যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এভাবে রাস্তা আটকে চলছে হকারদের ব্যবসা
৩ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২০

বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা না বাজার

স্পট : যাত্রাবাড়ী গোল চত্বর

এটি রাস্তা না বাজার দেখে বোঝার উপায় নেই। পুরো রাস্তাজুড়েই নানা পণ্যের দোকান। কাপড়চোপড়, ফলমূল, মাছ-মুরগি, তরিতরকারি কিসের দোকান নেই এখানে। রয়েছে ক্রেতার ভিড়ও। শত শত মানুষ রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য কেনাকাটা করছে। এটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার চিত্র। এখানে কম করে হলেও ৫ শ’ দোকান রয়েছে।

ঢাকার ব্যস্ততম এ রাস্তার ওপর এ ধরনের একটি প্রকাশ্য বাজার বসতে দেয়ার হেতু অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতার কাহিনী।
যাত্রাবাড়ী মোড়ের যানজট অনেক দিনের চিত্র। উড়াল সেতুও এখানকার যানজট নিরসন করতে পারেনি। এই এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী সিদ্দিক বলেন, উড়াল সেতুতে যানজট নেই ঠিকই। তবে নিচের যানজট কমেনি। তিনি বলেন, যানজট হয় মূল গোল চত্বরটি ঘিরে। আশপাশে হকার বসেছে কম হলেও ৫ শ’। তিনি বলেন, হকাররা রাস্তার অর্ধেকই দখল করে রাখে। যানজট হবে না কেন?
শুক্রবার দুপুর ১২টায় যাত্রাবাড়ী মোড়ের উত্তর-পশ্চিম পাশের রাস্তায় অন্তত দুই শ’ হকার দেখা যায়। এক একজন হকারের সামনে রয়েছে অন্তত দু’টি ঝুড়ি। তাদের মাথার ওপর বড় আকৃতির ছাতা। সেন্টু নামের এক হকার জানালেন, রোদ এবং বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এই ছাতার ব্যবহার। বেশ কিছু ছাতা থাকার কারণে স্থানটি যে রাস্তার অংশ তা বোঝা যাচ্ছিল না। আবার অনেকে ভ্যানের ওপর পণ্য সাজিয়ে বিক্রি করছে। গোল চত্বরের চার দিক ঘিরে একই অবস্থা। গাড়িগুলো আসছে, যানজটে আটকে থাকছে। অথচ এখানে কোনো যানজট থাকারই কথা নয়। এখানেই রাস্তার পাশে বিশাল একটি মুরগির আড়ত বসানো হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বলছেন, রাস্তার পাশে এভাবে মুরগির আড়ত পুরো এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই এলাকায় এভাবে হকার বসিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এই হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তুলছে ওই চক্রটি। সূত্র জানায়, প্রতি হকারের কাছ থেকে কম হলেও দুই শ’ টাকা চাঁদা নেয়। আবার কোনো কোনো স্থানে দিনে দুই দফায় চাঁদা আদায় হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার শুক্রবার বলেন, বসার জন্য যে স্থানটি তারা বরাদ্দ পেয়েছেন তার জন্য অগ্রিমও দিতে হয়েছে। আর প্রতিদিনের বখরা তো রয়েছেই। ফল বিক্রেতা ওই হকার বলেন, তারা যে চাঁদা দেন তা ক্রেতাদের কাছ থেকেই তুলে নেন। প্রতি কেজি ফলে কম হলেও ১০ টাকা বেড়ে যায়। একই কারণে এসব হকার মানুষের সাথেও প্রতারণা করে। সুযোগ পেলেই তারা খারাপ পণ্য ধরিয়ে দেয় ক্রেতাদের। অনেক সময় ওই খারাপ পণ্য নিতে না চাইলে ক্রেতাদের সাথে খারাপ আচরণ করে হকাররা। যদি কেউ প্রতিবাদ করতে যায়; তখন সব হকার একজোট হয়ে ক্রেতাদের নাজেহাল করে। তাদেরকে সহায়তা করে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও কিছু পুলিশ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চাঁদার এই টাকার বড় অংশ নিয়ে যায় পুলিশের কিছু সদস্য। আর সে কারণেই দিনের পর দিন রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হলেও সে নিয়ে মাথাব্যথা নেই পুলিশের। উল্টো একজন হকার বাড়লেই দিনের বখরা বাড়বে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকার সর্দার হচ্ছে সোনামিয়া। অন্যান্যের মধ্যে আছে তোরাব আলী, জুলমাত, আবুল কালাম ও মান্নান। এরা ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে মাস্তান, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের মধ্যে বণ্টন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/307107