চাঁদপুর-শরীয়তপুর-মাদারীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ডিএমখালী এলাকা। বোঝার উপায় নেই এখানে একসময় কার্পেটিং ছিল।
৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১২

নির্মাণ-সংস্কারে দুর্নীতি, বিপর্যস্ত মহাসড়ক

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের নির্বাচনী এলাকায় (টাঙ্গাইল-৭) মির্জাপুর-ওয়ার্শী-বালিয়া সড়ক নির্মাণের পর তাতে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মেলে। অনিয়ম তদন্ত করতে সংসদীয় কমিটির সদস্য নাজমুল হক প্রধানকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যের উপকমিটি করা হয়েছিল। পরিদর্শন শেষে সংসদীয় উপকমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ মানসম্মত হয়নি। কাজ শেষ হওয়ার পর সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। পাথরের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে স্যালভেজ। গত বুধবার রাতে কমিটির বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনিয়মের এ তথ্য জানতে পেরে উপস্থিত এক প্রকৌশলীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘ওই ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল না হলে আপনার চাকরি থাকবে না। তাঁকে আবার কাজ করতে বলেন।’
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ) আবুল কাসেম ভূঁইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রী আমাকে এসব বলেননি। অন্য কাউকে উদ্দেশ করে হয়তো বলেছেন।’ তিনি জানান, বন্যার কারণে ওই সড়ক নষ্ট হয়েছে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের কুমারগাঁও থেকে লামাকাজি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৪৮০ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করা হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। সংস্কারের পর সড়কের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। শর্ত মেনে কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন ঠিকাদার। তাতে সহযোগী ছিলেন সিলেট সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এ অভিযোগে গত ২৫ মার্চ সিলেট সড়ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সড়ক সংস্কারের ঠিকাদার ছিলেন লুত্ফুর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজের গুণগত মান ও উপকরণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তার প্রমাণ মিলেছে ল্যাবরেটরি টেস্টে। অসম্পাদিত কাজকে সম্পন্ন দেখিয়ে বিলের অনুমোদন দেন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে দায়িত্বরত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইফতেখার কবীর। এ ছাড়া প্রতারণা করে ৬২ লাখ ৬১ হাজার ২৬০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত কালের কণ্ঠকে জানান, ওই মহাসড়কের কুমারগাঁও অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে।

কুষ্টিয়া-খুলনা, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী—এই তিন মহাসড়কে কুষ্টিয়ার ৮২ কিলোমিটার দুই বছর ধরেই এবড়োখেবড়ো হয়ে আছে। খানাখন্দে ভরা এই মহাসড়কে যানবাহন ভেঙে পড়ে। প্রতিদিন ছয়-সাত ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কুষ্টিয়া সফরের সময় সড়ক সংস্কারের জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে চার লাখ টাকারও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৭ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়ায় তাঁর নির্বাচনী এলাকার সড়কগুলোর সংস্কার সময়মতো শুরু হয়নি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকার সব সড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে তাগিদ দিচ্ছি।’ তিনি তখন মোবাইল ফোনে খুলনা সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে দ্রুত কাজ শুরু করার তাগিদ দেন।
কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, অনেক চেষ্টা করে সড়ক তিনটির জন্য ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কাজ শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কয়েকটি মহাসড়ক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক সংস্কারের কিংবা নির্মাণের কিছুদিন যেতে না যেতেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও অর্থ বরাদ্দে বৈষম্য, দেরিতে কাজ শুরু করা, রাজনীতিকদের চাপে অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণহীন অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচলের কারণেই মূলত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবেই, সওজ অধিদপ্তরের অধীন ২৯ শতাংশ মহাসড়ক অনুপযোগী। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন প্রায় তিন লাখ কি.মি. সড়কের অর্ধেকই চলাচলের অনুপযোগী। সংস্কার শেষ না হলে বর্ষা ও ঈদ মৌসুমে ভুগতে হবে মানুষকে।

