৩১ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:২৮

রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তায় ব্যাপক কাদা

স্বল্প সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঝড়োহাওয়া ও শিলাসহ বৃষ্টিতে ফসলসহ বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ মুহূর্তে ক্ষেতে রয়েছে ধান, ভুট্টা, তামাক ও সবজি। আবার মওসুমি ফসল আম ও লিচুর মুকুল গজিয়ে সবেমাত্র ছোট ছোট করে ফল দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মূলত ঢাকা, ময়মনসংিহ, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে কম- বেশি বৃষ্টি ও ঝড়োহাওয়া বয়ে গেছে। অনেক দিন খরতাপে পোড়ানোর পর এ বৃষ্টি বেশ স্বস্তির হলেও দেশের কোনো এলাকায় মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে কাদাময়। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় মাটি ও ধুলো পানিতে মিশে কাদা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিস্তৃত এলাকায়।

রাজধানী ঢাকায় যদিও শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি কিন্তু বিকেল ৫টার দিকে উত্তরা এবং ৬টার দিকে পুরো ঢাকায় হঠাৎ করেই আকাশ কালো করে ঝম ঝম বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। এক নাগাড়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বৃষ্টি ঝড়ে রাস্তায় সাময়িকভাবে পানি জমে যায়। অনেক দিন পর বৃষ্টি হওয়ায় অনেককে জ্বর হতে পারে জেনেও বৃষ্টিতে ভিজে শরীর উত্তাপ কমিয়ে নিতে দেখা যায়। আবার রাজধানীবাসী ফ্ল্যাটের দরোজা-জানালা খুলে বৃষ্টি উপভোগ করেছেন। আবহাওয়া বিভাগ রাজধানীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে জানালেও কোনো কোনো এলাকায় ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ও তার আগের রাত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবশ্য থেমে থেমে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় সিলেটে ৪৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া নেত্রকোনায় ৩৪, ময়মনসিংহে ১০, নিকলীতে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার খবর জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবার দেশের প্রায় সর্বত্র দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সাথে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।

শিলাবৃষ্টি ও ঝড়োহাওয়ায় ফসল ও বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে এমন লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায়। এখানে হাজারো দরিদ্র মানুষের ঘরের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড় বড় শিলাখণ্ড পড়ে। জানা গেছে, এ উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে গত বছর ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে এতে কৃষককেরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা এখনো তারা পোষাতে পারেননি। আবারো শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বিপদ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সেখানকার মানুষ। হাতিবান্ধা থেকে মকবুলুর রহমান মিঠু জানিয়েছেন, গতকাল সকালে মাত্র ৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে বেশির ভাগ টিনের চালা ছিদ্র হয়ে যায়। এ ছাড়া ধান, ভুট্টা, আম, লিচু ও সবজির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সেখানে প্রথম দফা শিলাবৃষ্টি হওয়ার আধা ঘণ্টা পর আবারো আরো ভারী হয়ে পড়তে থাকে। এত ঘন ও ভারী শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের টিনের চাল ভাঙার পাশাপাশি মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বর ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। বয়স্করা মন্তব্য করেছেন, তাদের জীবনে দেখা ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি এটি। তারা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আশু পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
শিলাবৃষ্টি হয়েছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে। নবাবগঞ্জের শিবলি সাদিক জানিয়েছেন, তীব্র শিলাবৃষ্টি মানুষের স্বপ্নকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। তারা যে আবার কবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন আল্লাহই জানেন। মাটিতে নুয়ে পড়েছে গম ও ভুট্টার ক্ষেত।

ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশের রাস্তা, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তায় কয়েক দিন ধরে রাস্তা খোঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ চলছে। মাটি সঠিকভাবে না সরানোর কারণে অবশিষ্ট মাটি ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এত দিন ধুলো উড়াতো এসব মাটি। আর গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কাদায় ভরে গেছে আশপাশের বিভিন্ন রাস্তা।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306298