১ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:১৯

ইমাম রশিদির অনুপম উদাহরণ

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে অনুপম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের একটি মসজিদের ইমাম। সেখানে রামনবমী নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় ইমাম মাওলানা ইমাদুল রশিদির ১৬ বছর বয়সী কিশোর ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু মাওলানা রশিদি প্রতিশোধ স্পৃহার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। বরং ছেলের জানাযায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি আমার ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আমি এই মসজিদ ও শহর ছেড়ে চলে যাব। ঘটনা প্রসঙ্গে ইমাম রশিদি বলেন, ‘আমার ছেলেকে একদল দুর্বৃত্ত তুলে নিয়ে যায়। আমার বড় ছেলে তখন পুলিশকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তাকে পুলিশ স্টেশনে বসিয়ে রাখা হয়। পরে আমরা জানতে পারি যে, পুলিশ একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।’

বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে কিশোর সিবতুল্লাহ রশিদির জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইমাম রশিদি শান্তির ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘আমি শান্তি চাই। আমার ছেলে চলে গেছে। আমি চাই না আর কোন পরিবার তাদের প্রিয় কাউকে হারাক। আমি চাই না আর কোন ঘর পুড়ে ছারখার হোক।’ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে আরো বলা হয়, আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিত্তয়ারি বলেন, সিবতুল্লাহ রশিদির হত্যাকা- নিয়ে মুসলমান যুবকরা উত্তেজিত ছিল। তাদেরকে শান্ত করতে ইমাম সাহেবের বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা ইমাম সাহেবকে নিয়ে গর্বিত। নিজের ছেলে হারানোর যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি শান্তির ডাক দিয়েছেন। এদিকে আসানসোল ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসিম আনসারি বলেন, ‘এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, পুরো দেশের জন্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি যদি শান্তির ডাক না দিতেন তাহলে আসানসোলে আগুন জ্বলতো।’

হিন্দুত্ববাদী শাসকদল বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে সহিংসতা উপদ্রুত আসানসোলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। উল্লেখ্য যে, রামনবমীর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ধর্মীয় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় আসানসোল জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে তালিকাভুক্ত করেছে স্থানীয় পুলিশ। শুধু আসানসোলে নয় পুরো পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই চলছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। বৃহস্পতিবার দাঙ্গায় নিহত হয়েছে আরো ২ জন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, হিন্দু ধর্মের উৎসব রামনবমীকে কেন্দ্র করে রোববার শুরু হওয়া দাঙ্গা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে সিবতুল্লাহ রশিদি হত্যাকা- প্রসঙ্গে প্রশাসন বলেছে, আমরা দোষীদের বিচারের আওতায় আনবো। কাথার বাস্তবায়ন অবশ্যই দেখার মতো একটি বিষয় হবে।

http://www.dailysangram.com/post/324830