সুনামগঞ্জ পৌরসভা উপনির্বাচনে বৃহস্পতিবার উত্তর আরপিননগর স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ
৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৭

টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জে সংঘর্ষ গুলি, নিহত ১ আহত ২২

দেশের ১২৯টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে টাঙ্গাইল ও সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, গুলি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন। জাল ভোট দেয়াসহ নানা অপরাধে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া খবরে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ২৪, বিএনপির ১০ ও মেয়র পদে ২টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের ৭ বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের সাগরদিঘি ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আ. মালেক (৪৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রাত ৩টার দিকে কেন্দ্রে ঢুকে ‘ডিবি পুলিশের সামনে’ সন্ত্রাসীরা ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারতে থাকলে তিনি বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা জানালা দিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ সময় আরও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
টাঙ্গাইল ও ঘাটাইল : সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আ. মালেক গুপ্তবৃন্দাবন গ্রামের মৃত মেছের আলীর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শী লালন স্বেচ্ছাসেবক মালেক ফকির জানান, রাত তখন ৩টা। প্রথমে ডিবি পুলিশের পোশাকে কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সাদা রঙের একটি হাইয়েস গাড়ি আসে। গাড়ি থেকে ‘ডিবি সদস্যরা’ কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করে। এর পিছু পিছু আরেকটি কালো রঙের হাইয়েস গাড়ি আসে। সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকে। এ সময় নিহত ওই যুবক দৌড়ে গিয়ে ভোট কেন্দ্রের ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন। ভেতর থেকে সন্ত্রাসীরা দরজা খুলতে বললেও তিনি খোলেননি। এ সময় জানালা দিয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে আ. মালেক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দু’জন। তারা হলেন- একই গ্রামের মৃত চান মাহমুদের ছেলে ফারুক ও হক মিয়ার ছেলে জলিল। এদের মধ্যে ফারুককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জলিলকে টাঙ্গাইল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এসআই শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা কেন্দ্রের ভেতরে একটি রুমে অবরুদ্ধ ছিলাম। কিছু বুঝতেও পারিনি, দেখতেও পাইনি। আমাদের রুম বাইরে থেকে তালা দেয়া ছিল। এমন ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। মনে হচ্ছে এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।

নির্বাচনে ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সংগ্রামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আ. রহিম মিয়া, সন্ধানপুর ইউনিয়নে বিএনপির শহিদুল ইসলাম শহীদ, ধলাপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির এজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, রসুলপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুল হক সরকার, লক্ষিন্দর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী একাব্বর আলী বিজয়ী হয়েছেন। সাগরদিঘি ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ ইউনিয়নে ফল ঘোষণা হয়নি।
সুনামগঞ্জ : যুগান্তর প্রতিনিধি ইয়াহ্ইয়া মারুফ ও মাহবুবুর রহমান পীর জানান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নাদের বখত। এর আগে ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, দফায় দফায় সংঘর্ষ ও দুই প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পৌরসভার উপনির্বাচন। সকাল থেকেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল দেয়ার অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ভোটারদের বক্তব্যে। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গনিউল সালাদিন বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেন তিনি। একই অভিযোগ ও দাবিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। ভোট শুরুর পরপরই বৃষ্টির মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে শহরের সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ছোটভাই নোমান বখত পলিন ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল দেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। বেলা ১১টার মধ্যেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায় আরপিননগর কেবি মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের। দুপুর ২টায় উত্তর আরপিননগর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের কেন্দ্র দখল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের ঘণ্টাব্যাপী ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন।

কুমিল্লা, বরুড়া ও বুড়িচং : বরুড়ার ৩টি ইউনিয়নে নৌকার কর্মীদের কেন্দ্র দখল, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, বিএনপি সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান, ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টি ও জাল ভোটের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ভোট বর্জনসহ ওই ৩টি ইউনিয়নে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী। খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এ ইউনিয়নের হরিপুর কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী তৈয়ব আলীকে কেন্দ্র দখলে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। নির্বাচনে চার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বুড়িচং উপজেলার বাকশীমুল ইউনিয়নে মো. আবদুল করিম, শিলমুড়ি দক্ষিণ ইউনিয়নে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ভূঁইয়া, শিলমুড়ি উত্তর ইউনিয়নে আবু ইসহাক, খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নে আবদুর রব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম : বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল একবারে কম। ভোট কেন্দ্রের ভেতরের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। তবে বাইরে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/33056