১ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:২৮

মৃত্যুর ঝুঁকি পদে পদে

বড় বড় গর্ত। সিএনজি অটোরিকশা দূরে থাক, সেই গর্তে ট্রাকের চাকাও আটকে যায়। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় প্রায় ১২ ইঞ্চি কাদা জমে যায়। কখনো কখনো চাকা পিছলে গাড়ি পড়ে যায় রাস্তার বাইরে। আর বৃষ্টি না হলে সারাক্ষণ ধুলোয় ধূসর হয়ে থাকে। আশপাশের বাড়ি-ঘর, দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধুলায় সাদা হয়ে যায়। কখনো কখনো ধুলার কারণে দৃষ্টি সীমিত হয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে যানবাহন। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে মাতুয়াইল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলেন এই রাস্তাটুকুতে প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটছে।
যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রোড। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এবং লাখ লাখ লোকের যাতায়াত এই রাস্তা দিয়ে। বাইরের গাড়িগুলো রাজধানীর যেসব পয়েন্ট দিয়ে ঢোকে তার অন্যতম প্রধান পয়েন্ট হলো এই ডেমরা রোড। এই রাস্তার যে স্থানটিতে উড়াল সেতু গিয়ে মিশেছে তার এদিক-ওদিক মিলিয়ে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। কদমে কদমে মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এই পথটুকু চলতে হচ্ছে। গতকাল দুপুরের দিকে ওই রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় দেখা যায় ধুলোয় পুরো রাস্তাটি আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ধুলোর কারণে রাস্তার দু’হাত দূরে কী আছে তা-ও বোঝা যায় না। এরমধ্যে বড় বড় গর্ত। কিছু দেখতে না পাওয়ায় চালক কখনো কখনো এই গর্তেই ঢুকিয়ে দিচ্ছেন গাড়ির চাকা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দেখা যায়, একটি লেগুনা থেমে গেছে, তার ওপর আছড়ে পড়ছে দু’টি সিএনজি অটোরিকশা। উড়াল সেতুর ঠিক গোড়ায় এই পরিস্থিতিতে সিএনজি অটোরিকশার দু’যাত্রী সামান্য আহত হলেন। আব্দুল জব্বার নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি ডেমরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে কাজ করেন। বাসা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায়। প্রায়ই যাত্রাবাড়ী আসতে হয়। এই আসা-যাওয়ার রাস্তায় প্রায়ই তিনি দুর্ঘটনা দেখতে পান। শেষ পর্যন্ত নিজেকেই পড়তে হলো দুর্ঘটনায়। ডেমরার পাইটি এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসায় করেন সিরাজউদ্দিন। যাত্রাবাড়ীর পাইকারি মার্কেট থেকে তিনি তরিতরকারি কিনে নেন। ওই পথটুকু যখন পার হন তখন সারাক্ষণ দোয়া পড়তে থাকেন।

গতকাল বিকেলে ওই রাস্তা দিয়েই ফেরার সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টিতে রাস্তায় এক হাঁটু কাদা। ধুলা এখন কাদায় পরিণত হয়েছে। গর্তগুলো ভরে গেছে পানি আর কাদায়। গাড়ির এক একটি চাকা ওই গর্তে পড়ছে আর পানি কাদা ছিটকে পড়ছে রাস্তার পাশে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষ পানি কাদায় লেপ্টে যাচ্ছে। মুখ তুলে বকাবকি করছে গাড়ি চালককে। কিন্তু গাড়ি চালক নিরুপায়। কর্দমাক্ত ওই রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে কয়েকটি মোটরসাইকেলের রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে গতকাল সন্ধ্যার দিকে। স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী শাকিল জানালেন, প্রায় দু’বছর ধরে একই অবস্থা। সংস্কারের নামে ফেলে রাখা হচ্ছে মাসের পর মাস। রাস্তার গর্তগুলোও যদি ভরাট করে দিত তাহলেও মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমত বলে শাকিল উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, ক্রেতা-বিক্রেতা, বাড়ির মালিক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রাহকরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। সকালে দোকান খুললে ধুলো জমতে শুরু হয়। আর যখন দোকান বন্ধ করেন তখন দোকানের ভেতরে দুই আঙুল পুরো হয়ে যায় ধুলোয়। সাইদুল নামে এক পথচারী বলেন, অনেক সময় ভয়ে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। এই রাস্তাটুকুতে বাসে চড়তে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলেন, বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একজন জানালেন, কে এই রাস্তাটুকু সংস্কার করে দেবে তা নিয়ে তারা দ্বিধায়। যে কারণে সংস্কার হচ্ছে না এবং দিন দিন সমস্যা আরো বাড়ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306596