৪ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ১০:০৮

অর্থসঙ্কটে এনসিটিবি

বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ছাপার কাগজ সঙ্কটের শঙ্কা

টেন্ডারে দর বেশি হাঁকায় পুনঃটেন্ডার

আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০১৯) বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ছাপার কাগজ সঙ্কটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের দাম দিন দিনই বাড়তে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও চলতি বছরের শেষ দিকে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে কাগজের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। এতে মুদ্রণ কাগজের চাহিদা ও সঙ্কট তীব্র বা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থাকে বিবেচনায় রেখেই মূলত বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজ আগেভাগে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু বর্তমানে এনসিটিবি মারাত্মক অর্থসঙ্কটে পড়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণসংক্রান্ত সব কাজেই সøথ ও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০১৯) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের প্রায় ৩৭ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করতে হবে। এ জন্য প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ছাপার কাগজের প্রয়োজন পড়বে। আর এনসিটিবির সংগ্রহে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার মেট্রিক টন কাগজ। আরো ২৭ হাজার মেট্রিক টন ছাপার কাগজের প্রয়োজন। এ কাগজ এককভাবে রাষ্ট্রীয় পেপার মিল কর্ণফুলী থেকে সংগ্রহণ করাও সম্ভব নয়। তারা এত অল্প সময়ের মধ্যে তা সরবরাহ করতেও অক্ষম বলে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে খোলাবাজারই একমাত্র ভরসা। এ জন্য এনসিটিবি টেন্ডার আহ্বান করেছিল। গত ৩০ মার্চ টেন্ডার খোলার পর দেখা গেল, যা ধারণা করা হয়েছিল তারও বেশি বাজার মূল্যের টেন্ডার পড়েছে।

এনসিটিবির সূত্র মতে, যারা টেন্ডার অংশ নিয়ে দরপত্র ফেলেছেন, তার সর্বনি¤œ দরদাতা হচ্ছে, প্রকার ভেদে ৮৫ হাজার টাকা এবং ১ লাখ ১ হাজার টাকা। এতেই কর্তাব্যক্তিদের ‘চোখ কপালে উঠেছে’। কারণ, গত শিক্ষাবর্ষে এ কাগজই কিনেছিল, ৬৪ হাজার থেকে ৬৮-৭০ হাজার টাকায়। তাই ছাপার কাগজ এখন কিনবে কি কিনবে না? তা নিয়ে এক ধরনের ধাঁধায় পড়তে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ মুহূর্তে আগে কাগজ কিনবে নাকি অন্য কাজ করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, আহূত টেন্ডারে দর বেশি হাঁকায়, পুনঃটেন্ডার করা হবে।
এদিকে, ছাপার কাগজের সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তারা বলেন, ছাপার কাগজ নিয়ে বই মুদ্রণকারীদের ‘নয়-ছয়’ প্রতি বছরই ঘটে। চলতি বছরের পাঠ্যবইয়েও একই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ পাওয়া প্রায় অর্ধডজন মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান। তারা এনসিটিবির পরিদর্শক টিমের চোখ এড়িয়ে অনেক বই সরবরাহ করেছে। আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ের ছাপার জন্য কাগজ সঙ্কট প্রকট হলে তাদের জন্য ‘সাপে-বর’ হয়ে দেখা দেবে। সময়মতো এনসিটিবি বই ছাপার কাগজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলেই তারা নি¤œমানের কাগজে বই ছাপাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সময়মতো বই না দিতে পারলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে। প্রতি বছরই টেন্ডারের শর্তমতো পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় থাকে। কাগজ সঙ্কটের কারণে এ সংশয় আরো প্রকট হবে।

এনসিটিবি অর্থ এবং ছাপার কাগজের সঙ্কট সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কাগজের নাম বেশি হলে বেশি দামেই সরকার কাগজ কিনবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় দেখছি না। তিনি পুনঃদরপত্র আহ্বান এবং সংস্থার বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, যথাসময়েই বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে। এখনো অনেক সময় হাতে রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/307429