৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৬

বাংলাদেশ কি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে?

ডি ডব্লিউ : জার্মানির বার্টেলসমান ফাউন্ডশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশ এখন একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন দল সে কথা অস্বীকার করেছে যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এক দলীয় শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার তাদের ‘ট্রান্সফর্মেশন ইনডেক্স ২০১৮ (বিটিআই)’ প্রকাশ করেছে। এতে বিশে^র ১২৯টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ৫৮টিকে স্বৈরতান্ত্রিক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বার্টেলসমান-এর বিবেচনায় বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা নয়া স্বৈরতান্ত্রিক দেশ।
বার্টেলসমানের এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, নির্বাচনের মান দুর্বল হওয়ায় বিশে^র সাবেক পঞ্চম বৃহত্তম গণতন্ত্র আবার স্বৈরতান্ত্রিক হিসেবে শ্রেণিকৃত হয়েছে। এ সব ঘটনা দেশের নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করেছে, কারণ সুষ্ঠু অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, সামাজিক বহিষ্কার ও বাধা স্বৈরশাসনে অধিকমাত্রায় বিরাজ করে।

বিটিআই ২০০৬ সাল থেকে ১২৯টি উন্নয়নশীল ও রূপান্তরশীল দেশের গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি এবং সুশাসনের মান নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে আসছে।
বাংলােেদশ সরকারের প্রত্যাখ্যান
বাংলােেদশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বার্টেলসমানের সমীক্ষা ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দাবি করেছে যে এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত রূপটি প্রতিফলিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এক বিশিষ্ট নেতা আবদুল মতিন খসরু স্থানীয় মিডিয়াকে বিটিআইর প্রতিবেদনের জবাবে বলেন, বাংলাদেশ শতকরা ১শ’ ভাগ গণতান্ত্রিক দেশ এবং গণতন্ত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন,জার্মান ভিত্তিক থিংক ট্যাংকটি ভুল সূত্র থেকে অথবা বাংলাদেশ বিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী লোকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকতে পারে।
বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের এক প্রকল্প ব্যবস্থাপক রবার্ট শোয়ার্জ মনে করেন যে প্রতিবেদনের বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের তা পড়া উচিত।
তিনি ডি ডবিøউকে বলেন, বাংলাদেশ রিপোর্টের লেখকরা তুলে ধরেছেন যে কিছু গণতন্ত্র সূচকের ক্রমঃ অবনতিতে সরকার ও বিরোধী দল উভয়েরই ভ‚মিকা রয়েছে।
শোয়ার্জ বলেন যে প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ফলাফল , বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজার ভিত্তিক প্রতিযোগিতা ও বেসরকারী উদ্যোগসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনার বিষয়ও রয়েছেঃ যেমন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রভৃতি।
গণতন্ত্র ক্ষীয়মান
বিটিআইর প্রতিবেদনের সাথে বিশেষজ্ঞদের ঐকমত্য রয়েছে যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ক্ষীয়মান। এর কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক বহুত¦বাদের অভাব এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকল কুগেলম্যাান ডি ডবি্লউকে বলেন যে বাংলাদেশ দ্রুত স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল অব্যাহত ভাবে ও বারবার এবং প্রায়ই সহিংস ভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর দমন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, এর পরিবর্তন না করলে দেশটি একদলীয় রাষ্ট্র হয়ে ওঠার বিপজ্জনক পথে অগ্রসর হবে।

প্রধান বিরোধী নেত্রী কারাগারে
বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপির খালেদা জিয়া এক দশক আগে সামরিক সমর্র্থিত তত্ত¦াবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা এক দুর্নীতি মামলায় ফেব্রæয়ারি মাসে কারাদন্ডে দন্ডিত হন।
ঢাকার একটি বিশেষ আদালত তাকে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের জন্য ৫ বছর কারাদন্ড দিয়েছে।
৭২ বছর বয়স্কা নেত্রীর কারাদন্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় আসন্ন নির্বাচন থেকে তাকে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কুগেলম্যাান বলেন, খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের মধ্যে শত্রæতার ইতিহাস এবং বিরোীদের কোণঠাসা করে রাখার সরকারের বিরামহীন চেষ্টার প্রেক্ষিতে আমার নিশ্চিত ধারণা যে এ সব আইনি ব্যবস্থা রাজনৈতিক উ্েদশ্য প্রণোদিত।
হাইডেলবার্গ বিশ^বিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড ও. উলফ একমত যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা বর্তমানে রুগ্ন্ দেখাচ্ছে। তবে তিনি এর জন্য সরকারকে সম্পূর্ণ দায়ী করেন না।

তিনি ডি ডবিøউকে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র চাপের সম্মুখীন হওয়ার জন্য বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণ দায়ী করা ঠিক হবে না। আসলে পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল এবং পূর্ববর্তী সরকারগুলোর বহু ুদুর্ভাগ্যজনক কার্যকলাপও এর পিছনে রয়েছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে
২০১৪-র নির্বাচনের পর রাজপথে সহিংস বিক্ষোভের জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হয় যাতে ১শ’রও বেশি লোক নিহত হয়।
বিএনপি ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে চালু হওয়া নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এ নির্বাচন বর্জন করে। উল্লেখ্য, বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের দাবি সত্তে¡ও ২০১০ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

https://www.dailyinqilab.com/article/123881