গত বছরের বন্যা ও অতি বর্ষণও মহাসড়কের দুরবস্থার বড় কারণ। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে নির্ধারিত সময়ের তিন মাস দেরিতে শুরু হয়েছে সংস্কারকাজ। এ ছাড়া ব্যয়বহুল নতুন প্রকল্পে যত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, পুরনো সড়ক সংস্কারে ততটা দেওয়া হচ্ছে না।
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থা দূর করার তাগিদ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধাসরকারি পত্র) দিয়েই যাচ্ছেন। মহাসড়ক সংস্কারের দাবিতে সুনামগঞ্জ, যশোর, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় তিন মাস ধরে ধর্মঘট, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। মহাসড়কের দুরবস্থায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, দিনে সড়কে ঝরছে গড়ে ১১ প্রাণ। গতকালও বিভিন্ন সড়কে প্রাণহানি ঘটেছে।
ওজনসীমা নিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত : অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে সড়ক অবকাঠামো পরিমাণে বাড়ছে, স্থায়িত্ব বাড়ছে না। উন্নত দেশগুলো ঘন ঘন মেরামতকাজে ঠিকাদারকে বাধ্য করে। আমাদের এখানে এক ঠিকাদার আরেক ঠিকাদারের লাইসেন্স দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নেয়। রাজনৈতিক চাপে অযোগ্যদের কাজ দেওয়ার সংস্কৃতির কারণে সড়কের স্থায়িত্বের বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে। নির্দিষ্ট ওজনসীমা না মেনে আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি পণ্যবাহী গাড়ি জাতীয় মহাসড়কে চলাচল করছে। গ্রামীণ সড়কে ভারী ট্রাক যাতে প্রবেশ না করতে পারে তার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হতো। নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্য সেই গ্রামীণ সড়কেও অহরহ অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় সড়ক অবকাঠামো দুর্বল হচ্ছে। বেইলি সেতুগুলো বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, মহাসড়কে ছয় চাকার ট্রাকে সব মিলিয়ে ১৬ টন ওজন নিয়ে চলার কথা। সেখানে সরকার সম্প্রতি ২২ টন ওজনসীমা নির্ধারণ করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দায় প্রকৌশলীদের নয়। পরিবহন মালিকদের চাপে পড়ে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে বহু ব্যয়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ কিংবা মেরামত করা হলেও স্থায়িত্ব হারাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিদ্যমান কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুর পাশে তাই নতুন সেতু করতে হচ্ছে।’

ড. সামছুল হক আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধ হয়ে পড়া মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প মহাসড়কের অংশ দিয়ে যান চালানোর ব্যবস্থা করা হয় না। এতে বিটুমিন দ্রুত সরে রাস্তা আর রাস্তা থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী সড়ক রক্ষার জন্য কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটা বিভিন্ন স্থানে জরুরি ভিত্তিতে হওয়া দরকার। তাহলে মহাসড়কের স্থায়িত্ব রক্ষা হবে। আমাদের এখানে গর্ত বড় হলে প্রকৌশলীরা চেয়ে থাকেন যাতে দরপত্র আহ্বান করে বড় অঙ্কের প্রকল্প নেওয়া যায়। এ কারণে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বড় অবহেলিত।’

এমপিদের উদ্বেগ : সড়কের স্থায়িত্ব না থাকায় গত ১১ মার্চ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যরা। চট্টগ্রামের এমপি শামসুল হক চৌধুরীর মতে, এলজিইডির সড়কগুলো কম টাকায় ইট দিয়ে নির্মাণ করা হতো, এখন তিন-চার গুণ ব্যয় বাড়িয়ে পাকা করা হচ্ছে। স্থায়িত্ব আগের চেয়ে কমেছে। তিন মাস যাওয়ার আগেই রাস্তায় গর্ত তৈরি হচ্ছে। এগুলো ইটের রাস্তার চেয়েও খারাপ। পাকা করার পরিবর্তে সড়কের ওপরে শুধু প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ব্যয় বাড়ছে, জনদুর্ভোগ কমছে না।

কাজ শেষে ঠিকাদারের হদিস মেলে না : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, কাজ ফাঁকি দেওয়া সওজ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিদপ্তর কাজের নকশা করবে, দরপত্র দলিল তৈরি করবে। ঠিকাদার কর্মসূচি অনুসারে, দরপত্রের শর্ত অনুসারে কাজ করবে। ঠিকাদার ভুল করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেটা ধরিয়ে দেবেন। তিনি ঠিকাদারের জন্য তিন বছর পর্যন্ত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা এবং তা বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তবে সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে ড. সামছুল হক বলেন, ‘আমি গত মাসে অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, নেত্রকোনায় ১৪টি সড়ক পরিদর্শন করেছি। দেখেছি কোনো প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে চট্টগ্রামের কোনো ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে। এখন এলাকায় গিয়ে তাঁকে মিলছে না। বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় রাজনীতিকদের প্রভাবে পছন্দের প্রতিষ্ঠান কাজের সুযোগ পায়, এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিবেচ্য নয়। সরকারের ই-টেন্ডার নামে আছে, বাস্তবে আছে সিন্ডিকেট।’

