৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৪

পাঁচ খাল খননেই ৬০৭ কোটি টাকা

প্রতি একর জমি অধিগ্রহণে ১৬.৩৪ কোটি টাকা ; স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় দখলে ২৬টি খাল

দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় রাজধানীর ২৬টি খাল দখলে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধান পাঁচটি খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খালগুলো সচল করতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর প্রতি একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বলে প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ১৯৮৯ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কাছ থেকে ঢাকা ওয়াসাতে ন্যস্ত করা হয়। ঢাকা মহানগরীতে ৪৪টি খাল, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। যেকোনো স্থানের ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রাইমারি অবকাঠামো হচ্ছে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা নতুন সৃষ্ট খাল, যার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়ে নদ-নদীতে নিষ্কাশিত হয়। রাজধানীতে ৪৩টি প্রাকৃতিক খাল বিদ্যমান রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন খালের সংখ্যা ২৬টি। এই খালগুলোর স্থায়ী অবকাঠামো দীর্ঘদিন হচ্ছে না। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কিছু খাল বর্তমানে ব্যক্তিগত জমির মাধ্যমেও প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে ঢাকা ওয়াসার আইনগত কোনো কর্তৃত্ব নেই। এতে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা যেকোনো সময় তাদের জমির শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছা মতো ব্যবহার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে নগরীর সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে ওয়াসা মনে করছে। রাজধানীর এলাকাভুক্ত কুর্মিটোলা, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকার গৃহস্থালি ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বিমানবাহিনী ঢাকা ওয়াসাকে অনুরোধ জানায়।
প্রকল্প প্রস্তাবনা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দশকেও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি ঢাকা ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানীর ২৬টি খালের। যার কারণেই বর্ষা মওসুমে অতিবৃষ্টির সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে না। নগরীতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। একই সাথে অবকাঠামো না থাকায় অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না খালগুলো। ধীরে ধীরে খালগুলো সরু নর্দমায় পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে মহানগরীতে ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৪৪টি খাল রয়েছে। জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য নেয়া দু’টি প্রকল্প একনেক থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রত্যাহার করায় পরিকল্পনা কমিশন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
শহরের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ইতঃপূর্বে দু’টি প্রকল্প একনেকে উপস্থাপনের জন্য নির্ধারিত থাকলেও পরে তা স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রত্যাহার করে নেয়। প্রকল্প দু’টি হলো, হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন বা পুনঃখনন এবং কল্যাণপুর স্টর্ম ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন রেগুলেটিং পন্ড সংরক্ষণ ফেজ-২। এখন হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন বা পুনঃখনন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে যাচ্ছে। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি এ বছর অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করার কথা।
প্রকল্পের কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই খালগুলোকে সচল করতে হলে মোট ৩০ দশমিক ৫৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ব্যক্তি খাত থেকে। তাতে ব্যয় হবে ৪৯৯ কোটি ৩২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে হাজারীবাগ খালের জন্য ৪ দশমিক ৩৫৫ একর, বাইশটেকী ও সাংবাদিক কলোনি খালের জন্য ৬ দশমিক ৩৮৫ একর, কুর্মিটোলা খালের জন্য ৪ দশমিক ৬১৩ একর, বেগুনবাড়ি খালের জন্য এক দশমিক ৯০৫ একর এবং মাণ্ডা খালের জন্য ১৩ দশমিক ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়িঘর ইত্যাদি ক্ষতিপূরণ বাদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। খাল খনন ও পাড় উন্নয়ন হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। এর জন্য ব্যয় হবে ৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর ড্রেনেজ ব্যবস্থা সাতটি সংস্থার কাছে ন্যস্ত। সংস্থাগুলো হলোÑ ঢাকা উত্তর সিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজউক, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও বসুন্ধরা, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডসহ বেসরকারি ল্যান্ড ডেভেলপারগুলো।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সূত্র বলছে, সম্প্রতি এক প্রকল্প মূল্যায়নে কমিশন থেকে বলা হয়েছে ‘হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন বা পুনঃখনন’ এবং ‘কল্যাণপুর স্টর্ম ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন সংলগ্ন রেগুলেটিং পন্ড সংরক্ষণ ফেজ-২’ এই প্রকল্প দু’টি অনুমোদনের পরই ২৬টি খালের সংস্কার প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়া হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306002