ঝালকাঠির রাজাপুর বাজারসংলগ্ন খালটির দুই-তৃতীয়াংশ বালু ফেলে ভরাট
৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৬

হত্যা করা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী-খাল

আবু সালেহ আকন ঝালকাঠি থেকে ফিরে

গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও খালের। নাকের ডগায় ভূমিদস্যুরা একের পর এক নদ-নদী দখল করে চললেও সেদিকে কোনোই নজর নেই প্রশাসনের। উল্টো কোথাও কোথাও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামেও নদ-নদী ভরাট চলছে। কোনো কোনো খালের এখন আর অস্তিত্ব নেই। অথচ এই খালগুলোও এক সময় প্রবহমান ছিল। সেখানে নৌকা চলত, জেলেরা মাছ ধরত। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেছেন, এরই মধ্যে তারা অনেক খাল দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। বাকি অনেক মুক্ত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

ঝালকাঠির রাজাপুরের বাঘড়ির হাটের পাশ দিয়ে এই এলাকার উল্লেখযোগ্য নদী জাঙ্গালিয়া উজানে বারবাকপুর হয়ে মিশেছে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সাথে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার বহমান এই খালের অংশবিশেষ যে যেভাবে পেরেছে দখল করে নিয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায় যে যেভাবে পেরেছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে দখল করে নিচ্ছে খালের অংশ। কোথাও কোথাও দেখা যায় খালের এপাড়-ওপাড় মিলে যার বাড়ির সামনে যতটুকু পড়েছে সে ততটুকু দখল করার চেষ্টা করছে। এতে কোনো কোনো স্থানে খালটি একেবারে সরু হয়ে গেছে। অন্তত তিন শ’ বাড়ি ও জমি মালিকের খাল দখলের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এই থানা এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবহমান এটিই সবচেয়ে বড় খাল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, কোনো কোনো এলাকায় এখন শুকনো মওসুমে হাঁটুপানিও থাকে না এই খালে।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ধানসিঁড়ি নদীটি মোল্লাবাড়ি, বারৈবাড়ি এবং রাজাপুরের হাইলাকাঠি, ইন্দ্রপাশা ও বাঁশতলা হয়ে জাঙ্গালিয়া নদীতে মিশেছে। জীবনানন্দ দাসের সেই ধানসিঁড়ি এখন মৃত খাল। সেখানে শুকনো মওসুমে কোনো পানির প্রবাহ থাকে না। যে যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে নিজের বাড়ি অথবা জমির সীমানা বাড়িয়েছে অনেকেই।
রাজাপুর বাজারের কামারপট্টি হয়ে একটি খাল গেছে বাইপাস মোড়ের দিকে। এই খালটি যে যেভাবে পেরেছে গলা টিপে প্রায় মেরে ফেলেছে। খালটি ছোট্ট হলেও এক সময় ভালো প্রবাহ ছিল। এখন সেখানে জোয়ার-ভাটা হয় না। খালে পানি নেই।
রাজাপুরের বারবাকপুর হয়ে হাজির হাটের পশ্চিমপাশ দিয়ে একটি খাল মিশেছে গিয়ে লেবুবুনিয়া বাজারে। আর একটি খাল হাজিরহাট হয়ে একটু সামনে গিয়ে বাঁদিকে মোড় নিয়ে রোলা গ্রামের দিকে গিয়েছে। অসংখ্য ভূমিদস্যু গ্রাস করে নিচ্ছে এই খাল দু’টি। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, এই খালে এক সময় নানা প্রজাতির মাছ মিলত। এখন আর কোনো মাছ নেই। জোয়ারের সময়ও হাঁটু পানির বেশি হয় না। অনেকেই বাঁশ-খুঁটি পুঁতে খালের মাঝ পর্যন্ত ভরাট করে নিজেদের সম্পত্তির বহর বাড়িয়েছে।
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকেই এভাবে নদী ও খাল দখল করে নিচ্ছে। ভাণ্ডারিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অনেক খাল এখন ভূমি দস্যুদের দখলে। সেখানে বড় বড় পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জের চরমদ্দি ইউনিয়নের বাজারসংলগ্ন খাল, কলসকাঠি খাল, কলসকাঠি বাজার খাল, কাঠপট্টি খালের বিভিন্ন অংশে দখলদারদের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। একইভাবে চরাদি, দাড়িয়াল, পায়রা বন্দর, নেয়ামতি, রংশ্রী ও গারুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদী ও খাল দখলের মচ্ছপ চলছে।

কোনো কোনো এলাকা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে খাল দখলের বিষয়টি স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিরাও স্বীকার করেছেন। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, এরই মধ্যে ঝালকাঠি সদরের বেশ কয়েকটি নদী ও খাল তারা দখলমুক্ত করেছেন। শহরের দেড় কিলোমিটার খালের ওপর থেকে ৬৯টি স্থাপনা সরিয়েছেন। এর মধ্যে ৫-৬ তলা ভবনও ছিল। তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। নলছিটিতে প্রবহমান নদী দখল করে সেখানে মাছ চাষ হতো। সেই নদীটি দখলমুক্ত করা হয়েছে। রাজাপুরে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, এই খাল দখল একদিনের সমস্যা নয়। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। তারা দখলদারদের উচ্ছেদে কাজ করছেন। তবে জনবল সঙ্কটের কারণে যতটা কাজ দরকার ততটা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306001