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, লিখিত সাক্ষ্য, ঘটনার দিনক্ষণ, অভিযান পরিচালনাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড স্ট্র্যাকচার প্রভৃতির তথ্য-প্রমাণ হিসেবে ডকুমেন্টেড করতে হবে। এটা তৈরি থাকলে এক সময় অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব।

রোহিঙ্গা গণহত্যার ওপর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আয়োজিত পার্মানেন্ট পিপলস ট্র্যাইব্যুনালে বিশেষজ্ঞের মতামত প্রদানকারী সি আর আবরার বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ না হলেও গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। কেননা তাদের কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে এর প্রতিকার চাওয়া যেতে পারে।

এ দিকে রাখাইনে জাতিগত নিধন অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী মহাসচিব এন্ডু গিলমোর বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার ধরন পাল্টেছে। এখন হত্যা ও গণধর্ষণের পরিবর্তে আতঙ্ক ছড়ানো ও বাধ্যতামূলক অনাহারে রাখার মতো অপেক্ষাকৃত স্বল্পমাত্রার অভিযান চলছে। আর এর লক্ষ্য হলো অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসন একেবারেই অসম্ভব। এখন আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিত রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করা, নৃশংসতার ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।

রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পথে অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে এন্ডু গিলমোর বলেন, প্রথমত: এ মুহূর্তে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য ধরনের নৃশংসতার ঝুঁকি রয়েছে, দ্বিতীয়ত: রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও জীবিকার উৎস ধ্বংস করে দেয়ায় রাখাইন বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এবং তৃতীয়ত: সঙ্কটের মূল কারণগুলো মোকাবেলায় মিয়ানমারের অনিচ্ছা রয়েছে।
রোহিঙ্গা নিধনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির ওপর ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে ইউরোপে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করার জন্য মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বের তালিকা তৈরি করতে জোটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগে ইইউ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ইউরোপ ভ্রমণের আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
মিয়ানমার পরিস্থিতিকে জটিল হিসেবে আখ্যায়িত করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মোঘেরিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় ইইউকে একসাথে দুই দিক সামাল দিতে হচ্ছে। একদিকে মিয়ানমারের নবীন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দিকে নজর রাখতে হচ্ছে, যাতে ঘড়ি পেছন দিকে ঘুরে না যায়। দ্বিতীয়ত, আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হচ্ছে। এটা একটা কঠিন কাজ। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নয়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়োজন ছিল, তা হয়েছে। এটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। এখন রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সাথে ফেরানোর কঠিন কাজটায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ইতঃপূর্বে মিয়ানমারের মেজর জেনারেল মং মং সোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মেজর জেনারেল সো গত আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালানোর সময় রাখাইন অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন।

রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিরসনে গত ২৪ আগস্ট আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিনই পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে সশস্ত্র হামলার অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের সাথে যোগ দেয় উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা। ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের হিসাব অনুযায়ী, হামলা শুরুর প্রথম এক মাসেই ছয় হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৭৩০। হামলার ভয়াবহতার কারণে মাত্র সাত মাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় নিপীড়নের শিকার হয়ে আগে থেকেই বাংলাদেশে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামরিক অবরোধের মুখে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। কিন্তু মিয়ানমার পার্লামেন্টের এক-তৃতীয়াংশ আসন এবং স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে থেকে যায়। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনী বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা রাখাইনের মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে ১৯৭৮, ১৯৯১, ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দফায় দফায় সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের দমন-পীড়ন চলে। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি এডামা দিয়াং বলেছেন, পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে গত আগস্টে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো অভিযান সম্পর্কে আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল এবং তা প্রতিরোধযোগ্যও ছিল। এ ব্যাপারে আমি অসংখ্যবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বালুতে মাথা ঢুকিয়ে রেখেছিল। এ জন্য রোহিঙ্গাদের জীবন, মান-সম্মান ও বাসভূমি বিসর্জন দিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে।
রাখাইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে মুসলিম সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, রাখাইনকে রোহিঙ্গাশূন্য করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। সম্ভবত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকেই ধ্বংসের করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। এটি প্রমাণিত হলে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা গণহত্যার পর্যায়ে পড়বে। তবে এই ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হোক বা না হোক, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কেননা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে আমরা ঋণী।

মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ না হলেও নৃশংসতার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, সুদান বা লিবিয়াও আইসিসি সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল না। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে এ দুই দেশের অপরাধীদের আইসিসিতে বিচারের সম্মুখীন করা গেছে। সেনেগালের একজন অপরাধী ২০ বছর নির্বাসনে থাকার পর আন্তর্জাতিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে গেছেন।
জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের অনুসন্ধান : জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান গত ১২ মার্চ তাদের তদন্তে ফলাফল মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৭তম অধিবেশনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরও মিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য তথ্যের কোনো ঘাটতি ছিল না। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ব্রিটেনে অনেক সময় ধরে অবস্থান করে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিম ও সাক্ষীদের ছয় শ’র বেশি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের সাথে বহুবার আলোচনা হয়েছে।

মারজুকি বলেন, রাখাইনের মংডু, বুথিডং ও রথিডংয়ের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এলাকাগুলোতে পূর্বপরিকল্পিত সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাপকভিত্তিক আক্রমণ করা হয়েছে। আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ আগেই রাখাইনে সৈন্য সমাবেশ বাড়ানো হয়। ২৫ আগস্ট আরসার আক্রমণের জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী তিনটি এলাকায় একই ধরনের কিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। উপগ্রহের ছবিতে এ রকম ৩১৯টি গ্রাম চিহ্নিত করা গেছে। সৈন্যদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। অনেককে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। বৃদ্ধ, শিশুসহ পালাতে অক্ষমদের জীবন্ত আগুনে পোড়ানো হয়েছে। অনেককে কুপিয়ে বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ছিল খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির। অনেক নারীকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অনেক শিশুও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের পরবর্তী অধিবেশনে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/307666