সঙ্কটাপন্ন কৃষির পাশাপাশি পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিক ও মৎসজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছে।
২৯ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১৫

মহানন্দা নদীর বেহাল দশা

ভারতের বৈরী আচরণের প্রভাব

মাহফুজুল হক আনার/আবু তাহের আনসারী, দিনাজপুর থেকে: ভারতের বৈরী আচরনে-তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। নদী জুড়ে পানির বদলে এখন বালুর চর। ফারাক্কা-তিস্তা আর মহানন্দা নদীর উজানে ভারতের বাঁধ সমগ্র উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। এছাড়াও ডাহুক, গোবরা,ভেরসা চাওযাই,করতোয়া, তিরনই, রনচন্ডি’র মত অনেক ছোট ছোট নদী এসেছে সরাসরি ভারত থেকে। সবগুলো নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে নদীর পানির ¯্রােত ধারাকে। এর মধ্যে বড় নদী হল মহানন্দা আর করতোয়া। ছোট নদী গুলো একপ্রকার অস্তিস্থহীন হয়ে পড়েছে। আর বড় নদী মহানন্দা, তিস্তা আর করতোয়া পরিনত হয়েছে মরা খালে। এসব নদী থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্প পানিকে বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে শত শত কিলোমিটার ক্যানেল তৈরী করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে ভারত। পানি প্রবাহ না থাকায় পাহাড়ী কন্যা খ্যাত এই নদীতে ভেসে আসা পাথর উত্তোলন করে তেতুলিয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জীবিকা করতো। কিন্তু ভারতের শিলিগুড়িতে মহানন্দা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত করায় এখন পাথর আসে না বললেই চলে। এ কারনে তেতুলিয়া সদর হতে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নদীপথে দুরত্ব হচ্ছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এ নদী খনন করে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। এর আগে পানিতে ডুবে উত্তোলন করা হতো পাথর। আর বর্তমানে পানি না থাকায় বালু কেটে মাটি খনন করে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। এতেও গোস্বা বন্ধু প্রতিম বলে পরিচিত ভারত সরকারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশী অংশে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়ে পাথর উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
নদী তীরবর্তী প্রবীণরা বলেছেন এইতো ষাট সত্তর বছর আগের কথা যেখানে ছিল বিস্তৃত পানির ধারা। যার বিশাল স্রোতধারা আমাদের করতো সঞ্জিবিত সিক্ত। যা ছিল জীবন দায়িনী। কৃষি যোগাযোগ ,মৎস আর জীব বৈচিত্রতা ও আর্থিক উৎসের আধার। সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল। কি ছিল আার কি হল। কি ভয়ংকর বৈপরিত্য। এক সময়ের চাঞ্চল্য চির যৌবনা আর দুরন্ত হয়ে ছুটে চলা মহানন্দা তিস্তা এখন মরা নদীর নাম। অথচ একদিন যেখানে ছিল ছড়িয়ে পড়া আদিগন্ত বিস্তৃত পানির ধারা। সারা বছর এ নদীতে একুল-ওকুল ভরা ছিল পানিতে। মহানন্দা নদীর মাছ ছিল খুবই প্রিয়। প্রতিদিন এলাকার মানুষ দুপুর বেলা গোসল করতে নামতো নদীতে। গোছল করতে গিয়ে শোল, বোয়াল, রুই কাতলা আরো দেশী মাছ ধরা পড়তো জালে। কিন্তু আজ সেই মাছ কোথায় জানি হরিয়ে গেছে। এখন যেখানে একই রুপের মরিচীকা সাদৃশ্য বালিচরের বিস্তার। চলতি শুস্ক মৌসুমে মহানন্দার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় নদীটি ইতোমধ্যে মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। ভরা বর্ষায় মাস তিনেক পানি থাকার পর ফের দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে।

কারন একটাই অন্যান্য নদীর মত মহানন্দা নদীর উৎস মুখ উপর ভারতের ফুলবাড়িতে ভারতের বিশাল ব্যরেজ নির্মাণ। এ ব্যরেজ দিয়ে বিশাল আকারে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর ¯্রােত ধারাকে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। এ নদীর পানি বিকল্প নদী খনন করে নিজ দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত করে আবার ভারতের অভ্যন্তর গিয়ে পানিকে নিস্কাশন করে । এতে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে মূল নদী তা এখন বালুচরে পরিনত হয়ে গেছে।

ভারত তার পানি আগ্রাসী নীতিতে গঙ্গায় ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের পরিবেশের মহা বিপর্যয় ডেকে এনে ক্ষান্ত হয়নি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও মহানন্দা নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে পঞ্চগড় জেলাকে মরুভুমিতে পরিনত করে দিয়েছে। ভারতের হিমালয় থেকে বয়ে আসা মহানন্দা নদী বাংলাদেশের সর্বোত্তরে বাংলাবান্ধা জিরো লাইন ঘেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদীর উৎস মুখে ভারতের অসংখ্য ব্যারেজ আর ড্যাম নির্মান করে পানি আটকানো হচ্ছে। সেই পানি ক্যানেলের মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিতে বিল্পব সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব বাঁধ ব্যরেজ পেরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে যে টুকু পানি এসেছে তার উপরও খড়গ বসাতে একটুও দ্বিধা করেনী বন্ধু প্রতিম নামক প্রতিবেশী ভারত। মানেনি কোন আন্তর্জাতিক আইন কানুন নীতি ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো। প্রায় সীমান্তে ঘেষা মহানন্দার উপর ফুলবাড়ি এলাকায় ব্যরেজ দিয়ে পানি আটকে কয়েকটি শাখা নদী হত্যা করেছে। বাংলাদেশকে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলকে শুকিয়ে মারার চক্রান্ত নিয়ে এগিয়ে চলেছে। যার কু-প্রভাবে তেঁতুলিয়ার কয়েকটি নদী তার অস্তিত্বকে হারিয়েছে। সীমান্তের এলাকার লোকজনদের কখনো মাছ কিনে খেতে হতো না সে সময়। মহানন্দা নদীর মাছ এলাকার মাছের চাহিদা পুরণ করে বিক্রিও করতো এলাকার বাইরে জেলা শহরেও ।

এ ব্যাপারে পরিবেশবিদরা বলেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ভারতের একগুয়েমী সিদ্ধান্ত। নদীর উপর ব্যরেজ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে মরুভ’মিতে পরিনত করা। ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রিতিনিতী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অভিন্ন নদীর পানি সরানোর অধিকার রাখেনা। পানি বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। আইনী লড়াই করে যেমন সমুদ্র অধিকার আদায় করেছি। তেমনি নদীর উৎস্য সংশ্লিস্ট দেশগুলোর সাথে আলাপ করে নদীর পানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর এমন দাবি এখন সর্বত্রই।


https://www.dailyinqilab.com/article/123665