৪ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ১০:১১

বেসরকারি ব্যাংকের টার্গেট ১ লাখ কোটি টাকা

সরকারি আমানতের অভিন্ন সুদ হার এবং কে কত টাকা পাবে তা নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি

এক লাখ কোটি টাকার বেশি সরকারি আমানত নিজেদের ভোল্টে আনতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো হামলে পড়েছে। তারল্য সংকটের মধ্যে সরকারি অর্থের ৫০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্তের পর ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে মরিয়া। কে কত টাকা নেবে, কিভাবে নেবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আগেই মাঠে নেমেছেন অনেক ব্যাংকের প্রতিনিধি। এ লক্ষ্যে তারা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিচ্ছেন। সরকারি আমানত বের করে নিতে প্রভাবশালী ব্যাংক মালিকরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারি আমানতের অভিন্ন সুদ হার এবং কে কত টাকা পাবে তা নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি উঠেছে। অন্যথায় সুবিধাটির অপব্যবহার হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতের লুটেরাদের কোনো বিচার হয়নি। সীমাহীন দুর্নীতি আর ঋণ অনিয়মের কারণে বাড়ছে খেলাপি, তার শাস্তিও হয়নি। তারল্য সংকটের মূল কারণ বেপরোয়া ঋণ। সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো দেয়া হচ্ছে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফারমার্স ব্যাংকের কাছে জলবায়ু তহবিলের ৫০৯ কোটি টাকা আটকে আছে, দিতে পারছে না। এভাবে জনগণের অর্থ দেয়া ঠিক হয়নি। আগের বিধান অনুযায়ী ২৫ শতাংশের সামান্য বেশি দেয়া যেতে পারে। তবে তা কিছুতেই ৫০ শতাংশ হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, অর্থ দেয়ার আগে শর্ত দিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংক এবং যে অর্থ দেবে দায়-দায়িত্ব তার এমন বিধান থাকতে হবে।

ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যাংক মালিক ও এমডিদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ রাখা যাবে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। এরপর গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রসঙ্গত আগে সরকারি অর্থের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) টাকা ২০ শতাংশ এবং মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থের ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান ছিল। নতুন সিদ্ধান্তের পর আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলো কাড়াকাড়ি শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হালিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সরকারি আমানত নেব। হুড়োহুড়ি করার কিছু নেই। তবে যারা আগে থেকে আগ্রাসী ব্যাংকিং করে আসছে তারা হয়তো এমপি-মন্ত্রীদের ফোনে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। সেটা নিশ্চয় ভালো হবে না।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরফান আলী যুগান্তরকে বলেন, আমানত নেয়ার জন্য সবাই চেষ্টা করবে। যেহেতু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি যে ব্যাংকের কাছে টাকা রেখে নিশ্চয়তা পাবে, তারা সেখানেই যাবে। তবে এর সঙ্গে চেষ্টা-তদবির তো থাকবেই। সবাই চাইবে তার কাছেই বেশি টাকা আসুক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। এর ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিতে পারবে। অর্থাৎ ১ লাখ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাবে বেসরকারি ব্যাংক। প্রসঙ্গত, ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকটের সমাধান খুঁজতে গত শুক্রবার রাতে ব্যাংক মালিক ও এমডিরা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত রাখার সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তই প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ডিএমডি যুগান্তরকে বলেন, সরকারি আমানত সংগ্রহে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছি। এটা আগেও ছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন সার্কুলারের পর এর মাত্রা বেড়েছে। দৌড়ঝাঁপ করলেও এখন পর্যন্ত এক টাকাও আসেনি। তিনি বলেন, সরকারি আমানত পেতে অভিন্ন সুদহার এবং কে কত টাকা পাবে তা নির্ধারণ করে না দিলে সুবিধার অপব্যবহার হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে ফারমার্স ব্যাংকসহ লুটপাটকারী ব্যাংকগুলো আবার বেশি অর্থ নিয়ে যাবে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহে নিয়োজিত এক কর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমানত সংগ্রহে যাচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই মোটা অঙ্কের অর্থ পাব। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের শেষ কয়েকদিন এবং আগামী সপ্তাহে আমানত সংগ্রহে চূড়ান্ত পর্যায়ের হুড়োহুড়ি লাগবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, এবি ব্যাংক ও অপর একটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কয়েকদিন ধরে আমানত সংগ্রহে ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু এখনও তারা আমানত পাননি। খুব শিগগিরই আমানত পাবেন বলে তারা আশাবাদী।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/34723