৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৯

সিন্ডিকেটে বাড়ছে রড সিমেন্টের দাম

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রডের দাম বাড়াচ্ছে। সকালে একটা দাম থাকলে বিকালেই তা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান এজন্য দায়ী। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে সারা দেশের নির্মাণকাজ। এভাবে চলতে থাকলে ১৫ এপ্রিল থেকে সব নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হবে- এ হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বাসি)। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্মাণ খাতসংশ্লিষ্টদের সংগঠন বাসি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনীর উদ্দিন আহমেদ রডের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাসি’র সাবেক সভাপতি শেখ মো. রফিকুল ইসলাম, সফিকুল আলম ভূঁইয়া, আতিকুর রহমান, আফতাব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
মুনীর উদ্দিন দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ যেসব কারণে রডের দাম বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক না। আসল কথা হল সিন্ডিকেট। কারণ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের দাম ছিল ৫৬০ ডলার, তখন দেশের বাজারে রডের দাম ছিল ৪৫ হাজার টাকা টন। আর এখন যখন বিলেটের দাম ৫২০ ডলার, তখন এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-৭৩ হাজার টাকায়।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসি’র সদস্য সফিকুল হক তালুকদার। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে রডজাতীয় কাজের পরিমাণ ২০-২৫ শতাংশ। তাই এমএস রডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পুরো স্থাপনার নির্মাণ ব্যয় ৭ থেকে ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। হঠাৎ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের পক্ষে চলমান কাজ চালিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে ১৫ এপ্রিল থেকে সব নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।
সফিকুল হক জানান, দেশের জিডিপিতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবদান প্রায় ৯ শতাংশ। কিন্তু কয়েক মাস ধরে অব্যাহত শিল্পসংশ্লিস্ট সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এতে সারা দেশের নির্মাণকাজ ধীরগতিতে চলছে। কিছু কাজ বন্ধও হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। রড উৎপাদকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বিলম্বের কারণ দায়ী, তবে বাস্তবে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে এসব কারণে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ শতাংশ রডের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ৫০ শতাংশ নয়। সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি লিখিত বক্তব্যে পিপিআর অনুযায়ী মূল্য সমন্বয়ের ২৭.৯ ধারা কার্যকরের জোর দাবি করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণ : বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে রডের দাম নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রড সিমেন্টের দাম বেড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আগে প্রতি ট্রাকে ২০ টন করে রড-সিমেন্ট পরিবহন করা হতো। রাস্তা ঠিক রাখার জন্য এখন ১০ টন করে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া ডলারের দাম বেড়েছে। এরপরও রড-সিমেন্টের দাম যাতে সমন্বয় করে বাড়ানো হয়, এজন্য আগামী মাসে আমি এটা নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে বসব।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/33066