৪ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ১০:১১

১০ হাজার কোটি টাকা নিলেন ব্যাংক মালিকরা

অবশেষে ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিলেন ব্যাংকের মালিকরা। এসব টাকা সাধারণ মানুষের আমানত। নিরাপত্তার স্বার্থে এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে- এখন থেকে নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে মালিকদের ১০ হাজার কোটি টাকা নিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
তবে এ ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা। তাদের মতে, এতে ঝুঁকিতে পড়বে আমানতকারীরা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কোমর ভেঙে যাবে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুগান্তরের কাছে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ এ সম্পর্কিত পৃথক দুটি সার্কুলার জারি করেছে। সিআরআর সম্পর্কিত সার্কুলারে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক (শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ) কর্তৃক তাদের মোট তলবি ও মেয়াদি দায় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা রাখার যে বিধান রয়েছে এর পরিমাণ সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে সাড়ে ৫ এবং ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।

রেপো রেট সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশে পুনর্নির্ধারিত হলো। উল্লেখ্য, রিভার্স রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংক মালিক ও এমডিদের সঙ্গে গত শুক্র ও শনিবার বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। ওই দুই সভার মাধ্যমে সরকারি আমানতের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত দেন অর্থমন্ত্রী। যা পরদিন থেকেই কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়। বাকি ৩টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর সময়সীমা ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের বৈঠকের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক মালিকদের সামনে গভর্নরকে বসানো একটি অবাঞ্ছিত কাজ। পাকিস্তান আমল থেকে এখন পর্যন্ত এটি প্রথম ঘটনা। এভাবে মালিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে বসতে হলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোমর ভেঙে যাবে। এ সংস্কৃতি চালু হওয়া নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় টাকা বের করা হল, তা মোটেও ঠিক হয়নি। বিএবি নেতা, অর্থমন্ত্রী এবং গভর্নর মিলে এভাবে টাকা নিতে পারেন না। এ টাকা দেয়া হবে কি হবে না সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ছিল গভর্নরের। কিন্তু তাকে প্রভাবিত করতে পারেন না অর্থমন্ত্রী। এটা নজিরবিহীন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, পুরো ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য খারাপ। এরপরও একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। আসলে এসব সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি কি গুটিকয়েক ব্যাংক মালিকের স্বার্থ দেখবেন নাকি করদাতা কোটি কোটি আমানতকারীর স্বার্থ দেখবেন। সেটা এখন ভেবে দেখার বিষয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, জনগণের আমানতে হাত দেয়ার আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ছিল। তাদের অনুমতি ছাড়া এভাবে টাকা নেয়া ঠিক হচ্ছে না। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলাপ করার দরকার ছিল।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, উদ্দেশ্য অর্জন হবে কি-না সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো এবং তারল্য সংকট মেটানো। সব ব্যাংকের তারল্য সংকট নেই। যারা নিয়মের বাইরে গেছে তাদের তারল্য সংকট। মূলত খেলাপি ঋণের উচ্চহার, বেপরোয়া ঋণ বিতরণের কারণে এমনটি হয়েছে। এখন তাদেরকে আমানত দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/34725