৪ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ১০:১২

১১ হাজার টন ইউরিয়া খোলা আকাশের নিচে

ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ ইউরিয়া খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বিসিআইসির বাফার গুদামের বাইরে ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ১১ হাজার টন সার রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই সারগুলো জট বেঁধেছে। সারের নির্যাস পাশের জলাশয় এবং ফসলের জমিতে পড়ছে। এতে গুদামের আশপাশের কয়েকশ’ একর জমি ফসলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। গুদামের অব্যবস্থাপনা, মজুত ও বিতরণে অনিয়ম এবং ‘ফাস্ট ইন ফাস্ট আউট মেথড’ না মানার কারণেই পাঁচ বছর ধরে এসব সার খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে।

গুদম কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিমধ্যেই এসব সার নষ্ট হয়ে গেছে। ইউরিয়ায় যেসব উপাদান থাকে তার কিছুই নেই পড়ে থাকা সারগুলোতে। কৃষির বগুড়া আঞ্চলিক অফিস জানিয়েছে, ইউরিয়ার বর্তমান সরকারি মূল্য ১৬ টাকা কেজি। সেই অনুযায়ী ১১ টনের দাম ১৭ কোটি টাকা। শুধু কর্মকর্তাদের অবহেলার জন্য সান্তাহারের বাফার গুদামের ১৭ কোটি টাকার ইউরিয়া নষ্ট হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কৃষকের কপালও পুড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সার ব্যবহারের ট্রানজিট গুদাম হিসেবে এক সময় ব্যবহার করা হতো বগুড়ার সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামটি। সার মজুদের নতুন নতুন গুদাম বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠায় এটি আর ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তবে আপদকালীন মজুত থাকে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার শহরের পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার আট উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৩ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে এখান থেকেই ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। সেই সঙ্গে বগুড়া জেলার ১৬০ জন ডিলারও ওই গুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব ডিলারকে এখান থেকে সময়মতো সার না দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলায় পড়ে আছে। বর্তমানে সারগুলো জট বেঁধে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কোনো ডিলার আর সেই সার নিচ্ছেন না। ডিলারদের বক্তব্য, নষ্ট সার নিয়ে তারা কী করবেন। এসব সার ব্যবহারের অনুপযোগী বলেও তারা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে বিপুল পরিমাণ সার পড়ে থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে নষ্টসহ আশপাশের ফসলি জমি ও জলাশয়ে ছড়িয়ে যাওয়াতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষক ও মাছচাষিদের। পুরনো জমাট বাঁধা এসব ইউরিয়া সার বিক্রি করতে না পারায় সার গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন ডিলাররা। এসব ডিলার ২০১৭ সালের শেষের দিকে বিষয়টি নিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। সে সময় ডিলারদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুদামের মজুদ পরিস্থিতি জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বগুড়ার সান্তাহার গুদামে কাফকো থেকে ৭২৪.৬১, শাহজালাল থেকে ৭৪৮.১৬ ও আমদানিকৃত ৩০ হাজার ২২০.৬৪ মে. টন সার মজুদ আছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৪৫.০৫ টন সার গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। এসব সার পলেথিন ও ত্রিপল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। এসব সার রোদ-বৃষ্টিতে জমাট বেঁধে শিলাখণ্ডে পরিণত হয়েছে। এছাড়া একই অবস্থা গুদামের ভেতরে রাখা প্রায় আট হাজার টন ইউরিয়া সারের।

কৃষিবিদ মেহেদী হাসান জানান, ইউরিয়া সারে মূলত ৭৮% নাইট্রোজেন থাকে। ফলে ওই সার খোলা আকাশের নিচে রাখলে বাতাসে গলে নষ্ট হয়ে যাবে। যদি বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেট করে রাখা হয় তাহলেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভালো থাকবে। তিনি আরো জানান, ইউরিয়া সার কোনোভাবেই ৫ বছর ভালো রাখা যায় না।

এসব বিষয় নিয়ে সান্তাহার বাফার গুদাম ইনচার্জ আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথমে জানান, এসব সার আমি রাখিনি। যিনি রেখেছেন তাকে জিজ্ঞেস করেন। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে যখন জানতে চাওয়া হলো আপনি তো এই গুদামের ইনচার্জ, আপনি কেন জানেন না সারের বিষয়ে? তাহলে আপনার গুদামের বাইরে এসব কে রাখলো? তখন তিনি তথ্য দিলেন সান্তাহার গুদামের ধারণক্ষমতা ১৬ হাজার টন। বর্তমানে মজুদ আছে ২৮ হাজার টন। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত থাকায় অধিকাংশ সারই বাইরে খামাল দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সার মজুদ ও বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=111800