কেন্দ্রীয় তদারকিও কাজে আসছে না : বর্ষা সামনে। তাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়ক ও মহাসড়কের সংস্কারকাজের তদারকি জোরদার করেছে। ২৫টি তদারকদল মাঠে সক্রিয়। গত ২৭ মার্চ মন্ত্রণালয়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অভিযোগ গ্রহণ, সংস্কার ও উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে কি না তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
২০১২ সাল থেকে ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ওবায়দুল কাদের। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন করছেন। প্রকৌশলীদের ‘খারাপ’ কাজের তিরস্কার করছেন, ভালো কাজের ‘পুরস্কার’ দিচ্ছেন। জানা গেছে, মন্ত্রী আন্তরিক হলেও বিভিন্ন সড়ক বিভাগে স্থানীয় রাজনীতিক-প্রকৌশলী-ঠিকাদারদের চক্রের কাছে কেন্দ্রীয় তদারকিও হার মানছে।
বরাদ্দে বৈষম্য : জানা গেছে, বরাদ্দে বৈষম্যের ফলে কোনো কোনো সড়ক আট বছর ধরে সংস্কারহীন অবস্থায় আছে। এর বড় উদাহরণ ঢাকা বাইপাস সড়ক। ৬৫টি সড়ক বিভাগের ৩০টিতেই বরাদ্দ যায়নি চাহিদা অনুসারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, যে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের প্রভাব যত বেশি তাঁর এলাকায় বেশি বরাদ্দ যাচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাধর আমলাদের প্রভাবও বরাদ্দে বৈষম্যের কারণ। সড়কের ক্ষতি অনুসারে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না।

সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, সড়ক মেরামতে আমাদের কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়া সমীচীন ছিল। এ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সমীক্ষা হয়েছে ২০১৬ সালে। এই সময়ের মধ্যে নির্মাণসামগ্রীর দাম আরো বেড়েছে। যেখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকা চাহিদা ধরা হয়েছিল সেটা সাত হাজার কোটি টাকা হয়েছে। সময়মতো প্রয়োজন অনুসারে বরাদ্দ না হলে রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। গত বছর প্রলম্বিত বর্ষার ফলে সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’ অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
সংস্কারে গুরুত্ব কম : ব্যয়বহুল নতুন প্রকল্পে যত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পুরনো সড়ক সংস্কারে ততটা দেওয়া হচ্ছে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার প্রথম সাড়ে আট বছরেই ৩৭৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সড়ক ও সেতুর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খাতে আট হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৯০ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে চার লেন হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আছে। তবে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে চলতে গিয়ে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে। এসব মহাসড়কের ৯০০ কিমি বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে বলে বিভিন্ন সড়ক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয় পাশে এক স্তর নিচু দিয়ে আলাদা সার্ভিস লেনসহ মহাসড়কটি দুই থেকে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ব্যয় হবে ১১ হাজার ৮৯৯.০১ কোটি টাকা।

মন্ত্রী-এমপিদের একের পর এক ডিও লেটার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পাঠানো ডিও লেটার গত ৫ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে। তাতে তিনি সড়কমন্ত্রীর কাছে সিরাজগঞ্জের সড়ক উন্নয়নে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। জানা গেছে, ২০১৬ সালে বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সওজ অধিদপ্তরের ৫৪৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রোয়ানুর আঘাতে উপকূলীয় জেলাগুলোয় এক হাজার ৩৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। উত্তরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৫২৯ কিলোমিটার সড়ক। তার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের সড়কগুলো। যমুনা সেতু-সিরাজগঞ্জ সংযোগ সড়ক, এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকুমরুল, উল্লাপাড়া শহর অংশ, নলকা-সিরাজগঞ্জ সড়ক, উল্লাপাড়া-পূর্ণিমাগাতী-তাড়াশ, শাহজাদপুর-চৌহালী, এনায়েতপুর-শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ-ধুনট সড়ক, তাড়াশ-শেরপুর, সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ ও সিংড়া-চাটমোহর সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়ক এখনো যান চলাচলের উপযোগী নয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে চাঁদপুর সড়ক বিভাগের মতলব-মেঘনা-ধনাগোদা-বেড়িবাঁধ সড়ক মেরামতে অতিরিক্ত ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। তিনি ওই মহাসড়কের প্রায় ৩৭ কিমি অংশ দীর্ঘদিন সংস্কারহীন থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. রুস্তম আলী ফরাজী গত ৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানান, চরখালি-তুষখালি-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে ২২টি সেতু ও অসংখ্য কালভার্ট আছে, যেগুলোর কোনো কোনোটি মাঝেমধ্যে ধসে পড়ে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/03/30/619337