৩১ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:২৭

ছয় বছরে ৩৭ বার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘœ

৫০ বছর আগের আশুগঞ্জ সাব স্টেশনটি ঝুঁকিপূর্ণ

দীর্ঘদিনের পুরনো সাব স্টেশনের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। শুধু আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ঝুঁকিপূর্ণ একটি সাব স্টেশনের জন্যই গত ২০১৩ সালের মে থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছরে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে ৩৭ বার বিঘœ ঘটে। যার প্রভাব পড়ছে সারা দেশে। এ ছাড়া ২০০৭ সালে একই সাব স্টেশনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয় বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করা হয় আশুগঞ্জ পাওয়া স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। ওই এলাকায় স্থাপিত এআইএস সাব স্টেশনটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়ত আশুগঞ্জ পাওয়া স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডে (এপিএসসিএল) এ লোড বাড়ছে। সেখানে ওয়ানভিত্তিকে ডাবল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্সুলেটরের ক্যাপাসিটি কম। এমনকি উন্মুক্ত জায়গায়তে সাব স্টেশনটি নির্মিত হওয়ায় নানা রকম অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। গ্রাউন্ডিং সমস্যা দেখা দেয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩৭ বার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটে এই স্টেশন থেকে।

ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকবার সার্কিট ব্রেকার পরিবর্তনসহ ইনসুলেটর সংস্কার করে সাব স্টেশনটি কোনো রকমের কার্যক্ষম করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে বারবার সংস্কার করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে সাব স্টেশনটি চালানো যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ সাব স্টেশনে কোনোরূপ সমস্যা হওয়ার কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে। কারণ সাব স্টেশনটির আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে স্থাপনের কারণে এর নিরাপত্তাজনিত ত্রুটিও রয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকা, উত্তরবঙ্গ, ঘোড়াশাল, ময়মনসিংহ ও সিরাজগঞ্জসহ সারা দেশে সঞ্চালন করা হয়। তাই এই কেন্দ্রটির ১৩২ কেভি পুরনো এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হাবগুলোর একটি। গ্রিড উপকেন্দ্রের ১৩২ কেভি বাসের ৭টি ডাবল সার্কিট লাইন এবং ৭টি উৎপাদন ইউনিট এর সাথে সংযুক্ত। ১৩২ কেভি বাসে সংযুক্ত সার্কিট ব্রেকারগুলোর মধ্যে কিছু সার্কিট ব্রেকারের বর্তমানে আশুগঞ্জ বাসে সর্বোচ্চ ফল্ট লেভেল ৪২ কেএ, যা আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ৫৫ কেএ তে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সব সুইচ গিয়ার উচ্চতর রেটিংয়ের সুইচগিয়ার দ্বারা প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো পুরনো হওয়ায় ইকুইপমেন্ট ব্যর্থতার কারণে আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি এআইএস উপকেন্দ্রে প্রায়ই স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আশুগঞ্জ ও তার পাশর্^বর্তী এলাকায় সরকারি মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বেসরকারি মালিকানাধীন পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে দুই হাজার মেগাওয়াট। আশুগঞ্জের ৯টি ইউনিটের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৬৪৬ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎই জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন এখনো বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যা ১৫ থেকে ২৫ বছরের পুরনো ও অদক্ষ। এসব কেন্দ্রকে রি-পাওয়ারিং, সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে উন্নীত করা এবং কেন্দ্রগুলোকে সংস্কার ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের এখনো বেশ কিছু উপকেন্দ্র আছে যেগুলোর প্রতিস্থাপন করা দরকার। এই উপকেন্দ্রকে এখন নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করে ঝুঁকিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœতার কারণে জাতীয় গ্রিডে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে তা থেকে চিন্তামুক্ত হওয়া যাবে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৩৫৬ কোটি ৯৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306305