ভূমি দিবস উপলক্ষে গতকাল গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরাইলি সৈন্যদের টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ
৩১ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:১৬

ভূমি দিবসের বিক্ষোভে গাজা সীমান্তে ইসরাইলি হামলায় ৯ ফিলিস্তিনি নিহত : ১০০০ আহত

ছয় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের শুরু হিসেবে গতকাল গাজা উপত্যকার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইল সীমান্তের দিকে মিছিল করে আগ্রসর হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি হামলায় অন্তত নয় ফিলিস্তিনি নিহত ও এক হাজারের বেশী আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকারের দাবিতে গাজা সীমান্তের পাঁচটি স্থানে শিবির স্থাপন করেন। অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়নের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ বিক্ষোভকে তারা স্বদেশে ফেরার দাবিতে মহাবিক্ষোভ বলে অভিহিত করেছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে ১৬ বছরের এক কিশোরও রয়েছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ শুরুর আগে ওমর সামাউর নামে ২৭ বছর বয়সী এক কৃষক ইসরাইলি ট্যাংকের গোলায় নিহত হন। তিনি খান ইউনুস এলাকায় জমিতে কাজ করার সময় হামলার শিকার হন। গাজা উপত্যকার প্রভাবশালী সংগঠন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা যাতে বিক্ষোভে অংশ না নেন সেজন্য ভয় দেখাতে ইসরাইল ওই কৃষককে হত্যা করেছে। বিক্ষোভ-সমাবেশে ভাষণদানকালে হামাসের সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘আমরা ইসরাইলকে এক ইঞ্চি পরিমাণও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড় দেবো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কাছে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।’ ওই সমাবেশে গাজার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরল উপস্থিতি ঘটে বলে জেরুসালেম পোস্ট পত্রিকা জানায়।

তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, সীমান্তের ছয়টি স্থানে ‘দাঙ্গা’র ঘটনা ঘটেছে এবং তারা ‘প্রধান প্রধান উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের’ লক্ষ করে তাজা গুলিবর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চান, যা বর্তমানে ইসরাইল নামে গঠন করা ইহুদি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। ইসরাইলি সেনাবাহিনী (ডিফেন্স ফোর্সেস) আইডিএফ জানিয়েছে, গাজা সীমান্তের বেড়া বরাবর পাঁচটি স্থানের প্রায় ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি সমবেত হন গতকাল। আইডিএফ দাবি করে যে, তারা টায়ার পুড়িয়ে এবং বেড়ার দিকে ককটেল ও পাথর নিক্ষেপকারী ‘দাঙ্গার’ সৃষ্টি করে। এ দাঙ্গায় উসকে দিতে যারা ভূমিকা পালন করছিল তাদের লক্ষ করে তারা গুলিবর্ষণ করেছে। তারা ‘গাজার চার দিকে বন্ধ সামরিক এলাকা’ কার্যকর করেছে।

বিক্ষোভ উপলক্ষে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজা সীমান্তের সামরিক অঞ্চল বরাবর সেনা উপস্থিতি দুই গুণ বাড়িয়েছে। তাদের ধারণা, বিক্ষোভকারীরা ব্যাপকহারে সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাতে পারে। ইসরাইলি কমান্ডার মেজর জেনারেল আইয়াল জামির বলেন, দাঙ্গার ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী হামলা চালানোর চেষ্টা আমরা শনাক্ত করেছি। আমরা নাগরিকদের দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছিল এবং এই বিক্ষোভের আয়োজক হামাসকেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলাম। খান ইউনুসে কৃষক হত্যা সম্পর্কে ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে যে, সন্দেহভাজন দুইজন নিরাপত্তা বেড়ার কাছে এগোতে থাকলে তাদের ওপর ট্যাংকের গোলা নিক্ষেপ করা হয়।

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাত সৃষ্টিতে উসকানি দিতে পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে এবং এ সংঘর্ষের দায়দায়িত্ব হামাস ও বিক্ষোভে অংশ নেয়া অন্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভিগডর লিবারম্যান আরবিতে এই টুইটে জনগণের জীবন নিয়ে খেলা করার জন্য হামাসকে দোষারোপ করে বলেন, জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দেবে না।

কেন বিক্ষোভের আয়োজন
ফিলিস্তিনিরা উত্তরে বেইত হারুন থেকে মিসরের সীমান্তের রাফাহ পর্যন্ত পাঁচটি শিবির স্থাপন করে। গতকাল ভূমি দিবসে বিক্ষোভের শুরুতে এসব শিবির স্থাপন করা হয়। ১৯৭৬ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জমি বাজেয়াফত করার সময় প্রতিবাদকারী ছয় ফিলিস্তিনিকে সেনারা গুলি চালিয়ে হত্যা করার ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর ৩০ মার্চ ফিলিস্তিনিরা দিবসটি পালন করেন। পক্ষকালব্যাপী এই বিক্ষোভ আগামী ১৫ মে শেষ হওয়ার কথা। এ দিনটিকে ফিলিস্তিনি নাকবা বা মহাবিপর্যয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৪৮ সালের এ দিন লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করে তাদের জন্মভূমিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা হয়। ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘকাল যাবৎ নিজেদের ভূখণ্ডে ফেরার দাবি করে আসছে কিন্তু দখলদার ইসরাইল তাতে রাজি নয়। তারা বলছে, এদের ভবিষ্যতে গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে তাতে পুনর্বাসিত করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306229