৩০ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৩

আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে ব্যর্থতায় টিআইবির উদ্বেগ

গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ফারমার্স ব্যাংকের ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ কেলেঙ্কারির আরো তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি একই সাথে বিভিন্ন দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতির ফলে সৃষ্ট ব্যাংকটির তারল্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারিভাবে নতুন করে মূলধন জোগানের পরিবর্তে এসব অনিয়মের সাথে জড়িতদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে সেই শেয়ারের অর্থ আমানতকারীদের প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গ্রাহকদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরো ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ফারমার্স ব্যাংক সঙ্কটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকেরও বেশি ফেরত আসবে না মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে আমানতকারীরা প্রাপ্য অর্থ আদৌ ফেরত পাবেন কি না, কিংবা পেলেও কবে নাগাদ পাবেনÑ তা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা এবং পুরো ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে সৃষ্ট গ্রাহকদের এ হয়রানির দায় ফারমার্স ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন শীর্ষব্যক্তিরা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান দায়িত্বে থাকা অবস্থায়। অনিয়ম ও জালিয়াতিনির্ভর ঋণ মঞ্জুরে তাদের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে চিহ্নিত হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অযোগ্য ও অসাধু ব্যক্তিদের ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কমিশন ভোগ করে ব্যাংকটির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের একাংশ নৈতিক স্খলনের নির্লজ্জ ও গর্হিত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করার পরও অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন, আর অন্য দিকে আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে গ্রাহকরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে থাকবেনÑ তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ঋণ জালিয়াতিসহ অন্যান্য অনিয়মের সাথে জড়িতদের অবশ্যই যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ড. জামান বলেন, গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যর্থতায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত বোধ করার পাশাপাশি অনেক গ্রাহকের মধ্যে আমানতকৃত অর্থ দ্রুত উত্তোলনের প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে তারল্য সঙ্কট সৃষ্টিসহ ঋণপ্রবাহে অস্বাভাবিক প্রবণতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের এ সঙ্কট দ্রুত সমাধান করা না হলে বিশেষ করে গ্রাহকদের আমানতের অর্থ চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত প্রদান না করলে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব জটিল থেকে জটিলতর হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/305981